আলোর মালায় সেজেছে হিলকার্ট রোড। — বিশ্বরূপ বসাক
আলোয় সেজে ওঠা রাজপথ। নিয়ন আলো মাখা পেশাদার ডিস্ক জকির নাটকীয় ভঙ্গিতে রাত বারোটার কাউন্টডাউন থেকে পুলিশের সামনেই তীর বেগে মোটরবাইক ছুটে যাওয়ার অভিযোগ। সব নিয়েই নতুন বছরে পা দিল শিলিগুড়ি।
নোট বাতিলের দুর্ভোগের মাঝেই নতুন বছরকে উৎসবে মাততে শিলিগুড়িতে আয়োজনের কমতি ছিল না। ছোট-বড় হোটেল থেকে শুরু করে ক্লাব এমনকী বিভিন্ন আবাসনেও বর্ষবরণের পার্টির আয়োজন ছিল। কোথাও ক্যাম্প ফায়ার কোথাও বা সারি দিয়ে তন্দুরির উনুন। আমিষ-নিরামিষ মেনু যাই হোক না কেন সব পার্টিতেই দেদার বাজল ডিজে। বর্ষবরণে পরিবার নিয়ে রাস্তায় বের হয়ে বেপরোয়া বাইকের দৌরাত্ম্যে সিঁটিয়ে থাকলেন পথচারীদের অনেকেই। অভিযোগ বেপরোয়া বাইক আরোহীদের অনেকেই মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন। শহরের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে পুলিশ মোতায়েন থাকলেও অধিকাংশ রাস্তাতেই পুলিশ দর্শকের ভূমিকায় ছিল বলে অভিযোগ। শিলিগুড়ির পুলিশের তরফে অবশ্য দাবি করা হয়েছে আটটা থেকে রাত দশটার মধ্যেই শতাধিক বাইক আরোহীকে থামিয়ে সর্তক করা হয়েছে। পুলিশ কমিশনার চেলিং সিমিক লেপচা বলেন, ‘‘সাদা পোশাকে বাহিনী মোতায়েন ছিল। কড়া নজরদারি চলেছে। আইন মেনে সবক্ষেত্রেই পদক্ষেপ হয়েছে।’’
গত ২৪ ডিসেম্বরের রাত থেকে আলোর সাজ পড়েছে শিলিগুড়ির প্রধান রাস্তাগুলি। গত কয়েক বছর ধরেই রাজ্যের পর্যটন দফতর থেকে শহরের রাস্তাগুলি আলো দিয়ে সাজানো হচ্ছে। তবে এবারের আয়োজন ছিল বেশি। রাস্তার ওপরে তো বটেই দু’পাশের গাছ বাড়িতেও আলোর মালা ঝোলানো হয়েছে। হিলকার্ট রোড জুড়ে আলোর মালা। কিছু জায়গায় মণীষীদের মুখের ছবি লাগানো বোর্ডও। বড়দিনের আগের রাতে রাস্তায় বাঁধা মাইকে ‘জিঙ্গল বেল’ বেজেছে। এ দিন সন্ধ্যের পর তেকে রবীন্দ্রসঙ্গীত শোনা গিয়েছে হিলকার্ট রোডের বাতিস্তম্ভে লাগানো মাইকে। পরিবার নিয়ে হিলকার্ট রোডের একটি রেস্তোরায় খেতে আসা চিরদীপ দত্তের কথায়, ‘‘বর্ষবরণের পার্টির সঙ্গে বাঙালিয়ানাও মিশে গেল শিলিগুড়িতে। হিলকার্ট রোডে এসে বেশ ভালই লাগল।’’ শহরের বাসিন্দা পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, ‘‘বছরের এই সময় সকলেই উৎসবের মেজাজে থাকেন। তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই কলকাতার পার্ক স্ট্রিটের আদলে কিছু রাস্তা আলো দিয়ে সাজানো হয়েছে। পরের বার আরও কিছু এলাকা সাজানো হবে।’’
বাসিন্দাদের যাঁরা পার্টিমুখো হতে চাননি তাঁরা পরিবার নিয়ে হিলকার্ট রোড, সেবক রোডের আলোর সাজ দেখেছেন। রেস্তোরাগুলি সবই বেশি রাত পর্যন্ত খোলা ছিল। আনন্দের সঙ্গে উঠেছে অভিযোগও। বেশিরভাগ এলাকাতেই মদ্যপ অবস্থায় বাইক বা গাড়ি চালানোর অভিযোগ উঠেছে। মহানন্দা সেতু দিয়ে তিন জন নিয়ে তীর বেগে ছুটে আসছে বাইক। চালক মাঝেমধ্যে হ্যান্ডেল থেকে হাত ছেড়ে দিচ্ছেন। পেছনে বসা দু’জন তারস্বরে চিৎকার করছেন। এমন বাইককে দেখে আতঙ্কে সরে দাঁড়ালেন পথচারীরা। রাত সাড়ে ন’টাতেই হিলকার্ট রোডে এমন দৃশ্য দেখা গিয়েছে। বাসিন্দাদের দাবি, পুলিশের তৎপরতা উৎসবের মেজাজে থাকা বাসিন্দাদের এমন আতঙ্ক থেকে রেহাই দিতে পারত।