গরুমারার জঙ্গলে গন্ডার। —ফাইল চিত্র।
উত্তরবঙ্গের গন্ডারের সামনে এক অস্তিত্বের সঙ্কটের আশঙ্কা করছে বন দফতর। এই বিপদ থেকে মুক্তি পেতে আশু পদক্ষেপ প্রয়োজন বলে মনে করছেন দফতরের কর্তারা। তাঁদের বক্তব্য, উত্তরবঙ্গে গন্ডারের সংখ্যা আগের চেয়ে বাড়লেও, কমে গিয়েছে এই প্রজাতির জিনের গুণমান, স্ত্রী-পুরুষের অনুপাত। যা রীতিমতো চিন্তার বলেই মনে করছে বন দফতর। একই কথা বলছেন উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যার শিক্ষকেরাও। এই সমস্যার সমাধানে আপাতত এক জোড়া করে স্ত্রী গন্ডার জলদাপাড়া ও গরুমারার মধ্যে বদলি করা হবে বলে জানান বন-কর্তারা।
কী ভাবে তৈরি হল এই সমস্যা? বন দফতর সূত্রে খবর, জলদাপাড়া এবং গরুমারার মধ্যে যে নিবিড় যোগাযোগ ছিল, তা অনেকগুলি জায়গায় অবৈধ বসতি এবং বনের জমি দখল করে রাস্তাঘাট হওয়ার কারণে নষ্ট হয়েছে বলে অভিযোগ। তাই একটি প্রজননের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর মধ্যে আটকে পড়তে বাধ্য হচ্ছে উত্তরের গন্ডার। এর ফলে, এই অঞ্চলের গন্ডারের জিনের বৈচিত্রকরণ ঘটছে না। ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ক্রমাগত কমছে এই সব গন্ডারের। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রধান ধীরাজ সাহা বলেন, ‘‘এই সমস্যাকে ইনব্রিডিং ডিপ্রেশন বলা হয়। যাতে বন্যপ্রাণীর স্বাভাবিক তেজ নষ্ট হয়ে, দুর্বল হতে থাকে প্রজন্ম। জিন বৈচিত্রকরণ জরুরি।’’
জলদাপাড়া গরুমারা অভয়ারণ্যের মধ্যে মোড়াঘাট, আঙরাভাসা, নাথুয়া এবং দলগাঁও এলাকায় বসতি এবং রাস্তা দুই বনের যোগাযোগ ছিন্ন করেছে বলে বন দফতরর সূত্রের খবর। অসমের কাজিরাঙা থেকে জলপাইগুড়ি পর্যন্ত জঙ্গলপথে আগে গন্ডারের অবাধ যাতায়াত ছিল। এখন তা বন্ধ। জলদাপাড়ায় রয়েছে ৩০০টি গন্ডার। গরুমারায় ৬০টি। একটি সমীক্ষা করে বন দফতর দেখেছে, দু’টি অভয়ারণ্যেই গন্ডারের পুরুষ-স্ত্রীর অনুপাত ১:১-এ। অথচ বন্যপ্রাণ সংরক্ষণের প্রথম তফসিলে থাকা গন্ডারের ক্ষেত্রে ১:৩ অনুপাত জরুরি, জানাচ্ছেন বন আধিকারিকরাই। উত্তরবঙ্গের মুখ্য বনপাল বন্যপ্রাণ রাজেন্দ্র জাখর বলেন, ‘‘আগামী কয়েক মাসে দুই অভয়ারণ্য থেকে স্ত্রী গন্ডারের বদলি প্রক্রিয়া শেষ করার লক্ষ্য রাখছি।’’ বন্যপ্রাণ নিয়ে কর্মরত সংস্থা ‘স্ন্যাপ’-এর কর্ণধার কৌস্তুভ চৌধুরী বলেন, ‘‘প্রক্রিয়াটি দীর্ঘমেয়াদি। তাই যত দ্রুত করা যায়, ততই ভাল।’’