প্রতীকী ছবি।
ভালবেসে বাড়ি থেকে পালিয়ে বিয়ে করার পর ঠাঁই হয়েছিল যৌনপল্লিতে। আবার সেই ভালোবাসার হাত ধরেই নতুন করে জীবনের মুখোমুখি ১৮র তরুণী।
বছর যখন ১৬, সে সময় কয়েকজন পরিচিত মহিলা পরিচয় করে দিয়েছিল বছর চল্লিশের শেখ সিরাজের সঙ্গে। ভালোবাসার ফাঁদ পেতে বাড়ি থেকে ভুলিয়ে নিয়ে তাকে বিয়ে করেছিল সিরাজ। এরপর বর্ধমানের কালনার যে বস্তিতে তাঁকে নিয়ে উঠেছিল, দু’একদিন সেখানে থাকার পরেই স্বপ্নভঙ্গ হয় কিশোরীর। বুঝতে পারে সেটা স্বামীর বাড়ি নয়। বুঝতে পারে তাকে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে যৌনপল্লিতে। এবং সে একা নয়, শেখ সিরাজের ফাঁদে পা দিয়ে একই ভাবে দেহব্যবসায় জড়িয়েছে আরও দু’জন। তাঁদের মাঝেমধ্যেই দেহ ব্যবসার জন্য বাইরে পাঠানো হত বলে দাবি করেছেন ওই তরুণী ।
তিনি আরও বলেন, ‘‘আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করে দেহ ব্যবসায় যুক্ত করা হয়। আমি বাধা দিলে সিরাজ মদ খেয়ে আমার উপর অত্যাচার চালাতো। সহ্য করতে না পেরে আমি বাধ্য হয়ে মেনে নেই সব কিছু। কিন্তু দু’মুঠো ভাত ছাড়া কিছু জুটতো না। যা আয় করতাম তা সবই সিরাজ নিয়ে নিত।’’
বলতে বলতে কথা আটকে যাচ্ছিল তাঁর। ধারা নেমেছিল দু’ চোখে। তিনি বলেন, ‘‘প্রায় দেড় বছর বর্ধমানের কালনাতে থাকার পর দিনহাটার যৌনপল্লিতে নিয়ে আসে সিরাজ। সেখানে ছ’ মাস থাকার পর চ্যাংড়াবান্ধার যৌনপল্লি।"
আর এখানেই আবার আলোর হাতছানি। চ্যাংড়াবান্ধায় থাকাকালীন ভোটবাড়ির এক যুবকের সঙ্গে পরিচয় হয় তাঁর। জীবনের সব দূঃখের কথা ভাগ করেন তাঁর সঙ্গে। তারপরেই প্রেম। রীতিমতো লড়াই করে যৌনপল্লি থেকে ওই তরুণীকে উদ্ধার করেন তিনি। বলেন, ‘‘অনেক বাধা সত্ত্বেও ওকে বাড়িতে নিয়ে আসি। পরিবারের সম্মতিতে বিয়েও করি।’’
কিন্তু শেখ সিয়াজ মেনে নিতে পারেনি তাদের নতুন জীবন। চলতে থাকে হুমকি। বাঁচার জন্য মেখলিগঞ্জ বিডিও অফিসের কর্মচারি কাদের আলির দারস্থ হন তাঁরা। বিডিও বিরুপাক্ষ মিত্রের নজরে আসার পরেই তিনি নিজের দপ্তরে ডেকে পাঠান নবদম্পতিকে। সব কিছু শুনে আশ্বাস দেন পাশে থাকার। বিডিও সাহেব বলেন, ‘‘মেয়েটির জীবনে অনেক ঘাত প্রতিঘাত এসেছে। এর সঙ্গে পাচার ও জোর করে দেহ ব্যবসায় নামানোর মতো জঘন্য অপরাধ জড়িত। যার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেই শেখ সিরাজকে ফোন করা হলে উল্টে হুমকি দেয় সে। আমি পুলিশকে জানিয়েছি। ওঁদের যাতে কোনও সমস্যা না হয়, আমরা সে দিকে নজর রাখছি।’’