শিক্ষক দেবাশিস চক্রবর্তী।
রাস্তার পাশের একটি বাড়ি থেকে শিশুর কান্না প্রতিদিন কানে আসত। শিশুটির মা নেই, বাবা খোঁজ রাখেন না। কাঠমিস্ত্রি ঠাকুরদার কাছে থাকে শিশুটি, ঠাকুরদার রোজগার অল্প। শিশুটিকে যদি রোজ একটু দুধ পৌঁছে দেওয়া যেত... থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত এক কিশোরের গরিব মা কিছু সাহায্য চেয়েছিলেন। ওই কিশোরকেও যদি রোজ দুধ পৌঁছে দেওয়া যেত... ষাট বছর বয়সি এক প্রতিবন্ধী তিন চাকার সাইকেল নিয়ে শহরে ঘুরে বেড়ান। তাঁর চেহারা হাড় জিরজিরে। তাঁকেও যদি এক বেলা একটু দুধ দেওয়া যেত...
ভাবনাগুলো মাথায় ঘুরছিল তাঁর। প্রতিদিন সবাইকে দুধ কিনে দেওয়ার সামর্থ্য নেই। তাই নিজের সঞ্চয় ভেঙে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে একটি গরু কিনেছেন। গরু এখন চার লিটার দুধ দেয়। সেই দুধ তিনি পৌঁছে দেন মা-হারা শিশু, থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত কিশোর, বয়স্ক প্রতিবন্ধীকে। তিনি প্রতিবন্ধী স্কুলের শিক্ষক দেবাশিস চক্রবর্তী। নিজেই স্কুল করে প্রতিবন্ধীদের ডেকে পড়াশোনা করান, প্রশিক্ষণ দেন। চার দিন হল তিনি বাছুর-সহ গরু কিনেছেন। গরুটি রোজ চার কেজি দুধ দেয়। এক কেজি দুধ বিক্রি করেন। বাকি তিন কেজি দুধ দেন অনাথ, রোগাক্রাক্ত, প্রতিবন্ধীদের।
জলপাইগুড়ির রায়কতপাড়া লাগোয়া ভাটাখানার এই স্কুল বা কেন্দ্রে প্রতিবন্ধীরা হাতের কাজ শেখেন, তাঁরাও দুধের ভাগ পাচ্ছেন। দেবাশিস জানিয়েছেন, তাঁর ইচ্ছে, আরও গরু কিনবেন। দেবাশিস বলেন, “ঠাকুরদার কাছে মানুষ হওয়া বাচ্চাটির দুধের দায়িত্ব নিতে পারি কি না, ভাবছিলাম। তার পরেই থ্যালেসিমিয়া আক্রান্ত কিশোরের খবর পাই। আমার কেন্দ্রেও প্রতিবন্ধীরা আসেন। মনে হল, সবাই যদি একটু দুধ পায়। তাই গরু কেনা।’’
দেবাশিসের স্থায়ী রোজগার নেই। প্রতিবন্ধীদের প্রশিক্ষণ দেন। তাঁর কেন্দ্রে মহিলাদের স্বনির্ভর করার জন্য ধূপকাঠি তৈরি হয়, মাসরুম চাষ হয়। সে সব বিক্রি করে সবাই ভাগ করে নেন। তা দিয়েই কোনও মতে সংসার চলে যায় বলে জানালেন দেবাশিস। বললেন, “প্রতিবন্ধী ছেলেমেয়েগুলোও তো আমার সংসার।”
সেই সংসারে নতুন অতিথি খয়েরি সাদা ছোপ রঙের একটি গরু। রোজ সকালে গরুটির দুধ দুইয়ে বিলি করতে ছোটেন দেবাশিস। চার দিন হল এসেছে গরুটি, এখনও নাম রাখা হয়নি।