পাতা তোলার ব্যস্ততা। জলপাইগুড়ির একটি চা বাগানে। ছবি: সন্দীপ পাল।
চা পাতা তোলা বন্ধের সময় এগিয়ে আনা নিয়ে চা পর্ষদের সিদ্ধান্তের ‘পুনর্বিবেচনা’ চাইছেন বড় বাগানের পরিচালক, ছোট চা চাষি এবং শ্রমিক সংগঠনের সবাই। চা শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ভাবে যে সংগঠনগুলি জড়িত তাদের কেউই পর্ষদের সিদ্ধান্ত মানতে পারছে না। তাদের আশঙ্কা, এই সিদ্ধান্ত চা শিল্পের বোঝা আরও বাড়িয়ে দেবে। এ বছর থেকে দেশ জুড়ে ৩০ নভেম্বর পাতা তোলা বন্ধ হয়ে যাবে বলে পর্ষদের নির্দেশ। এতে চায়ের বাজারে চাহিদা এবং জোগানের সমতা ফিরবে বলে দাবি এবং চায়ের দামও বাড়বে বলে আশা। যদিও উত্তরবঙ্গের চা বাগান পরিচালক থেকে শ্রমিক, ছোট চা চাষি— সবাই দাবি করছেন, এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে, চরম ক্ষতি হবে উত্তরের চা বাগানগুলিতে। যদিও পর্ষদ নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড়। তাদের দাবি, উৎপাদনের অঙ্ক কষে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে।
চা শ্রমিক সংগঠনগুলির যৌথ মঞ্চের আহ্বায়ক জিয়াউল আলম বলেন, “দেড়শো বছরের একটি শিল্পকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। একই মাপের জামা কি সকলের গায়ে চাপিয়ে দেওয়া যায়? এক-একটি প্রান্তের বাগানের উৎপাদন এক-এক রকম, উত্তরবঙ্গের অনেক বাগানে জানুয়ারিতেও পাতা আসে। এ সব সিদ্ধান্তের সঙ্গে মাটির যোগ নেই, আমলাতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত শিল্পে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।”
সিদ্ধান্তের বিবেচনা চেয়ে ‘তরাই ইন্ডিয়ান প্ল্যান্টার্স অ্যাসোসিয়েশন’ (টিপা) চিঠি পাঠিয়েছে চা পর্ষদকে। তাতে বলা হয়েছে, এই সিদ্ধান্ত চা শিল্পে ‘বোঝা’ চাপিয়ে দেবে। এত দিন ডিসেম্বরের শেষে, পাতা তোলা বন্ধ হত। এ বার এক মাস আগে সে প্রক্রিয়া বন্ধ হলে, অনেক বাগানের খরচ সামলানোই দায় হয়ে যাবে বলে ‘টিপা’র চেয়ারম্যান মহেন্দ্র বনসলের দাবি।
উত্তরবঙ্গে একাধিক ছোট চা বাগানের সংগঠন রয়েছে। আটটি সংগঠন মিলিত ভাবে পর্ষদকে চিঠি দিয়ে দাবি করেছে, এই সিদ্ধান্তে উত্তরবঙ্গের ছোট বাগানের সঙ্গে যুক্ত প্রায় পনেরো লক্ষ বাসিন্দা সমস্যার মুখে পড়বেন। কারণ, ছোট বাগানে এক মাস আগে পাতা তোলা বন্ধ হলে যে রাজস্ব কমবে, তা পূরণ হবে না। এ বছর ছোট বাগানের পাতার দাম কমেছে, সে ক্ষেত্রে আর্থিক ক্ষতির ‘বোঝার উপরে শাকের আঁটি’ চেপে বসবে বলে আশঙ্কা। ছোট চা চাষিদের সংগঠনের তরফে বিজয়গোপাল চক্রবর্তী বলেন, “উৎপাদিত মোট চায়ের প্রায় ৬৪ শতাংশ ছোট বাগান থেকে আসে। আশা করছি, পর্ষদ আমাদের কথা শুনবে।”
অন্য দিকে, পর্ষদের দাবি, এক বছর আগে থেকে এ নিয়ে সকলের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। পর্ষদের এক বিজ্ঞানীর কথায়, “এটি পরীক্ষামূলক সিদ্ধান্ত। চায়ের অপচয় নষ্ট হবে। দাম বাড়বে। এর প্রভাব বাস্তবায়িত হতে দেখলে, আগামী বছর থেকে সকলেই এটাকে স্বাগত জানাবেন।
নতুন কিছু রূপায়ণের আগে, অনেকেই সংশয়ে ভোগেন।”