সব্জি বাজারে প্রচারে সাংসদ

প্রার্থী বাছাই নিয়ে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ প্রথমে প্রকাশ্যে আসে। প্রচার শুরুর পরে প্রকাশ্যে আসে দল পরিচালনা নিয়ে বিজেপির জেলা নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ-বিক্ষোভও। ভোট প্রচারের একেবারে শেষ বেলায় দলের প্রচারের হাল ধরে কর্মী-সমর্থকদের হতাশা কাটাতে উদ্যোগী হলেন দার্জিলিঙের বিজেপি সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৫ ০২:৩৫
Share:

প্রার্থী বাছাই নিয়ে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ প্রথমে প্রকাশ্যে আসে। প্রচার শুরুর পরে প্রকাশ্যে আসে দল পরিচালনা নিয়ে বিজেপির জেলা নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ-বিক্ষোভও। ভোট প্রচারের একেবারে শেষ বেলায় দলের প্রচারের হাল ধরে কর্মী-সমর্থকদের হতাশা কাটাতে উদ্যোগী হলেন দার্জিলিঙের বিজেপি সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া।

Advertisement

বারবারই ক্ষোভ বিক্ষোভ চলতে থাকায় দলের নেতা-কর্মীদের একাংশ দাবি তুলেছিলেন, সাংসদ এসে দলের প্রচারের হাল ধরুন। যদিও দলের একটি সূত্রের দাবি ছিল, তাঁকে না জানিয়ে বেশ কিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ায় খানিকটা বিরক্ত হয়েই সাংসদ শিলিগুড়ি থেকে দূরে সরে থেকেছেন। অবশেষে কলকাতা ভোট প্রচার মেটার পরে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে সাংসদ শিলিগুড়িতে ফিরেছেন।

দলের নেতা-কর্মীদের থেকে বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত বসে বিভিন্ন ওয়ার্ডের পরিস্থিতির খবর নিয়েছেন, ক্ষোভের কথা শুনেছেন। তারপরে শুক্রবার ভোর থেকে নিজের মতো করে প্রচার শুরু করেছেন সাংসদ। যদিও, প্রচারে নেমে সাংসদকেও দলের মধ্যে গোষ্ঠী টানাপোড়েনের মুখে পড়তে হয়েছে। এ দিন দুপুরে হাসমিচক এলাকায় ‘চায়ে পে চর্চা’ নামে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন ছিল। তাঁকে না জানিয়েই ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন হওয়ায় ‘বিরক্ত’ সাংসদ হাসমি চকে এসেও, অনুষ্ঠানে অংশ নেননি। তিনি ফিরে যাওয়ার পরে, বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক বিশ্বপ্রিয় রায়চৌধুরী এবং জেলা সভাপতি রথীন বসু ওই অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

Advertisement

শুক্রবার সকাল ছ’টার আগেই শিলিগুড়ির সূর্য সেন পার্কে প্রাতর্ভ্রমণ শুরু করেন সাংসদ। ১০, ৪৪, ১১, ১৬ নম্বর সহ লাগোয়া কয়েকটি ওয়ার্ডের প্রার্থীদের তাঁর সঙ্গে প্রাতর্ভ্রমণে থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। সূর্য সেন পার্ক থেকে সেবক রোড হয়ে বিধান মার্কেট যান তিনি। বিধান মার্কেটের একটি দোকানে সদলবলে চা-ও খেয়েছেন তিনি। এরপরে ফের দুপুর বেলায় ১২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে, গৌরীশঙ্কর মার্কেট হয়ে বিধান মার্কেটের সব্জি বাজারে প্রচার চালিয়েছেন সাংসদ। সব্জি বাজারের ভিতরেই মাইক নিয়ে বক্তৃতাও দিয়েছেন তিনি। সাংসদ অহলুওয়ালিয়ার কথায়, ‘‘শুধু একটি বা দু’টি ওয়ার্ড নয়, শহরের যে সব এলাকায় এক সঙ্গে বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের পাওয়া যায়, সেখানে প্রার্থীদের নিয়ে বা একাই প্রচার চালাব। সব এলাকার বাসিন্দাদের আস্থা অর্জন করাটা জরুরি।’’

জেলা বিজেপিতে সাংসদ ঘনিষ্ঠদের দাবি, সচেতন ভাবেই এমন প্রচার কৌশল তৈরি করেছেন সাংসদ। ভোটের আগেই দলের অন্দরের গোষ্ঠী রাজনীতির চেহারাটি প্রকাশ্যে চলে আসায় জনমানসে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। লোকসভা ভোটের নিরিখে শিলিগুড়ির ৪৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২১টিতে বিজেপি এগিয়ে ছিল। সেই মতো পুরভোটে প্রস্তুতির পরিকল্পনাও করেছিলেন সাংসদ। গত বছরের নভেম্বরে প্রস্তুতি সভায় দলের পর্যবেক্ষক সিদ্ধার্থনাথ সিংহকে দিয়ে শহরে জনসভাও করানো হয়। এরপরে প্রার্থী বাছাই নিয়ে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ প্রকাশ্যে আসে। জেলা নেতৃত্বের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে হিলকার্ট রোড থেকে শুরু করে বিভিন্ন ওয়ার্ডে বিক্ষোভ হয়। দলের জেলা সভাপতির বাড়িও ঘেরাও হয়।

জেলা নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানিয়ে ৪২ নম্বরের ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি সহ ২৮ জন ইস্তফা দেন। ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের এক নেতাও অনুগামীদের নিয়ে দল ছেড়ে দেন। শহরের ৩ নম্বর মণ্ডল কমিটির সাধারণ সম্পাদক বৃজকিশোর সিংহ প্রার্থী বাছাই নিয়ে সরাসরি লেনদেনের অভিযোগ তুলেছিলেন জেলা নেতৃত্বের বিরুদ্ধে। গত সপ্তাহে ৪১ নম্বরের বিজেপির ওয়ার্ড কমিটির ২০ জন নেতা সদস্য জেলা নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানিয়ে দল ছেড়ে দেন। একের পর এক ঘটনা চলতে থাকায় জনমানসে বিজেপির প্রতি ‘আস্থা’ অনেকটাই কমে আসে বলে দলের অন্দরেই অভিযোগ ওঠে।

সে কথা মাথায় রেখেই শহরের বিভিন্ন এলাকায় বেশি করে জনসংযোগের কর্মসূচি সাংসদ রেখেছেন। এ দিন বিধান মার্কেটের সব্জি বাজারে গিয়ে বিক্রেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। ঢেঁড়শ, লঙ্কা, লাউয়ের দরদাম করেছেন। দাম নিয়ে ক্রেতাদের সঙ্গেও আলোচনা করেছেন। সব্জি বাজারে অন্তত ঘণ্টা খানেক ঘুরেছেন সাংসদ। সব্জি বিক্রেতা বিজন দামের কথায়, ‘‘আমাদের সব্জি বাজারে ভোট প্রচারে সাংসদ এসেছেন, এমন প্রথম দেখলাম।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement