(বাঁ দিকে) পথ অবরোধ জলপাইগুড়ি়েত। (ডান দিকে) অবরোধে থমকে গিয়েছে বাস। নিজস্ব চিত্র।
সিপিএমের কৃষক সংগঠন সারা ভারত কৃষক সভার পথ অবরোধের জেরে দুর্ভোগে পড়লেন যাত্রীরা। এই কর্মসূচির জেরে মঙ্গলবার উত্তরবঙ্গের জাতীয় সড়কগুলিতে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। ভোগান্তিতে পড়তে হয় নিত্যযাত্রীদের। বিভিন্ন এলাকায় ট্রাক, বাস ও গাড়ির লম্বা লাইনও পড়ে যায়। অনেক জায়গায় যানজট ঠিক হতে দীর্ঘক্ষণ লেগে যায়। প্রতি জায়গাতেই পুলিশকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। সরকারি উদ্যোগে ক্যুইন্টাল প্রতি ১৫০০ টাকা দামে ধান কেনা, জমি অধিগ্রহণ বিল বাতিল, চাষের সামগ্রীর দাম কমানো ও অসংগঠিত ক্ষেত্রে শ্রমিকদের মজুরি মাসে ১৫০০ টাকা করার দাবিতে এদিন আন্দোলনে নেমেছিল কৃষক সভা।
শিলিগুড়িতে মাটিগাড়ার খাপরাইল মোড় এলাকায় অল্প সময়ের জন্য ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করা হয়। তবে এদিন সাপ্তাহিক মাটিগাড়া হাট থাকায় মিনিট পাঁচেক পরেই অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। তবুও জাতীয় সড়কে কিছুক্ষণের জন্য যানজট হয়। এলাকায় মিছিল করেন কৃষক সভার সদস্যরা।
জলপাইগুড়িতেও অবরোধে নাকাল হতে হয় বাসিন্দাদের। সকাল নটা থেকে শুরু হওয়া টানা আড়াই ঘন্টার অবরোধের জেরে স্কুলকলেজ, অফিস, হাসপাতালে যাওয়ার মুখে বিপাকে পড়েন বাসিন্দারা। এদিন জলপাইগুড়ি শহরে ঢোকার রাস্তায় নয়টি জায়গায় অবরোধ করা হয়। বাসিন্দাদের অভিযোগ, জলপাইগুড়ি শহরে ঢোকা এবং বার হওয়ার সমস্ত রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। যানবাহন চলাচল তো দূরের কথা কাউকে অবরুদ্ধ রাস্তার পাশ দিয়ে হেঁটেও যেতে দেওয়া হয়নি। জমিদারপাড়া, অসম মোড়, ৭৩ মোড়, বালাপাড়া মোড়, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ মোড়, পান্ডাপাড়া, কোরানিপাড়া এবং পিলখানায় ভোগান্তির শিকার হন বাসিন্দারা। বেলা পৌনে এগারোটার সময় পুলিশের হস্তক্ষেপে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি ৩১ডি জাতীয় সড়ক অবশ্য খোলা ছিল।
প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা মৌমিতা সরকার জলপাইগুড়ির রেসকোর্সপাড়ার বাসিন্দা। তিনি ময়নাগুড়ি রোডের একটি প্রাথমিক স্কুলে পড়ান তিনি। সকাল সাড়ে দশটার সময় জমিদারপাড়া থেকে কিছুটা দূরে টোটোয় করে আসেন। তারপর হাঁটা পথে রওনা হন পাহাড়পুর মোড়ের দিকে। তাঁর অভিযোগ, রাস্তায় বসে থাকা অবরোধকারীদের মধ্যে দিয়ে হেঁটে যেতে গেলে তাকে আটকে দেওয়া হয়। সমর্থকদের সঙ্গে তাঁর কথা কাটাকাটি হয়। তিনি ফিরে আসতে বাধ্য হলে পুলিশ হস্তক্ষেপ করে। শেষে অবরোধ টপকে হেঁটে পাহাড়পুর মোড়ের দিকে রওনা হন। মৌমিতা বলেন, “এভাবে মানুষের হয়রানি করার কী মানে আছে।”
সকালে মন্ডলঘাট থেকে পরিবার নিয়ে জলপাইগুড়িতে পৌঁছে গিয়েছিলেন অজয় রায়। জলপাইগুড়িতে কেনাকাটা সেরে ক্রান্তি এলাকায় আত্মীয়র বাড়িতে অনুষ্ঠানে যাওয়ার কথা ছিল। অভিযোগ, বাসে চড়ার তো প্রশ্নই নেই হেঁটেও পার হতে পারেননি অবরোধস্থল। তিনি বলেন, “জাতীয় সড়ক খোলা অথচ হেঁটে গিয়ে বাস ধরা যাবে না। বিশ্বে কোথাও মনে হয়, এভাবে আন্দোলন হয় না।” একই অভিজ্ঞতার কথা জানান ময়নাগুড়ি থেকে জলপাইগুড়ি হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে আসা নমিতা দাস, মহাবুল হক মত বাসিন্দারা।
জলপাইগুড়ি থেকে ময়নাগুড়িতে যাওয়ার রাস্তায় অবরোধে সামিল হন সিপিএমের জেলা সম্পাদক সলিল আচার্য, প্রাক্তন সম্পাদক মানিক সান্যাল, জীতেন দাস প্রমুখ। কৃষক সভার জেলা সম্পাদক জীতেনবাবু বলেন, “ পথ অবরোধ শান্তিপূর্ণভাবেই হয়েছে।”
কৃষক সভার অবরোধে যানজটে ভোগান্তি। মঙ্গলবার কোচবিহারে তোলা নিজস্ব চিত্র।
এদিন বেলা সাড়ে ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত কৃষকসভার কয়েকশো সমর্থক রায়গঞ্জের সোহারই মোড় এলাকার ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান। অবরোধের আগে সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত জাতীয় সড়কের ধারে চলে বিক্ষোভ। রায়গঞ্জের মিলনপাড়ার বাসিন্দা সুকান্ত সিংহ ইসলামপুরে যাচ্ছিলেন। তাঁর ভাই অসুস্থ হয়ে ইসলামপুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনি বলেন, ‘‘অবরোধের জেরে সমস্যায় পড়তে হয়েছে। জাতীয় সড়ক আটকে এভাবে আন্দোলন করা ঠিক নয়।’’
কৃষক সভার রায়গঞ্জ জোনাল সম্পাদক সুভাষ দাসের দাবি, ‘‘সাধারণ মানুষের স্বার্থে আমরা আন্দোলন করেছি। এটা সবাইকে বুঝতে হবে।’’ তবে জাতীয় সড়ক অবরোধ করার অভিযোগে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে কী না, সেই বিষয়ে পুলিশ স্পষ্ট করে কিছু জানাতে চায়নি। রায়গঞ্জ থানার আইসি গৌতম চক্রবর্তী জানান, পুলিশের হস্তক্ষেপে অবরোধ তোলার পাশাপাশি জাতীয় সড়ক যানজট মুক্তও করা হয়েছে। কেউ বেআইনি কাজ করলে তো আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা হবেই। এদিন ইসলামপুরের বাসস্ট্যান্ড এলাকাতে মিনিট পাঁচেক অবরোধ হয়। চোপড়ার সোনাপুরে সকাল সাড়ে ১০টায় ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক আধঘন্টা ধরে অবরোধ করা হয়। করণদিঘি এলাকাতেও ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে অবরোধ বিক্ষোভ হয়েছে।