প্রতীকী ছবি।
স্থানীয় তৃণমূল নেতা বিকাশ মজুমদারের খুনের প্রতিবাদে শনিবার ইটাহারে বন্ধ পালন করল যুব তৃণমূল। যদিও জেলা নেতৃত্ব বন্ধের পক্ষে নন। তাঁদের দাবি, বন্ধ থেকে বিরত করা হয়েছে দলকে। তবে শোকাহত ব্যবসায়ীরা দোকানপাট না খুলে থাকলে কিছু করার নেই। যুব তৃণমূল সূত্রে অবশ্য দাবি, তাঁদের ডাকে ১২ ঘণ্টার বন্ধই হয়েছে ইটাহারে।
শুক্রবার গভীর রাতে বিকাশের মৃত্যু হয়। শনিবার সকাল থেকেই পথে নামে যুব তৃণমূল। এর আগে ইটাহারে গোলমালের সময়ে এক বার বন্ধের ডাক দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু জেলা সভাপতি অমল আচার্যের হস্তক্ষেপে সে যাত্রা আর বন্ধ হয়নি।
এ দিন কিন্তু সকাল ৬টা থেকে যুব কর্মীরা মাইক নিয়ে বন্ধের প্রচার শুরু করেন। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ইটাহার চৌরাস্তা, চাভোট, স্কুলপাড়া, হাসপাতালপাড়া, ইটাহার-চূড়ামণ রোড, ইটাহার-কালিয়াগঞ্জ রোড-সহ ইটাহার সদরের বিভিন্ন এলাকার সমস্ত দোকানপাট বন্ধ ছিল। দিনভর এলাকার পরিবেশ ছিল থমথমে।
দুপুরে রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পরে বিকাশবাবুর দেহ ইটাহার সদরে পৌঁছতেই উত্তেজনা ছড়ায়। তৃণমূলের কয়েকশো নেতা-কর্মী দেহ নিয়ে চৌরাস্তা এলাকার ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন। এক ঘণ্টা অবরোধ চলার পরে পুলিশ আশ্বাস দেয়, তিন দিনের মধ্যে খুনের ঘটনায় জড়িত দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করা হবে। তার পরে অবরোধ ওঠে।
অমলবাবুর দাবি, ‘‘বিকাশবাবু দলের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। তা ছাড়াও সমাজকর্মী হিসেবে মানুষের জন্য কাজ করতেন। ইটাহারে তাঁর জনপ্রিয়তা রয়েছে। সাধারণ মানুষই তাই দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারের দাবিতে বন্ধ ডেকেছিল। বন্্ধের সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই।’’
এ দিন ময়নাতদন্তর সময় রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন বিকাশের যমজ দাদা প্রকাশবাবু, জামাইবাবু শুভাশিস দাস, এলাকার পরিচিত অনেকেই। হাসপাতালে গিয়ে পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন রায়গঞ্জ পুরসভার চেয়ারম্যান সন্দীপ বিশ্বাস।
বিকাশবাবুকে খুনের ঘটনা নিয়ে এলাকায় শাসক এবং বিরোধী বিজেপির মধ্যে যেমন দোষারোপের পালা চলছে, তেমনই দলের মধ্যে চাপানউতোর শুরু হয়েছে। কে বা কারা খুন করেছে, তা উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের দাবি তুলেছেন বিকাশবাবুর ঘনিষ্ঠরা। অমলবাবু এবং তাঁর ঘনিষ্ঠরা বিজেপির দিকে আঙুল তুলেছেন। বিজেপির জেলা সভাপতি শঙ্কর চক্রবর্তীর পাল্টা দাবি, তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে এই ঘটনা।
এ দিন সকাল থেকেই পড়শিরা বিকাশবাবুর বাড়িতে যান পরিবারকে সমবেদনা জানাতে। দুপুরে বিকাশবাবুর মৃতদেহ বাড়িতে পৌঁছতেই খামরুয়া-সহ ইটাহারের বিভিন্ন এলাকার কয়েক হাজার বাসিন্দা ওই বাড়িতে ভিড় জমান। বিকাশবাবুর প্রতিবেশী রঞ্জন সরকার ও শঙ্করী পাড়ুইয়ের দাবি, ‘‘বিকাশবাবু বাসিন্দাদের আপদে-বিপদে ভরসা ছিলেন। কারও সঙ্গে তাঁর কোনও শত্রুতা ছিল বলে আমাদের জানা নেই। তিনি খুন হয়ে যাবেন, তা ভাবতে পারছি না। পুলিশ দ্রুত দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করুক।’’
গ্রাম পঞ্চায়েত বোর্ড গঠনকে কেন্দ্র করে গত ২৮ অগস্ট বোমাবাজি, গুলি চলেছে এলাকায়। তার পর এই ঘটনায় এলাকায় আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে।