Korola

‘সাহেবের’ নেতৃত্বে সবুজ চারাগাছের সাজ করলার বাঁধে 

বন্দুকধারী পুলিশকর্মী হাত দেখালেন সামনে। বাঁধের সে দিক ঢালু হয়ে নেমে গিয়েছে জলপাইগুড়ি শহরকে ভাগ করে বইতে থাকা করলা নদীতে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০২৫ ০৯:৩২
Share:
গাছের পরিচর্যায় জলপাইগুড়ির ডিআইজি সন্তোষ নিম্বলকর।

গাছের পরিচর্যায় জলপাইগুড়ির ডিআইজি সন্তোষ নিম্বলকর। ছবি: সন্দীপ পাল।

করলা নদীর বাঁধের উপরে কংক্রিটের রাস্তা। বাসিন্দাদের নিত্য যাতায়াত। দিনকয়েক হল বাঁধের রাস্তায় বসেছে পুলিশের পাহারা। চৈত্রের সকাল, দুপুর, বিকেলে স্বয়ংক্রিয় বন্দুক হাতে পুলিশকর্মীর টহলদারি। পাশেই ডিআইজি-র (জলপাইগুড়ি রেঞ্জ) বাংলো।

Advertisement

বাঁধে কিসের পাহারা?

বন্দুকধারী পুলিশকর্মী হাত দেখালেন সামনে। বাঁধের সে দিক ঢালু হয়ে নেমে গিয়েছে জলপাইগুড়ি শহরকে ভাগ করে বইতে থাকা করলা নদীতে। বাঁধের ঢাল, নদীর পাড় জুড়ে বাঁশের ঘেরাটোপে সারি-সারি চারাগাছ। পুলিশকর্মী বললেন, “যদি চারাগাছ গরু-ছাগলে খায়, কেউ তুলে নিয়ে যায়!”

Advertisement

চারাগাছের পাহারায় পুলিশ? জবাব এল, “সাহেবের নির্দেশ।”

আপাতত পুলিশ কনস্টেবল থেকে এএসআই, সিভিক কর্মী লেগেছেন ওই সব চারাগাছের যত্নে। বাংলো সংলগ্ন করলা নদীর বাঁধে সকালে গেলেই দেখা যাবে, কোনও পুলিশকর্মী চারাগাছে জল দিচ্ছেন, কোনও সিভিক চারাগাছের বেড়ার বাঁশ ঠিক করছেন। দেখা গেল, কয়েক জন পুলিশকর্মী হলদে লম্বা বাঁশ কাঁধে নিয়ে চলেছেন। জানা গেল, সেটি কেটে চারাগাছের বেড়া তৈরি হবে।

বাঁধে রয়েছে পলাশ, জারুল, অশোক গাছ। সকাল হলে সেগুলির নীচে আগাছা পরিষ্কার করছেন পুলিশকর্মীরা। লতানো চারার মাথা বেঁধে দিচ্ছেন সিভিকেরা। ভোরবেলায় ‘সাহেব’ হাঁটতে বেরোন সেই রাস্তায়। কোনও গাছের অযত্ন হলে, তাঁর চোখে পড়বেই।

‘সাহেব’ হলেন রাজ্য পুলিশের ডিআইজি (জলপাইগুড়ি রেঞ্জ) সন্তোষ নিম্বলকর। তিনি বাঁধ, রাস্তায়, নিজের অফিস মিলিয়ে অন্তত শ’পাঁচেক চারাগাছ লাগিয়েছেন। আশপাশে বিতরণ করেছেন আরও শ’পাঁচেক। চারাগাছের দেখভাল নিয়ে জারি করেছেন ‘কড়া’ নির্দেশও।

জলপাইগুড়ির ক্লাব রোডে প্রসন্নদেব মহিলা কলেজ পেরিয়ে ডিআইজি বাংলো এবং তার পরে পুলিশ সুপারের বাংলো। পুরো রাস্তার পাশ জুড়েও গাছের চারা লাগিয়েছেন তিনি। ঘিরেছেন লোহার বেড়া দিয়ে। আম, কাঁঠাল, লিচু, জাম, ডুমুর। সঙ্গে মেহগনি, পলাশও। জলদাপাড়া, গরুমারার বন বিভাগের আধিকারিকদের থেকে কখনও চেয়ে, কখনও ‘নার্সারি’ থেকে গাছ কিনে আনেন ওই পুলিশকর্তা।

মহারাষ্ট্রের আদি বাসিন্দা সন্তোষ আদতে চিকিৎসক। গাছের নেশা কবে থেকে? তিনি বলেন, “এক সময়ে মাওবাদী উপদ্রুত পুরুলিয়ায় ছিলাম। সরকারি ৪৮০ একর জমি ফাঁকা ছিল। সে জমি ঘিরতে ঘিরতে পনেরো হাজার গাছ লাগিয়ে ফেললাম। সেই থেকে নেশা।”

বাংলোর আশেপাশের কলোনির ছেলেমেয়েদের দিয়েও গাছের চারা লাগিয়েছেন তিনি। সন্তোষ বলেন, “ওরাই গাছগুলোকে ভবিষ্যতে বাঁচিয়ে রাখবে।”

বাঁধের রাস্তায় প্রাতর্ভ্রমণকারীরা প্রায়ই দেখেন ডিআইজির নিজের হাতে গাছের পরিচর্যা করছেন। অনেকে তাঁকে চিনতে পারেন না। সন্তোষ বলেন, “প্রকৃতিকে রক্ষা করতে হবে। গাছের পরিচর্যা দেখভাল যাঁরাই করবেন, তাঁদের মনও ভাল থাকবে। এটা সবাই বুঝুন।”

গাছগাছালি ভরা বাঁধে হাজার হাজার পাখিও আসে। ডিআইজির সাম্প্রতিক নির্দেশ, পাখিদের ছবি এবং নাম ছাপিয়ে ‘ফ্লেক্স’ লাগাতে হবে নদীর দু’পারের বাঁধে। পুলিশ মহলের কানাঘুষো, পাখিদের যাতে কেউ বিরক্ত না করে, তেমন নজরদারির ‘নির্দেশ’ এল বলে। তেমন কিছু কি আসছে? মুচকি হাসেন সন্তোষ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement