নিজস্ব চিত্র।
পাহাড়ের ভিতরে ডিনামাইট ফাটিয়ে তৈরি হচ্ছে সুড়ঙ্গ। সেই পথ দিয়ে সেবক থেকে সিকিমের রংপো যাবে ট্রেন। এর ফলে এক দিকে যেমন সিকিম প্রথমবার দেশের রেলপথের সঙ্গে জুড়তে চলেছে। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে দশটায় ঘটে গেল বিপত্তি। ডিনামাইট ফাটানোর পরে বৃষ্টিতে নরম হয়ে থাকা কাদা-মাটি এবং পাথর নেমে এল হুড়মুড় করে। তাতেই জখম হন সাত শ্রমিক। তার মধ্যে দু’জন মারা যান। তার পরে রেলের অন্দরেই প্রশ্ন উঠেছে, এই এলাকায় নির্মাণ কাজ করতে গেলে যে নিরাপত্তা এবং সতর্কতা বিধি মানতে হয়, সব মানা হচ্ছে তো?
সেবক-রংপো রেল প্রকল্পে নির্মাণ সংস্থার প্রকল্প আধিকারিক মহিন্দর সিংহের দাবি, ‘‘নিরাপত্তা বজায় রেখেই কাজ হচ্ছিল। তবে বিস্ফোরণ ঘটানোর আগে হঠাৎই মাটি ধসে আসে। আমরা দীর্ঘদিন থেকেই কাজটি করছি। এটা নিতান্তই দুর্ঘটনা।’’ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাহাড়, জঙ্গল, নদীকে ঘরে বিরাট বিরাট এই ধরনের প্রকল্পের জন্য প্রয়োজন আরও সতর্কতার। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক পার্থপ্রতিম বিশ্বাস বলছেন, ‘‘সুড়ঙ্গে বর্ষার সময় পাথুরে মাটির চরিত্র বিশ্লেষণ করে সেই উপযোগী তীব্রতার বিস্ফোরণ ঘটানো প্রয়োজন।’’ তিনি জানান, সুরক্ষা ব্যবস্থা অনুসারে বিস্ফোরণের সময় সেই এলাকার মধ্যে কারওই থাকার কথা নয়। তাঁর মতে, এটাকে বুনিয়াদি স্তরের গাফিলতি বলেই ধরা উচিত।
রেল সূত্রের খবর, ওই সুড়ঙ্গে একেবার মাথার দিকে ৩ বর্গমিটার এলাকায় বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এগিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে রাতে কাজ হচ্ছিল। শ্রমিকেরা বড় ড্রিলিং মেশিন দিয়ে বিস্ফোরণের পর মাটি পাথর সরাচ্ছিলেন। কিন্তু বিস্ফোরণের সময় সেখানে কারও থাকার কথা নয়। শ্রমিকেরা সেখানে ছিলেন কি না, তার তদন্ত শুরু হয়েছে। সেফটি অফিসারের কী নির্দেশ ছিল, বিস্ফোরণের পরে এলাকায় কাজ হচ্ছিল কিনা, এই সবও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বর্ষার রাতে বিস্ফোরণ ঘটানো কতটা যুক্তিসঙ্গত, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
রেলের অনেক আধিকারিকের মতে, গত কয়েক বছর ধরেই বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সুড়ঙ্গ তৈরি হচ্ছে। এতে অফিসার, কর্মীরাও অভ্যস্ত। কিন্তু এ বারে বর্ষার পাহাড়ের চরিত্রগত বদল কতটা মাথায় রাখা হয়েছিল, অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে সেটাও দেখার।