— প্রতীকী চিত্র।
দেশের প্রথম একশোটি শহরের মধ্যে নাম এলেও খেলাধুলোর পরিকাঠামোয় আজও পিছিয়ে শিলিগুড়ি। এ অভিযোগ দীর্ঘদিনের, ক্রীড়াপ্রেমী আট থেকে আশির। দু’টি স্টেডিয়াম আছে বটে। তবে সেগুলো বছরের পরে বছর সংস্কারের অভাবে জীর্ণ দশায়। গত কয়েক বছর ধরে প্রায়ই উঠছে নতুন আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়ামের দাবি। রাজ্যের শাসক থেকে কেন্দ্রের শাসক, দু’পক্ষের মুখেই শেষ লোকসভার আগে নতুন স্টেডিয়ামের দাবি শোনা গিয়েছে। তবে কাজ এগোয়নি।
তাই ক্রীড়া মহল থেকে শহরের বাসিন্দাদের চাইছেন, খেলার স্বার্থে এগিয়ে আসুক দুই সরকারই। বৃহত্তর শিলিগুড়ির আগামী দিনের পরিকল্পনার কথা মাথায় রেখে নৌকাঘাটের কাওয়াখালি, উত্তরায়ণ উপনগরী বা ফুলবাড়ির দিকে তৈরি হোক শিলিগুড়ির নতুন স্টেডিয়াম। শহরের তৃণমূলের সরকার, পুরবোর্ড থেকে বিজেপির বিধায়ক, সাংসদের ভূমিকা এ ব্যাপারে আরও সক্রিয় হোক— এমনই দাবি উঠতে শুরু করেছে।শহরের মেয়র গৌতম দেব ইতিমধ্যে দু’টি স্টেডিয়ামের সংস্কারের কাজ শুরু করিয়েছেন। তবে নতুন স্টেডিয়াম নিয়ে কোনও কাজ এগোয়নি। লোকসভা ভোটের আগে শিলিগুড়ি এসে এ নিয়ে আশ্বাস দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় ক্রীড়া এবং যুবকল্যাণ মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর। শিলিগুড়ির বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়ামের দাবি তুলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর দৃষ্টিও আকর্ষণ করেন। বিধায়ক বলেন, ‘‘বিধানসভায় লিখিত প্রস্তাব জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি। রাজ্য জমি দিলে, কেন্দ্র স্টেডিয়াম তৈরির ক্ষেত্রে ভাবতে পারে।’’
সরকারি সূত্রের খবর, একটি আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়ামের জন্য শতাধিক কোটি টাকার প্রয়োজন। যা কেন্দ্র-রাজ্য এবং ক্রিকেটের ক্ষেত্রে বিসিসিআই সাহায্য করতে পারে। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ক্রিকেট প্রশাসনে আসার পরে শহরবাসী অনেক আশা দেখেছিলেন। যদিও তার কিছু হয়নি।
এই পরিস্থিতিতে কখনও ফুটবল, কখনও ক্রিকেট খেলা চলছে। মাঝেমধ্যেই সরছে খেলা। মাঠের সবুজ ঘাস ঢেকে যাচ্ছে প্রশাসনিক সভা, গানের জলসার মঞ্চে। মাঠের বাইরের স্টেডিয়ামের পরিকাঠামো সঙ্গীন হলেও স্থানীয় স্তরে খেলা চলছে শিলিগুড়ির কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে। ক্রিকেট চলছে জঙ্গলে ঘেরা চাঁদমণির মাঠে। স্টেডিয়ামে অ্যাথেলেটিক্স প্রায় হয় না বললেই চলে।
অন্য দিকে, শহরের মধ্যিখানে একমাত্র ইনডোর স্টেডিয়ামের হালও তথৈবচ। পরিকাঠামো ভেঙে পড়ছে। তাই কোনও অনুষ্ঠান থেকে অস্থায়ী কোভিড কোয়ারান্টাইন সেন্টার বা পুরসভার বরো অফিস চলেছে সেখানে। টেবিল টেনিস থেকে ব্যাডমিন্টনের বড় আসর কবে বসেছিল, তা মনেই করতে পারছেন না অনেকেই। অথচ, এই স্টেডিয়ামেই খেলে গিয়েছেন সানিয়া মির্জা থেকে মহেশ ভূপতিরা।
আবার কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে কপিলদেব থেকে সচিন তেন্ডুলকর থেকে রাহুল দ্রাবিড়— কে আসেননি! খেলে গিয়েছেন এক সময় বিভিন্ন বিদেশি ফুটবলেরা। এই শহর থেকেই দেশের ক্রিকেট দলে নাম লিখিয়েছেন ঋদ্ধিমান সাহা বা রিচা ঘোষেরা। আবার টেবিল টেনিসে এই শহরে খেলেই জাতীয় স্তরে নাম করেছেন শুভজিৎ সাহা, সৌম্যদীপ ঘোষ, কস্তুরী চক্রবর্তী বা মান্তু ঘোষেরা। শিলিগুড়ি মহকুমা ক্রীড়া পরিষদের সচিব কুন্তল গোস্বামী বলেছেন, ‘‘স্টেডিয়াম শহরের দাবি। সেই সঙ্গে যথাযথ খেলার মাঠের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।’’
গত বছর ইডেন গার্ডেন্সে খেলা চলার সময় ‘শিলিগুড়িতে চাই ক্রিকেট স্টেডিয়াম’ বলে গ্যালারিতে প্ল্যাকার্ড দেখা গিয়েছিল। ক্রীড়া পরিষদের ক্রিকেট সচিব মনোজ বর্মা বলেন, ‘‘শিলিগুড়ির নতুন স্টেডিয়াম হলে বড় খেলার আসর আবার বসতে পারে। তাতে ছেলেমেয়েদের খেলার প্রতি উৎসাহ বাড়বে।’’
শহরে এক সময় স্টেডিয়ামের দাবিতে সই সংগ্রহ অবধি হয়েছে। স্কুল স্তরে খেলাধূলার নিয়ে কাজ করা জেলা বিদ্যালয় ক্রীড়া পর্যদের সভাপতি মদন ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘‘নতুন স্টেডিয়ামের জন্য সবাইকে এক যোগে এগোতে হবে।’’