পটবদল: বহু দিন পরে এমন ভোট দেখল পাহাড়। যে ভোটে মিরিকে মোর্চার দলীয় দফতরে ফাঁকা চেয়ার পড়ে থাকে। দফতরে বাতি জ্বালানোর জন্য একা কুম্ভ হয়ে বসে থাকেন কেউ। মোর্চার দাবি, তৃণমূল সকলকে ‘হাত করেছে’। কিন্তু দু’টি দল একে অপরের ঘাড়ের উপরে নিঃশ্বাস ফেলছে, এমন ভোটচিত্র ঘিসিঙ্গের উত্থানের পর থেকে পাহাড়ে আর দেখা যায়নি। এ বার সেই ছবিই দেখা গেল। মিরিকে রবিবার বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।
মিরিক লেকের কাছেই মোড়ের মাথায় প্লাস্টিকের অনেক টেবিল চেয়ার পাতা। সবই ফাঁকা। সেখানে উড়ছে বিমল গুরুঙ্গের ছবি আঁকা পতাকা। আধ ঘণ্টা অপেক্ষার পরে এক জন এসে নিজেকে মোর্চার কর্মী বলে পরিচয় দিলেন। সরোজ ভূজেল নামে ওই কর্মীর অভিযোগ, ‘‘নানা কায়দায় তৃণমূল সবাইকে হাত করে ফেলেছে।’’
কিছুটা এগোলেই পলিথিন টাঙানো একটি অফিস। প্রবীণ নেতাকে ঘিরে শ’খানেক তৃণমূল কর্মী-সমর্থক। ঠোঁটের কোনায় লেগে রয়েছে কাঁচা সুপারি-পানের লাল রং এবং স্বভাবসিদ্ধ মুচকি হাসি। ভোট দিয়ে ফেরা বাসিন্দাদের সঙ্গে জনে জনে কথা বলছেন। হাতে মোবাইল ধরাই রয়েছে। কখনও প্রবীণ কর্মীদের অন্য ভোটকেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন, কখনও বা সব ওয়ার্ডের কর্মীদের কাছে টিফিনের প্যাকেট পৌঁছেছে কি না, খোঁজ নিচ্ছেন।
লেকের শহর মিরিকের সাত নম্বর ওয়ার্ডের এই ছবি পাহাড়ি জনপদের ৯টি ওয়ার্ডেই এ দিন যেন ‘ভাইরাল’ হয়ে গিয়েছিল। অনেকেই বলছেন, চুপচাপ ভোটে ছাপ দিয়েছে পাহাড়। চুপচাপ এই ছাপ দেওয়া থেকে পরিবর্তনের ইঙ্গিত মিলছে বলেও অনেকের মত।
পুরসভা ভোটের হার
• মিরিক ৭৭.৯%
• দার্জিলিং ৫৯.৯%
• কার্শিয়াং ৭১.৮%
• কালিম্পং ৬৫.১৬%
• রায়গঞ্জ ৮০.০০%
রবিবার ছুটির দিন হওয়ায় লেকের চারপাশে সকাল থেকেই ভিড়। পর্যটক বোঝাই মিরিকে এ দিন দাপটের সঙ্গে ভোট করাল তৃণমূল। তৃণমূলীদের সেই দাপট দেখেই অভয় পেয়েছেন বাসিন্দাদের অনেকেই। যেমন মিরিক বাজারের চায়ের দোকানদার তপন গুরুঙ্গ বাড়ির সামনে দাঁড়িয়েই চেঁচিয়ে বললেন, ‘‘এই দেখুন বাজারের রাস্তা। কত বছর ধরে ভেঙে চৌচির। এ বারের ভোটে মিরিকে পরিবর্তন হবেই।’’ জুতো ব্যবসায়ী বিনোদ সুব্বার দাবি, ‘‘পুরসভায় এতদিন যাঁরা ছিল তারা কোনও কাজ করেনি। সেই দায় মোর্চাকেই নিতে হবে।’’ প্রশাসনের হিসেবে দুপুর সাড়ে তিনটেয় পাহাড়ের অন্য পুরসভাগুলিতে ভোটদানের হার যেখানে ষাটের ঘরে সেখানে মিরিকের ভোটের হার প্রশাসনের হিসেবেই ৭১ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছিল। মাসখানেক ধরে ক্যাম্প করে মিরিকে পড়ে থাকা তৃণমূলের পর্যবেক্ষক বিধায়ক সৌরভ চক্রবর্তী এ দিন বিধিনিষেধের কারণে পুর এলাকায় ছিলেন না। তবে পাহাড়ের একটি গ্রামে বসে নাগাড়ে খবর নিয়েছেন। সৌরভবাবুর কথায়, ‘‘সমস্ত ভয়ডর উপেক্ষা করে মিরিকের মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিয়েছেন। ভোটের হারই বলছে মিরিকের সুদিন আসছে।’’
লেকের ধারে সেলফি তুলতে ব্যস্ত ছিলেন দিল্লির পর্যটক দম্পতি সন্তোষ নায়ার এবং সুশাদেবী। বললেন, ‘‘এত শান্তিতে ভোট ভাবাই যায় না।’’ লেকের কিনারায় বসে মুচকি হাসলেন ঝালমুড়ি বিক্রেতা ষাটোর্ধ্ব আশা রাই। তিনি বললেন, ‘‘এত দিন কোনও ভোটে হাড্ডাহাড্ডি দেখিনি। এবার কিন্তু, জোর লড়াই দেখলাম।’’