কোথাও বাঁশের ব্যারিকেড তৈরি করা হয়েছে। কোথাও তৈরি করা হয়েছে চেকপোস্ট। একদিন আগে থেকেই জেলার প্রায় সমস্ত পুলিশ হাজির করানো হয়েছে দিনহাটায়। সিভিক ভলান্টিয়ার্সের একটি বড় দলকে তিন দিনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ঘন ঘন সাইরেন বাজিয়ে এলাকায় টহলদারি চালাচ্ছে পুলিশ কর্তারা। পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠনের একদিন আগে এমন ভাবেই দিনহাটায় নিরাপত্তা নিয়ে কড়াকড়ি পদক্ষেপ নিয়েছে পুলিশ। কোচবিহারের পুলিশ সুপার ভোলানাথ পাণ্ডে সোমবার দিনহাটার একাধিক এলাকা পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন, “আইনশৃঙ্খলার সমস্যা কোথাও যাতে না হয় সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।” বেশি রাতে ওই ৮টি পঞ্চায়েতেই ১৪৪ ধারা জারি হয়েছে।
আজ, মঙ্গলবার দিনহাটা-১ নম্বর ব্লকের আটটি গ্রাম পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন হবে। ওই তালিকায় রয়েছে গীতালদহ ১, গীতালদহ ২, বড় আটিয়াবাড়ি ১, বড় আটিয়াবাড়ি ২, বড় শৌলমারি, ওকরাবাড়ি, পুটিমারি ২ এবং দিনহাটা ভিলেজ ১ গ্রাম পঞ্চায়েত। তৃণমূল সূত্রেই দাবি, ওই আটটি গ্রাম পঞ্চায়েতেই দলের যুব সংগঠনের সদস্যরা নির্দল হয়ে লড়াই করেছেন। তৃণমূল প্রার্থীদের হারিয়েই তাঁরা জয়ী হয়েছেন বহু আসনে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় দুই পক্ষের লড়াইয়ে গীতালদহে ১ জন তৃণমূল কর্মী খুন হন। একাধিক জায়গায় দুই পক্ষের মধ্যে গুলি-বোমার লড়াইয়ে জখম হন অন্তত পক্ষে ৫০ জন। বোর্ড গঠনে ওই গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিতে ফের লড়াইয়ের আশঙ্কা করে উদ্বেগ বেড়েছে পুলিশ-প্রশাসনের। যদিও রাজ্য তৃণমূল নেতৃত্ব ওই বিষয়ে দুই পক্ষকেই সতর্ক করে দিয়েছেন।
এ দিন, কোচবিহার জেলা তৃণমূল সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ জানিয়ে দেন, আবেদনের ভিত্তিতে নির্দলদের দলে যোগদান করানো হবে। তিনি বলেন, “দলেরই অনেক কর্মী নির্দল হয়ে ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন। তাঁরা যদি দলে ফেরার জন্য আবেদন করেন, সেই ভিত্তিতে প্রত্যেককেই দলে ফেরানো হবে।” বোর্ড গঠনের মুখে রবীন্দ্রনাথবাবুর ওই বার্তা গোষ্ঠীকোন্দল রোখার চেষ্টা বলেই মনে করছেন অনেকে। রবীন্দ্রনাথবাবু আরও বলেন, “দিনহাটায় শান্তিপূর্ণ ভাবে বোর্ড গঠন হবে। সবাই মিলে আলোচনা করে ওই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে। দলের সিদ্ধান্ত মেনেই সব জায়গায় প্রধান নির্বাচন হবে।” দলের জেলা কোর কমিটির সদস্য তথা দিনহাটার বিধায়ক উদয়ন গুহ বলেন, “দলে কোনও বিরোধ নেই। আলোচনার মাধ্যমেই সব ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে।”
জেলা কোর কমিটির দুই সদস্য সমস্যা নেই বললেও দাবি করলেও দলেরই একটি অংশ তা মানতে নারাজ। ওই গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি সিতাই বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়েছে। সিতাইয়ের বিধায়ক জগদীশ বসুনিয়া বলেন, “নির্দলদের সঙ্গে কোনও আলোচনার বিষয় আমার জানা নেই। দলীয় নির্দেশ মেনেই দলের সদস্যদের চলার কথা বলা হয়েছে।” দিনহাটা ১ নম্বর ব্লকের তৃণমূল সভাপতি নুর আলম হোসেন বলেন, “বাম ছেড়ে আসা কিছু লোকজন ছক তৈরি করে অশান্তি করার চেষ্টা করছে। দলের জেলা সভাপতিকে ভুল বোঝানর চেষ্টা হচ্ছে। দলের নির্দেশ মেনেই প্রধান করতে হবে।” যুব সংগঠনের কোচবিহার জেলার সাধারণ সম্পাদক নিশীথ প্রামাণিকেরে সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব আলোচনা করেছেন। নিশীথবাবু বলেন, “দলীয় সিদ্ধান্ত মেনেই বোর্ড গঠন হবে। সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।”