সরগরম: মালদহে সিপিএমের দফতরে কর্মীরা। নিজস্ব চিত্র
মিহির দাস ভবন। ইংরেজবাজার শহরের কালীতলায় থাকা সিপিএমের মালদহ জেলা পার্টি অফিস। দিনকয়েক আগেও কার্যত দিনভরই খাঁ খাঁ করত এই পার্টি অফিস। এখন অবশ্য ভোল পাল্টে গিয়েছে সেই ছবির।
আগে হাতে গোনা কিছু নেতা- নেত্রীদেরই আনাগোনাই শুধু থাকত এই দফতরে। আর কোনও মিটিং থাকলে লোকজনের সংখ্যা একটু বেশি হত। কিন্তু পঞ্চায়েত ভোট ঘোষণার পর থেকেই পুরোপুরিই ভোল বদলে গিয়েছে সেই মিহির দাস ভবনের। এখন সকাল থেকেই শুরু হতে শুরু করেছে লোকজনের আনাগোনা। বৃহস্পতিবার দুপুরে গিয়ে দেখা গেল, পার্টি অফিস কর্মী-সমর্থক, সম্ভাব্য দলীয় প্রার্থীদের ভিড়ে রীতিমতো গমগম করছে। দোতলার এক একটি ঘরে নেতৃত্বরা দলীয় প্রার্থীদের মনোনয়নের কাগজপত্র তৈরি করে দিতে ব্যস্ত। অনেকদিন পর পার্টি অফিসে সেই চেনা ছবি ফিরে আসায় খুশির ঝিলিক নেতাদের চোখেমুখে।
দল যখন ক্ষমতায় ছিল তখন সকাল হতেই রীতিমতো গমগম করত সিপিএমের মালদহ জেলা পার্টি অফিস। কালীতলার স্থানীয় বাসিন্দারাই বলছেন, সেসময় সকাল থেকে রাত পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কর্মীরা তো বটেই এমনকী সাধারণ মানুষও নানা প্রয়োজনে ছুটে আসতেই এই জেলা পার্টি অফিসে।
প্রয়াত প্রাক্তন মন্ত্রী শৈলেন সরকার থেকে শুরু করে মানিক ঝা, জীবন মৈত্রদের মতো দাপুটে নেতারা পার্টি অফিসেই বেশিরভাগ সময় কাটাতেন। আর যেদিন দলের জেলা কমিটির বৈঠক বা বিভিন্ন গণ-সংগঠনগুলির সভা থাকতে তখন ভিড় আরও উপচে পড়ত। কিন্তু ২০১১ সালে ক্ষমতা চলে যেতেই সেই ভিড় ফিকে হতে শুরু করে। কমে যায় অনেক নেতাদেরও আনাগোনা। শেষ, গত বিধানসভা নির্বাচনেও ভিড়ে জমজমাট দেখা গিয়েছিল এই পার্টি অফিস। কিন্তু তারপর থেকে আরও ফিকে হতে শুরু করে ভিড়। বিশেষ করে, একে একে পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতিগুলি হাতছাড়া হওয়ায়, জেলা পরিষদের বেশিরভাগ সদস্য তৃণমূলে নাম লেখানোয় ভিড় আরও হালকা হয়ে যায়। পার্টি অফিসের আশেপাশের বাসিন্দারা বলছেন, এখন পার্টি অফিস রীতিমতো সুনসান।
কিন্তু সেই পার্টি অফিসই দিন কয়েক ধরে যেন ফিরে গিয়েছে সেই পুরনো ছন্দে। পঞ্চায়েত ভোট ঘোষণা হয়েছে শনিবার। রবিবার থেকেই লোকজনের আনাগোনা শুরু হয়েছে। দলীয় সূত্রেই খবর, মনোনয়ন পেতে যেমন অনেকে ভিড় জমাচ্ছেন তেমনি তৃণমূল ও বিজেপিকে হারাতে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করা যাবে কি না সেসব জানতেও জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কর্মীরা আসছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে গিয়ে দেখা গেল পার্টি অফিসের দোতলার বেশিরভাগ ঘরে ভিড় করে প্রচুর লোকজন, রীতিমতো গমগম করছে পার্টি অফিস। দলীয় সূত্রে জানা গেল, ওই ভিড় পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়নের কাগজপত্র প্রশাসনের কাছে জমা দেওয়ার আগে ঠিকঠাক করে নেওয়া। একটি ঘরে দলীয় নেতা অর্জুন রায়, আরেকটি ঘরে এক্রাম শেখ, অন্য একটি ঘরে জনার্দন সিংহেরা সেই সম্ভাব্য প্রার্থীদের মনোনয়নের কাগজপত্র ঠিকঠাক করে দিতে ব্যস্ত। অনেকদিন পর এমন ভিড় দেখে চোখমুখে খুশির ছাপ জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্রর। তিনি বললেন, ‘‘ভিড় হলে সবারই ভালো লাগে। জেলার সদর মহকুমার সমস্ত ব্লক থেকেই মনোনয়নের কাগজপত্র তৈরি করতে কর্মী-প্রার্থীরা আসছেন। নির্ভুলভাবে মনোনয়ন জমা দিতে সব ঠিকঠাক করে দেওয়া হচ্ছে।’’ খুশিতে আর এক জেলা নেতা বললেন, আজ যেমন-তেমন শুক্র, শনি ও সোমবার তো আরও ভিড় হবে।