চা বাগানের শ্রমিক পরিবারের একেবারে সদ্য হাঁটতে শেখা মেয়েটির হাতেও রাগবি বল। ৪ বছরের দয়ালু ওঁরাও থেকে ত্রিশ পেরোনো যুবক দীপু ওঁরাও—সকলেরই প্রিয় খেলা বলতে রাগবিই।
গত দুই আড়াই বছর ধরেই রাগবিতে মজে রয়েছে ডুয়ার্সের সরস্বতীপুর চা বাগান। বাগানের মেয়েরাই পশ্চিমবঙ্গের খেলোয়াড় হিসাবে জাতীয় স্তরে সাফল্যও পেয়েছে। তাদের সকলেই গজলডোবা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী। এ বারে এই চা বাগানে রাগবির টান ঘুরে দেখে সেই টানকে অন্যান্য চা বাগানেও ছড়িয়ে দিতে ডুয়ার্সে এল ইন্ডিয়ান রাগবি ফুটবল ইউনিয়ন এবং রাগবি ইন্ডিয়ার ১২ জনের প্রতিনিধিদল। সোমবার বিকেলে তাঁরা সরস্বতীপুর চা বাগানে আসেন। মহারাষ্ট্র, ওড়িশা, তামিলনাড়ু এবং পশ্চিমবঙ্গের থেকে আসা এই সম্মিলিত প্রতিনিধি দলের কো-অর্ডিনটের সন্দীপ মৌসনকার জানান, সরস্বতীপুরে মতোই ডুয়ার্সের চা বাগান লাগোয়া আরও ১২টি উচ্চ বিদ্যালয়ে রাগবির প্রসার ঘটাবার লক্ষ্য নিয়ে তাঁরা এখানে এসেছেন।
সন্দীপবাবু জানান, সরস্বতীপুরের মতো প্রত্যন্ত এলাকার মেয়েরা যে ভাবে জাতীয় স্তরে সুনাম কুড়িয়েছে, তাতে তাঁরাও চমকে গিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘এ বারে এখানে আরও নতুন নতুন উঠতি প্রতিভাদের খেলা এবং অনুশীলন দেখব।’’ আজ মঙ্গলবার ডামডিম এলাকাতেও রাগবি খেলার আয়োজন করা হয়েছে। সেখানেও প্রতিনিধি দলটি উপস্থিত থাকার কথা। বাগানের কৃপা ওঁরাও, চন্দা ওঁরাওরা জাতীয় স্তরের খেলোয়াড় হিসাবে উঠে আসায় সঞ্জীব ওঁরাও, সুবল ওঁরাও-রাও এখন আরও মন দিয়ে রাগবি খেলতে চাইছেন। বাগানেরই যুবক অরুণ ওঁরাও, দীপেশ তিরকেরা সহকারি কোচের ভূমিকা পালন করে সকলকে মাঠে নিয়ে আসছেন।
এই সব চোখের সামনে দেখে অভিভূত কোচ সোনু ওঁরাও, শৈলেন টুডুরা। ওঁরা বললেন, ‘‘আমরা যখন প্রথম শুরু করেছিলাম তখন কেউই এই খেলা গ্রহণ করতে পারেনি। এখন ওরা রাগবির সঙ্গে একেবারে নাড়ির টান অনুভব করায় আমরা আপ্লুত।’’ আদিবাসী এবং জঙ্গল অধ্যুষিত ডুয়ার্স থেকে প্রতিভাদের বেছে নিতে দু’টি দলে ভাগ করে নিজেদের মধ্যে রাগবি খেলাতে উদ্যোগী হয়েছেন রাগবি সংগঠনের জাতীয় স্তরের প্রতিনিধিরা। একটি দলের নাম রাখা হয়েছে আদিবাসী রাগবি, অন্যটি জঙ্গল রাগবি। আজ, মঙ্গলবার দু’দলের একটি ম্যাচ রয়েছে।