নিঃশব্দে: বন দফতরের ক্যামেরায় ওঠা রয়্যাল বেঙ্গলের ছবি।
তুমি যে এ ‘বনে’ কে তা জানত! এ কথাই মনে হতে পারে শিলিগুড়ির উপকণ্ঠে মহানন্দা অভয়ারণ্যে বন দফতরের পাতা ট্র্যাপ ক্যামেরায় বাঘের দেখা মেলার পরে। গত বছর ফেব্রুয়ারি থেকে অগস্ট পর্যন্ত জঙ্গলে একাধিক ট্র্যাপ ক্যামেরায় রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের দেখা মিলেছে। বন দফতর সে ব্যাপারে ‘ন্যাশনাল টাইগার কনজ়ারভেশন অথরিটি’-কে জানিয়েছে। এ মাসেই তার সংক্ষিপ্ত তথ্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রকাশ করেছেন। বন দফতর দু-এক দিন আগে প্রকাশ্যে এনেছে বাঘের সে ছবি।
বন দফতর সূত্রের দাবি, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত বাঘের পায়ের ছাপ এবং মল মিলেছে মহানন্দা অভয়ারণ্যে। তখন থেকে ওই এলাকায় ট্র্যাপ ক্যামেরা কম ছিল। ফের ওই ক্যামেরার সংখ্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়, যাতে বাঘের উপস্থিতির উপরে নজর রাখা যায়। রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) দেবল রায় বুধবার বলেন, ‘‘ট্র্যাপ ক্যামেরায় মহানন্দা অভয়ারণ্যে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের দেখা মিলেছে। বাঘের এই এলাকায় দীর্ঘ সময় ধরে ঘোরাফেরা দফতরের তরফে বিশদে নজরদারি করা হচ্ছে।’’ প্রাথমিক ভাবে দফতর সূত্রের দাবি, যে ছবিগুলো বিভিন্ন সময় মিলেছে তা আলাদা বাঘের ছবি বলে মনে হচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞদের দিয়ে তা খতিয়ে দেখলে পরিষ্কার হবে। সে কারণে একটি বাঘ, না একাধিক, তা নিশ্চিত হতে অনুসন্ধান চলছে।
দফতর সূত্রে খবর, গত বছর ফেব্রুয়ারিতে প্রথম ট্র্যাপ ক্যামেরায় ধরা পড়ে বাঘের ছবি। ১৮ ফেব্রুয়ারি তা মেলার পরে একাধিক জায়গায় পাতা ট্র্যাপ ক্যামেরায় দেখা যায় ওই বছরেই এপ্রিল ও অগস্টে। ১৯ এপ্রিল ও ১৪ অগস্ট আলাদা জায়গায় পাতা ট্র্যাপ ক্যামেরায় তা ধরা পড়ে। গত ডিসেম্বরে ক্যামেরায় ধরা না পড়লেও পরোক্ষ ভাবে বাঘের উপস্থিতির কিছু তথ্য পায় বন দফতর।
কোন কোন জায়গায় পাতা ওই ট্র্যাপ ক্যামেরায় ছবি মিলেছে? বন দফতর সূত্রেই জানানো হয়েছে, মহানন্দা অভয়ারণ্যের সাত মাইল এলাকার কাছে দেখা গিয়েছে। এ ছাড়া, কালিঝোরার গোলা ব্লকে এবং চোকলং ব্লকে পাতা ট্র্যাপ ক্যামেরায় দেখা গিয়েছে। কিন্তু যে বাঘ দেখা গিয়েছে, তার শারীরিক মাপজোক কিছু মেলেনি। রাজ্যের মুখ্য বনপাল জানান, বিষয়টি বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, তারা চার বছর অন্তর দেশের বাঘের উপরে সামগ্রিক রিপোর্ট দেয়। এ মাসের শুরুতে ইতিমধ্যে প্রকাশ করেছেন। জুলাই মাসে তার পূর্ণাঙ্গ রিপোর্টের অপেক্ষা করছেন তাঁরা।
উত্তরবঙ্গের মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) রাজেন্দ্র জাখর বলেন, ‘‘২০২১ সালের সেপ্টেম্বর থেকেই নজরদারি করা হচ্ছিল। মহানন্দা অভয়ারণ্য এলাকায় ট্র্যাপ ক্যামেরা কম ছিল। ৮০টির মতো। এখান থেকে কিছু ক্যামেরা অগস্টের পরে বক্সায় পাঠানো হয়। ফের এই এলাকায় ট্র্যাপ ক্যামেরা বাড়ানো হবে।’’
বনাধিকারিকদের একাংশ জানান, যে বাঘের ছবি মিলেছে সেগুলো এই বনাঞ্চলে বাস করে না। অন্য জায়গা থেকে এসেছে। তবে কোথা থেকে এসেছে ,জানা নেই বন দফতরের। তা ছাড়া, বিশেষজ্ঞেরা খতিয়ে দেখলে তবেই বলতে পারবেন একাধিক বাঘের ছবি কি না। বিশেষজ্ঞদের মতে, সে জন্য বাঘের দু’পাশের পূর্ণাঙ্গ ছবি মেলা দরকার। তা থেকে ডোরা কাটা দাগের বৈশিষ্ট্য খতিয়ে দেখতে হবে।
২০২১ সালে বক্সার জঙ্গলে ট্র্যাপ ক্যামেরায় যে বাঘের ছবি মিলেছে, তা বিশেষজ্ঞেরা খতিয়ে দেখছেন। মহানন্দা অভয়ারণ্যের ছবি এখনও বিশেষজ্ঞেরা পরীক্ষা করছেন না। যার বা যাদের ছবি ধরা পড়েছে, সে বা তারা পুরুষ না স্ত্রী বাঘ, সে বিষয়টিও স্পষ্ট নয় বন দফতরের কাছে।