আরতির ঘরও কাড়ল গঙ্গা

আরতিদেবীর বাড়িই এ বার ভাঙনের গ্রাসে। শনিবার বিকেলে বোল্ডার পিচিংয়ের কাজকে দুমড়ে-মুচড়ে ফেলে গঙ্গা যে দ্বিতীয়বার তাঁকে ঘরছাড়া করবে তা স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি। ফের ঘরবাড়ি হারিয়ে পাঁচ ছেলেকে নিয়ে এবার আশ্রয় নিলেন পারলালপুর গ্রামে দেওরের বাড়ির দাওয়ায়।

Advertisement

জয়ন্ত সেন

পারঅনুপনগর শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:১৬
Share:

আরতি রায়। —নিজস্ব চিত্র।

যিনি আশ্রয় দিয়েছিলেন, তিনিই এ বার আশ্রয়হীন।

Advertisement

স্বামী হারিয়েছেন আগেই। দু’বছর আগে গঙ্গা ভিটেটুকুও কেড়ে নেয়। তখন পাঁচ ছেলেকে নিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন এক প্রতিবেশীর জমিতে। কোনও রকমে সেখানেই টিনের দু’টি ঘরও করেছিলেন। নিজে ঘরহারা হয়েও পড়শির ঘরে এক কোমর জল দাঁড়িয়ে যাওয়ায় দিন সাতেক আগে সেই পড়শির পরিবারকে ঠাঁই দিয়েছিলেন নিজের একটি ঘরে। পারঅনুপনগরের আরতি রায় মানবিকতার যে নজির তৈরি করেছিলেন, তাতে এলাকায় ধন্য ধন্য পড়ে গিয়েছিল।

কিন্তু সেই আরতিদেবীর বাড়িই এ বার ভাঙনের গ্রাসে। শনিবার বিকেলে বোল্ডার পিচিংয়ের কাজকে দুমড়ে-মুচড়ে ফেলে গঙ্গা যে দ্বিতীয়বার তাঁকে ঘরছাড়া করবে তা স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি। ফের ঘরবাড়ি হারিয়ে পাঁচ ছেলেকে নিয়ে এবার আশ্রয় নিলেন পারলালপুর গ্রামে দেওরের বাড়ির দাওয়ায়। আর তিনি যে পড়শিকে আশ্রয় দিয়েছিলেন, সেই গণেশ বিশ্বাসও পরিবার সহ আশ্রয় নিয়েছেন গ্রামেরই আর এক পরিবারের বাড়িতে।

Advertisement

শুধু তাঁরাই নন, আরতিদেবীর প্রতিবেশী আরও তিনটি পরিবারেরও ঘরবাড়ি এই যাত্রায় গিলে নিয়েছে গঙ্গা। তাঁরাও অন্য কারও বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে রয়েছেন। ভাঙন রোধের কাজের ভেঙে পড়া অংশে সেচ দফতর বালির বস্তা ও ডিপ-ট্রিজ পদ্ধতিতে বাঁশ গাছ ও অন্য গাছ ফেলে গঙ্গাকে আটকানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু যেখানে বোল্ডার পিচিং করে গঙ্গাকে আটকানো গেল না সেখানে বালির বস্তা বা ডিপ-ট্রিজ ফেলে গঙ্গাকে কি রোখা যাবে? এক দিকে প্লাবিত গোটা পারদেওনাপুর , তার উপর ভাঙন আতঙ্কে ওই এলাকার গঙ্গাপাড়ের বাসিন্দাদের রাতের ঘুম এখন উড়ে গিয়েছে।

গত বুধবারই দুপুরে নিজের ঘরদোর কোথায় ছিল তা দেখাচ্ছিলেন পঞ্চাশ ছুঁইছুঁই আরতিদেবী। যেখানে এখন শুধুই জল, আর জল। যত দূর চোখ যাচ্ছিল শুধু গঙ্গার উথালপাতাল ঢেউ। তবুও আরতিদেবী বলছিলেন, “ওই যে ওখানে বাড়ি ছিল আমাদের। উঠোন ছিল, ছিল তুলসিতলা”। আঁচল দিয়ে চোখ মুছে বলেছিলেন, ‘‘দু’বছর আগে গঙ্গা ভিটেমাটি কেড়ে নেওয়ার পর পারঅনুপনগরেই অমর রায়ের একফালি জমিতে আশ্রয় নিয়েছিলাম। কিন্তু নদী এগিয়ে আসছে। এবার ভাঙন রোধের কাজ হওয়ায় ভরসা পাচ্ছি।’’

সেই ভরসা ভাসিয়ে দিল গঙ্গা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement