‘মস্তানি’ দীপিকার এই পোশাকই এ বার বাজারে হিট।
চৌকাঠ ডিঙিয়ে পুজো ঘরের ভিতরে। আপনার ওয়ার্ডরোব থেকে বিছানার পাশের চেয়ার, ক্ষণে ক্ষণে সব সাড়া দিয়ে উঠছে থরে থরে সাজানো প্লাস্টিক আর কাগজের প্যাকেটের শব্দে। ভেতর থেকে উঁকি মারছে খেসের শাড়ির কলমকারি আঁচলের কোণ অথবা আনকোরা ‘মস্তানি’ ড্রেসের গন্ধ। প্যাকেটের বন্দি দশা ঘুচিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে পোশাক গায়ে লেপ্টে তাদের পুজো দেখতে বেরোনোর রুটিনও হয়তো এত ক্ষণে তৈরি। শেষ ঘণ্টায় আসুন পুজোর ফ্যাশনের হাওয়ার সঙ্গে আপনার সাজানো ঘুঁটিদের মিলিয়ে নেওয়া যাক।
রাস্তার ধারের দোকান থেকে শপিং মল অথবা অনলাইন বাজার— সর্বত্রই এ বার রাজত্ব করছে মস্তানি ড্রেস। এ বছর মুক্তি পাওয়া ‘বাজিরাও মস্তানি’ ছবিতে দীপিকা পাড়ুকোনের জন্য ডিজাইন করা রাজকীয় পোশাকই এর প্রাণভ্রোমর। দুই অথবা তিনটে পার্টে হতে পারে এই ড্রেস। ভেতরে এক-রঙা অথবা হাল্কা কাজ করা স্লিভলেস আনারকলি চুড়িদার লেহেঙ্গার মতো গোড়ালি অবধি নেমে আসবে। কোমরের নীচ থেকে বা পাড়ে থাকবে ভারী জরি-সিক্যুইনের কাজ। আর ওপরে থাকবে ভারী প্রিন্ট, জারদৌসি বা কাচের কাজ করা ফুল স্লিভ হাঁটু অবধি লম্বা জ্যাকেট বা আংরাখা। জ্যাকেটের সামনে আর দু’দিকে স্লিট থাকতে পারে। সঙ্গে জামার ঘেরের সঙ্গে মানানসই ওড়না নিতেও পারেন, আবার না নিলেও চলে। এই জমকালো পোশাক সপ্তমী থেকে নবমী যে কোনও দিন সন্ধেয় আপনাকে মধ্যমণি বানাতে পারে।
জলপাইগুড়ির মেয়ে অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তী পুজোয় ট্র্যাডিশনাল সাজেই স্বচ্ছন্দ্য। জ্যাকেট-সহ এই গাউনের মতো ড্রেস মিমির পোশাকের তালিকাতেও ঠাঁই পেয়েছে।
স্লিট এ বার ফ্যাশনে ইন। সে মস্তানি-র জ্যাকেটেই থাকুক বা কুর্তিতে। যে হেতু এই খোলামেলা কুর্তির জন্য চুড়িদার বা সালোয়ার তেমন উপযুক্ত নয়, তাই এর সঙ্গে পালাজো বা ঢিলেঢালা স্ট্রেট ফিট কটন প্যান্টই মানানসই।
জলপাইগুড়িরই মেয়ে উইনি রায় কুণ্ডু সদ্য বিয়ে করে এখন শিলিগুড়ির বাসিন্দা। ফটোগ্রাফার উইনি বললেন, “সাজের দিক থেকে জলপাইগুড়ি অনেক এথনিক। লং কুর্তা-পালাজো, গাউন, সব কিছুর সঙ্গেই এ বার কপালে টিপ থাকতেই হবে। আর ব্লাউজ, গয়না বা ব্যাগে কোথাও না কোথাও কলমকারির ছোঁয়া থাকবেই। শিলিগুড়ি শহর আবার ইন্দো-ওয়েস্টার্ন মেশানো। জরির দেওয়া শিফন শাড়ি, পাথরের গয়না, জাম্প স্যুট বেশি চলে।’’
রেট্রো প্রিন্টের শাড়ি এ বছরের অন্যতম আকর্ষণ। মূলত কটন, লিনেন বা তসরের ওপর লাল দোতলা বাস, হলুদ ট্যাক্সি বা টানা রিকশা প্রিন্টের শাড়িতে ট্র্যাডিশনাল সাজ ভেঙে আপনি নবমীর সন্ধ্যেয় সকলের নজর কাড়বেন বইকি! পরতে পারেন বাঘ, ঘোড়া, প্যাঁচা বা টিয়ার মতো অ্যানিমাল প্রিন্টের কটন শাড়িও। খেসের শাড়ির সঙ্গে কলমকারি প্রিন্টের কদর এ বছরও আছে। কিন্তু সঙ্গে রয়েছে শাড়ির জমি জুড়ে, পাড়ে অথবা আঁচলে বোনা টাসেল। অষ্টমীর সন্ধেয় ভারী জামদানী বা কাঞ্জিভরম ম্যানেজ করতে অসুবিধা হলে অনায়াসে এই ফিউশনের পথে হাঁটা যায়। তা ছাড়া ড্রেপড লেহেঙ্গা বা গাউন শাড়ি, ‘কালার প্লিটেড’ শাড়ি (কুঁচিতে আলাদা রং বা ডিজাইন), নেটের ‘শিয়ার-ওপেক’ শাড়ি (আঁচল থেকে অর্ধেকটা স্বচ্ছ) তো আছেই। ফ্যাশন ডিজাইনার অভিষেক দত্ত মনে করিয়ে দিলেন, ‘‘সঙ্গে আপনার বিশেষ ডিজাইন করা চোলি বা জ্যাকেট ব্লাউজটি কিন্তু ‘ফ্লন্ট’ করতে ভুলবেন না!’’
“ডার্ক প্যাস্টেল শেড এ বারে ইন। অ্যাসিমেট্রিক্যাল আনারকলি বা লং কুর্তির সঙ্গে টিম আপ করেও এই ধরনের প্যান্ট ট্রেন্ড সেট করছে”, বলছিলেন অভিষেক। আর এক ডিজাইনার অগ্নিমিত্রা পল বললেন, ছোট ঘেরের গোড়ালি অবধি লম্বা পালাজোর চাহিদা এ বার ভালই। সপ্তমীর সকালে প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ঢুঁ মেরে বেড়ানোর জন্য এই আরামদায়ক কম্বিনেশনের তুলনা নেই।
এ বছরের সাজের সঙ্গে মেক আপে ‘হেভি-আইজ উইথ ন্যুড-লিপ’ নৈব নৈব চ। বরং চোখ ন্যুড রাখুন, ঠোঁটে টকটকে ক্রিমসন। ঘন করে মাসকারা লাগান আর ভ্রূর লাইনটা ডিফাইন করুন— বলছেন ডিজাইনাররা। এটাও সেই ‘বাজিরাও মস্তানি’ লুক। আর সেই স্টাইলে নাকে রুপোর ওভারসাইজড নাকছাবি আর কাপড়ের গয়না আপনার স্টেটমেন্ট হতে পারে। বিভিন্ন কিসিমের চুল বাঁধা তো এখন ইউটিউব চ্যানেল খুঁজেই শিখে নেওয়া যায়। পার্লারে না গিয়েও আপনি একটা সাধারণ সাইড ব্রেড বা মেসি আপ-ডু করে নিতে পারেন। আর একটু খেটে নানা রকম ‘পুফ হেয়ারস্টাইল’ (সামনে ফুলিয়ে চুল বাঁধা) করে দেখতে পারেন, ফ্রেঞ্চ ব্রেডেড সাইড বান, গ্রিক গডেস বান, ফিশটেল বা মোহক ব্রেড আপনাকে ভিড়ের মধ্যে চেনাবেই।
তো, আর দেরি কেন! পুজোর বাজনা তো বেজে গিয়েছে। পঞ্চমী থেকেই শুরু হোক আপনার সাজ। সঙ্গে চোখ ধাঁধানো চমক।