স্কুলের খাতায় কান্তকবি। —নিজস্ব চিত্র।
বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময় সাড়া ফেলে দিয়েছিল একটি গান—‘মায়ের দেওয়া মোটা কাপড় মাথায় তুলে নে রে ভাই, দীন দুখিনী মা যে মোদের তার বেশি আর সাধ্য নাই।’
তার আগে থেকেই রজনীকান্ত সেন কিন্তু বাংলায় কবি বলে পরিচিত। স্বল্পায়ু এই কবি অবিস্মরণীয় কিছু গান লিখেছিলেন, যা তাঁর জন্মের সার্ধ শতবর্ষেও অমলিন। এই রজনীকান্তই কিন্তু এক রকম অবহেলিত তাঁর স্কুল কোচবিহারের জেনকিন্সে। এই স্কুল থেকেই রজনীকান্ত এন্ট্রান্স পরীক্ষায় পাস করেছিলেন। তারপরে তিনি কলকাতা চলে যান।
এখন সেই স্কুলের কোনও ভবন কিংবা কক্ষ কান্তকবির নামে নেই। স্কুল চত্বরে রজনীকান্তর মূর্তি তো দূরের কথা। তথ্য বলতে জেনকিন্স স্কুলের ছাপানো খাতায় এন্ট্রান্স উর্ত্তীণদের তালিকার একটি প্রতিলিপি। যাতে ১৮৮৪ সালের যাঁরা পাস করেছেন, তাঁদের ১১ জনের তালিকায় রজনীকান্তর নাম রয়েছে। ক্রমানুসার হিসেবে যা আছে ৮ নম্বরে।
আজ মঙ্গলবার ২৬ জুলাই কবির জন্মদিনেও স্কুলে কোনও অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা কিছু হয়নি। এ নিয়ে প্রাক্তনীদের একাংশ তো বটেই, বাসিন্দাদের অনেকের মধ্যেও প্রশ্ন উঠেছে।
জেনকিন্স স্কুল কর্তৃপক্ষের অবশ্য বক্তব্য, উত্তরবঙ্গের অন্য জেলাগুলির সঙ্গে টানা বর্ষণে কোচবিহারেও বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। জেলা জুড়ে বিভিন্ন স্কুলে মঙ্গলবারও ছুটি ঘোষণা করেছে প্রশাসন। তাই কবির জন্মদিনে অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা নেওয়া যায়নি। তবে ১৩ অগস্ট স্কুলে নতুন চেহারায় সদ্য চালু হওয়া গ্রন্থাগার ভবনে প্রাক্তন ছাত্র রজনীকান্তর জন্মদিন উদযাপন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জেনকিন্স স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দেবব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, “বিখ্যাত কবি, গীতিকার রজনীকান্ত সেন আমাদের স্কুলের প্রাক্তনী। চেষ্টা হলেও তাঁকে নিয়ে সে রকম ভাবে কোনও অনুষ্ঠান করা হয়নি। আগামী ১৩ অগস্ট কবির জন্মদিন উদযাপন করা হবে।” রাজ্য সরকারি বিদ্যালয় শিক্ষক ও কর্মচারি সমিতির রাজ্য সহ সভাপতি প্রভাতকুমার রায় জানিয়েছেন, ২০১১ সালে স্কুলের দেড়শো বছর পূর্তি উৎসবের সময় কৃতী প্রাক্তনীদের তালিকা তৈরি করতে গিয়ে প্রথম বিষয়টি তাঁদের নজরে আসে। স্মরণিকাতেও কবির নাম ও ছবি তুলে ধরা হয়। তিনি বলেন, ‘‘তারপর যে কোনও কারণেই হোক কবিকে নিয়ে আমরা কোনও অনুষ্ঠান করতে পারিনি। স্কুলের পাস করা ছাত্রদের যে তালিকায় কবির নাম রয়েছে, তা টাঙিয়ে রাখার প্রস্তাব দেব।’’ স্কুল সূত্রেই জানা গিয়েছে, ১৮৮৪ সালে ( মতান্তরে ১৮৮৩) জেনকিন্স স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন রজনীকান্ত সেন। স্কুলের উত্তীর্ণদের তালিকায় তাঁর সহপাঠীদের মধ্যে প্রিয়ভূষণ রায়মল্লিক, পদ্মনাথ দাস, বিনোদবিহারী রায়মল্লিক, তারাকান্ত গুহ, হরনারায়ণ দাস, শশীভূষণ চৌধুরী, প্রাণগোপাল রায়ের পরে কবির নাম রয়েছে।
এ ছাড়াও ওই তালিকায় পঞ্চানন বিশ্বাস, প্রসন্নকুমার ভৌমিক, শরৎচন্দ্র চক্রবর্তী প্রমুখের নাম রয়েছে। ইতিহাস গবেষক দেবব্রত চাকি বলেন, “এ রকম একজন ব্যাক্তিত্ব জেনকিন্সের প্রাক্তন ছাত্র, সেটা গোটা কোচবিহারের গর্ব। আমরা চাই জন্ম সার্ধশতবর্ষে তাঁকে শহরই যথাযোগ্য সম্মান জানাক।”