মিস্টার দিনহাটা খেতাব জয়ী রমজান। —নিজস্ব চিত্র।
ঝড়বৃষ্টি যাই হোক রোজ সকাল ছটার মধ্যে ঘুম থেকে উঠে পড়া বরাবরের অভ্যেস। ঘড়ি ধরে আধ ঘণ্টার মধ্যে হাত-মুখ ধুয়ে স্রেফ এক কাপ চা। তার পর কোনও দিন হেঁটে, কোনওদিন টোটো ধরে সোজা দিনহাটার রংপুর রোডে মালিকের বাড়ি। সেখান থেকে ট্রাক নিয়ে বেরিয়ে কোনওদিন কোচবিহার শহরে, কোনওদিন শিলিগুড়ি কিংবা কোনওদিন দিনহাটাতেই পণ্যসামগ্রী পৌঁছে দিতে রওনা হওয়া। দুপুরের খাওয়া-দাওয়া হোটেলে। বিকেলের মধ্যে ফিরতে পারলে বাড়িতে ঢুঁ মারেন। সন্ধ্যা হলে অবশ্য সোজা মহামায়াপাট ব্যায়াম বিদ্যালয়।
রমজান আলির দৈনন্দিন রুটিন এটাই। কঠোর পরিশ্রম, ইচ্ছাশক্তি আর অধ্যবসায়ের জেরে যিনি সমস্ত প্রতিকূলতাকে ছাপিয়ে এখন ‘মিস্টার দিনহাটা ২০১৬’। দিনহাটার গোসানি রোডের বাসিন্দা রমজানের ওই সাফল্যে শরীরচর্চার সঙ্গে যুক্তরা তো বটেই, খুশির হাওয়া দিনহাটার সব মহলেই। ভবিষ্যতে রমজান সাফল্যের ধারবাহিকতা বজায় রেখে এগোবেন, এমন স্বপ্নও দেখছেন অনেকে। ‘মিস্টার দিনহাটা’ নিজে বলছেন, “অনেক কষ্ট করে এমন সাফল্য পেয়েছি। সারাদিন ট্রাক নিয়ে ঘোরাঘুরির পরেও ব্যায়াম বিদ্যালয়ে গিয়ে শরীরচর্চা করেছি। পরিশ্রমটা সার্থক হল।” ভবিষ্যৎ নিয়ে তাঁর সংযোজন, ‘‘আরও বড় প্রতিযোগিতায় নামার ইচ্ছে আছে। ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’ খেতাবও জিততে চাই। তবে সংসার সামলে, হাড়ভাঙা খাটুনির পর শরীরচর্চার অভ্যাস কতদিন ধরে রাখতে পারব সেটাই ভাবাচ্ছে।’’
ভাবনার কারণও রয়েছে। বছর চব্বিশের রমজানদের টানাটানির সংসার। স্ত্রী রেবেকা বিবি, এক বছরের শিশুকন্যা রাব্বিয়া ছাড়াও বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা, মা, ভাই। পাঁচ বছর আগে সংসারের হাল ধরতে পাঁচ বছর আগে ট্রাকচালকের কাজে নামেন। তার আগে থেকেই অবশ্য মহামায়াপাট ব্যায়াম বিদ্যালয়ে শরীরচর্চার ক্লাসে ভর্তি হন। সংসার, জীবিকার টান, সমস্যা সত্ত্বেও তিনি ক্লাস ছাড়েননি। বিদ্যালয়ের সচিব বিভুরঞ্জন সাহা বলেন, “ইচ্ছাশক্তি আর অধ্যবসায় থাকলে কোনও বাধাই লক্ষ্য পূরণে সমস্যা হতে পারে না। এ কথা যেন রমজান আবার প্রমাণ করে দিল।” রমজান যাঁর ট্রাক চালান, সেই রামকুমার সারদা বলেন, “ওকে ছুটি দেওয়াটা সার্থক মনে হচ্ছে।” রমজানের এক সতীর্থ জানান, এত দিনেও ভাত, ছাতু, ছোলা ছাড়া ভাল কোনও প্রোটিন রমজান পাননি।
ফি বছর কালীপুজো উপলক্ষে দিনহাটায় এই দেহসৌষ্ঠব প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। প্রাথমিক পর্বে চারটি বিভাগে ৪৮ জনকে বেছে নেওয়া হয়। চারটি বিভাগের ওই সেরাদের মধ্যে রমজান ছাড়াও তন্ময় ভৌমিক, সৌরভ মোদক, সৌরভ রায় জায়গা পান। বুধবার সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলা চূড়ান্ত পর্বের প্রতিযোগিতায় সেরা হন রমজান। অন্য বিভাগগুলির মধ্যে যোগাসনে নিজেদের বিভাগে শিবরূপ তালুকদার, রাইমা পাল, পাওয়ার লিফটিংয়ে শোভন রায় ও ওয়েট লিফটিংয়ে পলাশ দে সেরা হন।