ভূমিপুত্রের শোকে মঙ্গলবার কার্যত বন্ধের চেহারা নিল রায়গঞ্জ ও কালিয়াগঞ্জ। প্রিয়বাবুর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে এ দিন তাঁর দুই প্রিয় শহরেই সমস্ত দোকানপাট বন্ধ রেখেছিলেন ব্যবসায়ীরা। দু’টি শহর থেকে উত্তর দিনাজপুর সহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন রুটে বেশিরভাগ বেসরকারি যানবাহন চলেনি। হাতেগোনা কিছু রিকশা ও টোটো চলেছে। ফলে সকাল থেকেই দুর্ভোগে পড়তে হয় রায়গঞ্জ ও কালিয়াগঞ্জের নিত্যযাত্রী ও বাসিন্দাদের। কিন্তু প্রিয়বাবুর আবেগ জড়িয়ে থাকায় কেউই কোনও অভিযোগ করেননি।
মঙ্গলবার দুপুরে কলকাতা থেকে বিশেষ হেলিকপ্টারে রায়গঞ্জের কসবা চতুর্থ সশস্ত্র আরক্ষা বাহিনীর অস্থায়ী হেলিপ্যাডে প্রিয়বাবুর দেহ আনা হয়। সেখান থেকে সন্ধে সোওয়া ছ’টা নাগাদ রায়গঞ্জের প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর দেহ নিয়ে যাওয়া হয় কালিয়াগ়ঞ্জে তাঁর বাড়িতে। সেখান থেকে কালিয়াগঞ্জ ও রায়গঞ্জের দলীয় অফিসে। যেখানেই প্রিয়বাবুর দেহ নিয়ে যাওয়া হয়েছে সেখানেই ভিড় ভেঙে পড়েছে। প্রিয় নেতাকে শেষবার দেখতে এই ভিড়ে যেমন সামিল ছিলেন তাঁর দলের নেতা কর্মীরা, তেমন ছিলেন রায়গঞ্জ-কালিয়াগঞ্জের সাধারণ মানুষও।
প্রিয়বাবুকে শেষবার দেখার জন্য এ দিন সকাল ১০টা থেকেই চতুর্থ সশস্ত্র আরক্ষা বাহিনীর ক্যাম্পের গেটের সামনে ভিড় করেন কয়েক হাজার মানুষ। আইনশৃঙ্খলার স্বার্থে পুলিশ কাউকে ক্যাম্পে ঢোকার অনুমতি দেয়নি। ফলে হেলিপ্যাডের সামনে যাওয়া নিয়ে বাসিন্দাদের সঙ্গে দফায় দফায় বচসা বাধে পুলিশের। জেলাশাসক আয়েশা রানি ও পুলিশসুপার শ্যাম সিংহ বাসিন্দাদের বারবার শ্মশানে গিয়ে বা জেলা কংগ্রেস কার্যালয়ে গিয়ে প্রিয়বাবুকে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর অনুরোধ করেন। তাও নিরাপত্তার ফাঁক গলে এ দিন হেলিপ্যাডে বহু মানুষ ঢুকে পড়েন।
রায়গঞ্জ মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক অতনুবন্ধু লাহিড়ী, পশ্চিম দিনাজপুর চেম্বার অব কমার্সের সাধারণ সম্পাদক শঙ্কর কুণ্ডু ও জেলা বাস ও মিনিবাস ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক প্লাবন প্রামাণিক একই সুরে দাবি করেছেন, প্রিয়দার প্রতি জেলার মানুষের বরাবরই একটা আলাদা আবেগ রয়েছে। এতবড় একজন জনপ্রিয় জননেতা সংসদে প্রতিনিধিত্ব করে রায়গঞ্জ, কালিয়াগঞ্জ সহ গোটা জেলাকে দেশের মধ্যে আলাদা পরিচিতি এনে দিয়েছেন। তিনি জেলার উন্নয়নের স্বপ্ন দেখতেন। সব রাজনৈতিক দলকেই তিনি মর্যাদা দিতেন। তাই এ দিন রায়গঞ্জ ও কালিয়াগঞ্জের ব্যবসায়ী, বেসরকারি বিভিন্ন পরিবহণ মালিক-শ্রমিক সহ সাধারণ মানুষ অঘোষিত বন্ধ পালন করে প্রিয়বাবুকে শ্রদ্ধা জানালেন।
জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা রায়গঞ্জের বিধায়ক মোহিত সেনগুপ্ত ও জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা ইটাহারের বিধায়ক অমল আচার্য বলেন, ‘‘বর্তমানে জেলার কংগ্রেস ও তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত বেশিরভাগ নেতা কর্মীর রাজনৈতিক অভিভাবক ছিলেন প্রিয়দা। রাজনীতির উর্দ্ধে উঠে তিনি যে জননেতার মর্যাদা পেয়েছিলেন, তা এ দিন রায়গঞ্জ ও কালিয়াগঞ্জের বাসিন্দারা প্রমাণ করলেন।’’