খুচরো থাকলে পরে গিয়েও আগে হচ্ছে মৃতদেহ দাহ। আর পকেটে ৫০০ কিংবা ১০০০ টাকার নোট থাকলে শবদেহ নিয়ে অপেক্ষা করতে হচ্ছে আত্মীয়দের। নোট নিয়ে এমনই অলিখিত নিয়ম চালু হয়েছে মালদহ জেলা পরিষদের অধীনে থাকা সাদুল্লাপুর মহা শ্মশানে।
বৃহস্পতিবারও খুচরো না থাকায় শবদেহ নিয়ে দীর্ঘ ক্ষণ অপেক্ষা করতে হল একাধিক পরিবারকেও। অচল ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট নিয়ে শ্মশানেও সাধারণ মানুষকে হতে হচ্ছে হয়রানি। শবযাত্রীরা আক্ষেপ করে বলছেন, মরেও শান্তি নেই। খুচরো না থাকায় স্ত্রীর মৃতদেহ দাহ করতে এসে তিন ঘন্টা ধরে দাঁড়িয়ে রইলেন ইংরেজবাজারের যদুপুরের বাসিন্দা ভুদেব মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘‘দুর্ঘটনায় আমার স্ত্রী সজনী মারা যান। বাড়ি থেকে শ্মশানের দূরত্ব পাঁচ কিলোমিটার। পায়ে হেঁটেই আমরা শ্মশানে গিয়েছিলাম। আড়াই হাজার টাকা থাকলেও খুচরো না থাকায় আমার স্ত্রীর মৃতদেহ দাহ করতে অস্বীকার করে শ্মশানের কর্মীরা। তিন ঘণ্টা পরে ফের বাড়ি থেকে খুচরো টাকা নিয়ে গিয়ে স্ত্রীর দেহ দাহ করতে পারলাম।’’
শ্মশানে মৃতদেহ দাহ করতে গিয়ে ভুদেববাবুর মতো বিপাকে পড়েছেন হবিবপুরের রাকেশ সিংহ, পুরাতন মালদহের বিকাশ দাসেরা। শ্মশানে হয়রানি রুখতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপের দাবি তুলেছেন তাঁরা। যদিও শ্মশানে ৫০০ টাকা নিয়ে হয়রানি রুখতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে আশ্বাস দিয়েছেন জেলা পরিষদের অতিরিক্ত কার্যনির্বাহী আধিকারিক মলয় মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘বিষয়টি নজরে আসার পরে শ্মশানের কর্মীদের ৭২ ঘন্টা ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট নিতে বলা হয়েছে। আশা করছি শ্মশানে গিয়ে সাধারণ মানুষকে হয়রানির সম্মুখীন হতে হবে না। আর নির্দেশ না মানার বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ ইংরেজবাজারের যদুপুরের সাদুল্লাপুরে রয়েছে জেলার একমাত্র মহা শ্মশান। এক দশেক আগে প্রয়াত গনিখান চৌধুরী সাদু্ল্লাপুর মহাশ্মশানে দুটি ইলেকট্রিক চুল্লির সূচনা করেছিলেন। শ্মশানটি রয়েছে মালদহ জেলা পরিষদের অধীনে। দৈনিক গড়ে ২০টি করে শবদেহ দাহ করা হয় এই শ্মশানে। ইলেকট্রিক চুল্লিতে শবদেহ দাহ করতে বিল নেওয়া হয় ৫৬০ টাকা। গত বুধবার থেকে শ্মশানের কর্মীরা ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন।
এর জেরে এ দিনও চরম হয়রানি হতে হয়েছে সাধারণ মানুষকে। ইলেকট্রিক চুল্লির বিল দেওয়ার পাশাপাশি অন্য সামগ্রীর কিনতেও নাকাল হতে হয়েছে আত্মীয় পরিজনদের। তাঁদের অভিযোগ, কর্মীরা আগেই জেনে নিচ্ছেন খুচরো রয়েছে কি না। যদি খুচরো না থাকে তা হলে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এদিন ওদিক থেকে খুচরো টাকা জোগাড় করার পর দাহ করা হচ্ছে মৃতদেহ। শ্মশানের এক কর্মী বলেন, ‘‘সমস্ত জায়গায় ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট অচল। তাই আমরাও সেই টাকা নিতে ভয় পাচ্ছি। যদিও জেলা পরিষদের তরফে বলা হয়েছে, কয়েকটা দিন শ্মশানে ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট নিতে হবে।’’