ব্যাঙ্কে চুরির পর তদন্তে পুলিশ। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়।
জানলা ভেঙে একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কে ঢুকে ৯৪ লক্ষ টাকা নিয়ে পালাল একদল দুষ্কৃতী। মঙ্গলবার রাতে ইংরেজবাজার শহরের ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে সুকান্ত মোড় এলাকায় এই ঘটনার পরে বুধবার সকাল ১০টা নাগাদ ব্যাঙ্কের কর্মীরা ভিতরে ঢুকে ১০০ টাকার নোটের বান্ডিল ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখেন। তাঁরা দেখেন, স্ট্রংরুমের তালা ভাঙা। সেখানে রাখা একটি বাক্সের তালা ভাঙা রয়েছে।
খবর পেয়ে যান ব্যাঙ্কের ম্যানেজার অনুরাগ শর্মা। পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, ব্যাঙ্কের ঘরে থাকা ৬টি সিসিটিভি ক্যামেরার মুখ ঘুরিয়ে দেয় দুষ্কৃতীরা। ওই ক্যামেরায় তোলা ছবি যে ডিস্কের মাধ্যমে দেখা যায়, তা-ও কম্পিউটার থেকে খুলে নেওয়া হয়েছে বলে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের দাবি। মালদহের পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ব্যাঙ্কের রাতের নিরাপত্তা রক্ষীকে আটক করা হয়েছে। তদন্ত চলছে।”
ব্যাঙ্ক সূত্রের খবর, শিলিগুড়ি থেকে প্রতি সপ্তাহে দু’বার ট্রাঙ্কে করে টাকা নিয়ে যাওয়া হয় কলকাতায়। প্রতিবার যাতায়াতের সময়ে মালদহের ওই ব্যাঙ্কে রাখা হয়। সেই মতো মঙ্গলবার ব্যাঙ্কের স্ট্রংরুমে টাকা রাখা হয়। ৩টি বাক্সে প্রায় ২ কোটি টাকা ছিল। সেখানে দুষ্কৃতীরা একটি ট্রাঙ্কেরই তালা ভাঙে। শুধু ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোটের বান্ডিল নিয়ে উধাও হয়ে যায় তারা। ১০০ টাকার নোটের বান্ডিলগুলি ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলে গিয়েছে। ওই ব্যাঙ্কে একজন নৈশপ্রহরী থাকেন। তিনি সামনের দিকে থাকেন। অভিযোগ, সাইরেন বাজলেও তিনি কোনও গুরুত্ব দেননি। পুলিশ তাঁকে আটক করেছে।
তবে ব্যাঙ্কের টাকা সাধারণত ভল্টে রাখা বাধ্যতামূলক। কেন বিশাল অঙ্কের টাকা ওই রাতে ভল্টে রাখা হয়নি, তা নিয়ে পুলিশ প্রশ্ন তুলেছে। ব্যাঙ্কের ম্যানেজার অনুরাগ শর্মা বলেন, “আমি কোনও মন্তব্য করতে পারব না। ব্যাঙ্কের জনসংযোগ বিভাগ থেকে সব জানানো হবে।” পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, অন্তত ৪ জন দুষ্কৃতী ঘটনায় যুক্ত। ঘটনাস্থল থেকে মালদহ টাউন স্টেশনের দূরত্ব প্রায় ৫০০ মিটার। টাকা নিয়ে দুষ্কৃতীরা বাইরে পালিয়েছে কি না, তা তদন্ত করে দেখছে পুলিশ। জেলায় এর আগে কখনও এমন বিশাল পরিমাণে টাকা চুরির ঘটনা ঘটেনি। ফলে ঘটনাটি নিয়ে উদ্বিগ্ন শহরবাসী। ইংরেজবাজার পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান তথা স্থানীয় বাসিন্দা দুলাল সরকার বলেন, “এমন চুরি এর আগে জেলায় কখনও হয়েছে বলে আমার জানা নেই। ঘটনাটি খুবই উদ্বেগজনক। তবে পুলিশ তদন্ত করে দেখছে।”
পুলিশ ও ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা গিয়েছে, দিনের বেলা সাইরেনের সুইচ অফ করা থাকে। রাতের বেলা কেউ ভিতরে প্রবেশ করলে নিজে নিজেই তা বেজে ওঠে। তার শব্দ বাইরে থেকে অনায়াসে শোনা যায়। প্রায় দু’মিনিট ধরে ব্যাঙ্কের সাইরেন বেজেছে। সাইরেনটি স্ট্রংরুমের পাশের একটি ঘরে ছিল। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, দুষ্কৃতীরা ঢুকে ব্যঙ্কের সাইরেনটি বন্ধ করে দেয়। সাইরেন বাজার পরেও বাইরে থাকা নিরাপত্তা রক্ষী না যাওয়ায় রহস্য দানা বেঁধেছে। পুলিশ সূত্রে এও জানা গিয়েছে, নিরাপত্তারক্ষী জেরায় জানিয়েছেন, সাইরেন কিছু ক্ষণের জন্য বেজেছিল। তিনি ভেবেছিলেন, ইঁদুরের কারণে সাইরেন বেজেছে।
ঘটনার পর থেকে ব্যাঙ্কের সাটার নামানো থাকে। গ্রাহকেরা গেলে ফিরিয়ে দেওয়া হয় তাঁদের। বাইরে থাকা নিরপত্তারক্ষীরা জানান, লিঙ্ক না থাকায় এদিন কাজ কর্ম হচ্ছে না। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ ছাড়া কাউকে ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ফলে সাধারণ গ্রাহকদের ফিরে যেতে হয়েছে।
তবে গ্রাহকদের ঢুকতে না দেওয়া হলেও কর্তৃপক্ষ ঘটনার পর থেকে রাত পর্যন্ত ব্যাঙ্কেই থাকেন। এই ঘটনায় পুলিশ কর্তাদের একাংশ ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকেই দুষেছেন। তাঁদের অভিযোগ, ব্যাঙ্কে স্ট্রংরুম ছাড়া এত টাকা কী ভাবে রাখা হল?