ঘরেই পচছে আলু। —নিজস্ব চিত্র।
গত বছর আলু চাষে লাভের মুখ দেখে, সেই আশায় এ বার বেশি পরিমাণে আলু চাষ করে কপালে চিন্তার ভাজ আলু চাষিদের। ইতিমধ্যে জলপাইগুড়ির ধূপগুড়ি ব্লকেও ফটকটারি গ্রামে আলুর দাম না পেয়ে, গত ২৫ মার্চ নিত্যগোপাল বর্মন নামে এক আলু চাষি ফাঁসি দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। এই নিয়ে শাসক-বিরোধী তরজার মধ্যে আলুর দাম না পেয়ে দিশেহারা চাষিরা।
কৃষি দফতর সূত্রে জানা যায়, ধূপগুড়ি ব্লকে এবার ১২ হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় ৩ লক্ষ ৬০ হাজার মেট্রিক টন আলু চাষ হয়েছে। যা গত বারের চেয়ে অনেকটাই বেশি। বেশি ফলন হওয়াতে চাষিরা সব আলু হিমঘরে রাখতে না পেরে বাড়িতে রাখতে বাধ্য হয়েছেন। এক দিকে দাম তলানিতে, তার উপর বাড়িতে রাখায় অর্ধেক আলু পচে যাচ্ছে। তাতে চাষিরা বিপাকে পড়েছেন। তিন সপ্তাহ আগে আলুর দাম কিছুটা বাড়ার পর ফের জ্যোতি আলু চার টাকা কিলোগ্রামে দাঁড়িয়েছে। আলুর দাম আস্তে আস্তে বাড়ায় চাষির মুখে হাসি না ফুটলেও লোকসান একটু কম হওয়ার সম্ভাবনায় পাইকারদের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি এসেছে। ধূপগুড়ি ব্লকে আটটি হিমঘর রয়েছে। কিন্তু আলু উৎপাদনের যা হার, তাতে হিমঘরগুলিতে সব চাষিদের আলু রাখা সম্ভব নয়।
ধূপগুড়ির খোলাইগ্রামের চাষি নুর বাহার আলি ৮০ হাজার টাকা কৃষি ঋণ, স্ত্রীর সোনার অলংঙ্কার বন্ধক দিয়ে ১১ বিঘা জমিতে জ্যোতি আলু চাষ করেন। তিনি ৫০ কেজি করে প্রায় ৬০০ প্যাকেট বা ৩০০ কুইন্টাল আলু পান। যার মধ্যে একশো কুইন্টাল আলু হিমঘরে রাখতে পেরেছেন। ১০০ কুইন্টাল আলু আড়াই টাকা কিলোগ্রাম দরে পাইকারের কাছে বিক্রি করেছিলেন। বাকি একশো কুইন্টাল আলু হিমঘরে রাখতে না পারায় ফেলে দিয়েছেন। তাঁর বিঘা প্রতি ১৬-১৭ হাজার টাকা করে প্রায় এক লক্ষ আশি হাজার টাকা খরচ হয়। বর্তমানে হিমঘরে থাকা জ্যোতি আলুর দাম সাড়ে চার টাকা কিলোগ্রাম। এ ছাড়া হিমঘরে রাখার খরচ আছে। নুর বাহার আলি বলেন, “আলু চাষ করে এ বার পথে বসে গেলাম। কী করে ঋণ শোধ করব, কী করে স্ত্রীর গয়না ছাড়াব তা ভেবে পাচ্ছি না।’’
খোলাইগ্রামের সুনীল ভাওয়াল, মাগুরমারির কালিপদ সরকার, ফালাকাটার তারক বর্মন, গাদংয়ের জবেদ আলি, গধেয়ারকুঠির মহম্মদ রিয়াজুল হক বা ডাউকিমারির নরেন বর্মন-সহ ব্লকের আলু চাষিদের একই দশা। তাঁরা জানান, প্রত্যেকেই মহাজনের ঋণ বা কৃষি ঋণ কী ভাবে শোধ করবেন তা বুঝে উঠতে পারছেন না। অনেকে দিনমজুরিও শুরু করেছেন। পরে অন্য কোনও চাষের জন্যও টাকা নেই। আলুর দামও এখন বাড়িয়ে লাভ নেই। কারণ অর্ধেক পচে গিয়েছে। আবার অনেক আলু জলের দরে বিক্রিও হয়ে গিয়েছে।
ধূপগুড়ির সহকারী কৃষি আধিকারিক দেবাশিষ সর্দার বলেন, “বেশি ফলনের জন্য সব আলু হিমঘরে রাখার জায়গা হয়নি। অনেক চাষির আলু ঘরে থেকে পচে যাচ্ছে। এখন একটু দাম বেড়েছে। এই দামটা তোলার সময় পেলে চাষিদের ক্ষতি হলেও তা একটা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকত। বিষয়টার দিকে নজর রাখছি।”