প্রতীকী চিত্র।
পুলিশি হেফাজতে যুবকের মৃত্যুতে অভিযুক্ত পুলিশকর্মীদের গ্রেফতার ও কেন্দ্রীয় কোনও সংস্থাকে দিয়ে ওই যুবকের দেহ পুনরায় ময়নাতদন্তের দাবিতে বিজেপির আন্দোলনকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়াল। শুক্রবার দুপুরে বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু ও দলের উত্তর দিনাজপুর জেলা সভাপতি বিশ্বজিৎ লাহিড়ীর নেতৃত্বে দলের কয়েকশো নেতা ও কর্মী রায়গঞ্জ থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ শুরু করেন। আন্দোলনকারীরা থানার প্রধান গেটের একাধিক লোহার ব্যারিকেড উল্টে ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করেন। পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। তবে পুলিশ সূত্রের খবর, এদিন যুবকের দেহ পুনরায় ময়নাতদন্তের প্রক্রিয়া শুরু করে পুলিশ। কিন্তু নথি তৈরি হতে সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় শেষপর্যন্ত ময়নাতদন্ত হয়নি। অন্য দিকে, ইসলামপুরে মহকুমাশাসকের দফতরের সামনে গণতন্ত্র বাঁচাও দিবস কর্মসূচি পালন করে বিজেপির মহিলা মোর্চা। সংগঠনের জেলা সভানেত্রী দোলা মোদকের নেতৃত্বে সদস্যারা ইসলামপুরের মহকুমাশাসকের দফতরে ঢোকার চেষ্টা করেন। পুলিশ অবশ্য মহকুমাশাসকের দফতরের সামনেই আন্দোলনকারীদের আটকে দেয়।
বুধবার রাতে রায়গঞ্জ থানায় পুলিশ হেফাজতে ইটাহার থানার নন্দনগ্রাম এলাকার বাসিন্দা অনুপকুমার রায় (২৪) নামে এক বিজেপি কর্মীর মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ। বৃহস্পতিবার রাতে রায়গঞ্জ থানার পাঁচ পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধে পুলিশ সুপার সুমিত কুমারের কাছে অনুপকে শারীরিক অত্যাচার করে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন অনুপের মা গীতা। এই পরিস্থিতিতে অভিযুক্ত ওই পাঁচ পুলিশকর্মীকে ক্লোজ় বা সাময়িক বরখাস্ত করে কেন ঘটনার তদন্ত শুরু করছে না পুলিশ, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
সুমিত বলেন, “থানায় জিজ্ঞাসাবাদের সময় ছিনতাইয়ে অভিযুক্ত ওই যুবক অসুস্থ হয়ে মারা গিয়েছেন। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে রক্তক্ষরণ হয়ে মস্তিস্ক নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ার কারণেই ওই যুবকের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। পুলিশের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ তোলা হচ্ছে।”
রায়গঞ্জ থানার সামনে সায়ন্তন বলেন, “বিজেপি করার অপরাধে পুলিশ অনুপকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে পিটিয়ে খুন করেছে। এর আগে একই ভাবে দাড়িভিটে দুই ছাত্রকে, হেমতাবাদের বিধায়ক দেবেন্দ্রনাথ রায়কে ও চোপড়ার কিশোরীকে খুন করা হল। প্রতিটি খুনের পিছনে পুলিশ ও তৃণমূল জড়িত রয়েছে। আমরা অনুপবাবুর মৃত্যুর সিবিআই তদন্তের দাবিতে আদালতে যাচ্ছি। সেই সঙ্গে, প্রতিটি মৃত্যুর ঘটনার সিবিআই তদন্তের দাবিতে দলের তরফে আন্দোলন জারি থাকবে।” তবে এ দিন রায়গঞ্জ ও ইসলামপুরের আন্দোলনে চোপড়ায় তরুণের মৃত্যু নিয়ে বিজেপি নেতারা নিশ্চুপ ছিলেন। দোলার বক্তব্য, “চোপড়ায় কিশোরী খুনে অভিযুক্তরা তৃণমূলের কর্মী হওয়ায় পুলিশ তাঁদের গ্রেফতার না করে বিজেপি কর্মী ও সমর্থকদের গ্রেফতার করেছে। অবিলম্বে তাঁদের নিঃশর্ত মুক্তি ও বিজেপিপন্থীদের খুনের ঘটনায় সিবিআই তদন্ত না করা হলে সংগঠনের তরফে জেলাজুড়ে আন্দোলন হবে।”
ইসলামপুরের পুলিশ সুপার সচিন মক্কর বলেন, “পুলিশ আইন মেনেই চোপড়ায় কিশোরী ও তরুণের মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত ও আইনানুগ পদক্ষেপ করেছে।” জেলা তৃণমূল সভাপতি কানাইয়ালাল আগরওয়াল বলেন, “জেলায় বিভিন্ন মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে পুলিশ ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলে বিজেপির রাজনীতি নতুন কিছু নয়।”