তিন দিনের মধ্যে শিলিগুড়ির গ্রামীণ এলাকায় যথা সম্ভব বিভিন্ন প্রকল্পের শিলান্যাস, উদ্বোধন সেরে ফেলতে চাইছে রাজ্যের শাসক দল, তৃণমূল কংগ্রেস। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ৩ অক্টোবর হতে চলেছে শিলিগুড়ি মহকুমা পঞ্চায়েত নির্বাচন। আগামী মাসের ৩ তারিখ ভোটের বিজ্ঞপ্তি জারি হতে পারে। এই অবস্থায় ভোটের প্রস্তুতি পুরোমাত্রায় শুরু করে দিল তৃণমূল। রবিবার শিলিগুড়ির হিলকার্ট রোডের দলীয় দফতরে শিলিগুড়ির চারটি ব্লকের সভাপতি, অঞ্চল সভাপতিদের নিয়ে বৈঠক হয়েছে। উপস্থিত ছিলেন জেলা সভাপতি তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব।
দলীয় সূত্রের খবর, আগামী তিনদিন কোথায় কোথায় কোন শিলান্যাস, অনুষ্ঠান হবে তা ব্লক সভাপতি এবং অঞ্চল সভাপতিদের বিস্তারিতভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। সরকারের ওই প্রকল্পগুলি নিয়ে প্রচারের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। জেলা সভাপতি গৌতমবাবু বলেন, ‘‘অক্টোবর মাসের শুরুতেই ভোট হচ্ছে। সেপ্টেম্বরের শুরুতেই বিজ্ঞপ্তি হওয়ার কথা। সেই হিসাবে হাতে বেশিদিন সময় নেই। তাই আমরা চূড়ান্ত হওয়া বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের শিলন্যাস, উদ্বোধন করে দেব।’’ দ্রুততার সঙ্গে নেওয়া এই সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে গৌতমবাবুর যুক্তি, ‘‘চারটি ব্লকেই বহু প্রকল্প ঠিকঠাক হয়ে গিয়েছে। কিছু কাজের ওয়ার্কওর্ডারের মুখে রয়েছে। কিন্তু ভোট ঘোষণা গেলে তা আর করা যাবে না। এতে কাজগুলি পিছিয়ে পড়বে। তাতে এলাকাগুলিই উন্নয়নের থেকে এখন বঞ্চিত হবে। আমরা তা চাই না।’’
তৃণমূল এবং প্রশাসনিক সূত্রের খবর, আজ, সোমবার সকালে খড়িবাড়ির রানিগঞ্জে বাতাসি এলাকায় কয়েকটি প্রকল্পের উদ্বোধন, শিলান্যাস করবেন গৌতমবাবু। এর পরে দুপুরে তিনি ফাঁসিদেওয়া, জয়ন্তিকা চা বাগান, লিউসিপোখরি এলাকায় পরপর একাধিক প্রকল্পের শিলান্যাস করবেন। এছাড়াও আগামী দুইদিন রাস্তা, দেওয়াল, বানিজ্যিক ভবন-সহ একাধিক প্রকল্পের শিলান্যাসের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা হয়েছে। এরমধ্যে বাগডোগরায় এশিয়ান হাইওয়ের জন্য পুনর্বাসন পাওয়া ব্যবসায়ীদের জন্য বাণিজ্যিক ভবনের শিলান্যাসও রয়েছে। প্রতিটি এলাকায় অনুষ্ঠানে জমায়েত এবং সার্বিক প্রচারের জন্যও স্থানীয় নেতাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিনের বৈঠকে প্রকল্পের শিলান্যাস ছাড়াও প্রার্থী বাছাই নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দলীয় সূত্রের খবর, এদিন গোষ্ঠী কোন্দল এড়াতে বুথস্তর থেকে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নিয়ে পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থী বাছাই করার উপর ব্লক নেতাদের জোর দেওয়ার নির্দেশ দেন তৃণমূল নেতৃত্ব। ঠিক হয়েছে, আগামীতে ব্লকে ব্লকে গিয়ে বৈঠক করে গ্রাম পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হবে। তবে মহকুমা পরিষদের এবারের ৯টি আসনে গ্রামীণ নেতৃত্বের পরামর্শ নিয়ে প্রার্থী ঠিক করে তা রাজ্য নেতৃত্বের অনুমোদন নিয়ে ঠিক হবে।
দলের একাংশ নেতাদের দাবি, নির্বাচন দোরগড়ায় এসে গিয়েছে। এখনও মহকুমা পরিষদের প্রার্থী ঠিকমত বাছাই হয়নি। এর পরে রাজ্য নেতৃত্বের অনুমোদন লাগবে। তা ছাড়া কোনও ব্লকই এখনও লিখিতভাবে কোনও প্রার্থী তালিকা জমা দেয়নি। এদিন তা দ্রুত করা শুধু নয়, সর্বসম্মতভাবে বুথস্তর থেকে করার কথা বলা হয়।
দলীয় সূত্রের খবর, মহকুমা ফাঁসিদেওয়া, মাটিগাড়া, নকশালবাড়ি এবং খড়িবাড়ি প্রতিটি ব্লকেই কমবিস্তর দলের গোষ্ঠী কোন্দল রয়েছে বলে অভিযোগ। তা সামাল দিতেই বুথস্তরের রিজিউলিউশন নিয়ে প্রার্থী ঠিক করার কথা বলা হয়েছে। এবারে মহকুমার ৯টি আসন ছাড়া ৪টি পঞ্চায়েত সমিতি এবং ২২টি গ্রাম পঞ্চায়েতের ভোট হবে। এরমধ্যে পঞ্চায়েতের আসন সংখ্যা ৪৬২টি। তারমধ্যে অর্ধেকই প্রায় মহিলা আসন। আবার বহু সংরক্ষিত আসনও রয়েছে। সেখানে শংসাপত্র ঠিকঠাক দেখে প্রার্থী বাছাই করতে হবে। জেলার কয়েকজন নেতা জানান, প্রার্থী বাছাই-র পরেই প্রচার শুরু হবে। তাই দ্রুত প্রার্থী ঠিক না হলে প্রচারের ক্ষেত্রে শাসক দল হিসাবেও পিছিয়ে থাকতে হবে। সেই সঙ্গে সামাল দিতে হবে টিকিট পরবর্তী পর্যায়ের ক্ষোভ-বিক্ষোভও।
এই বিষয়ে গৌতমবাবু অবশ্য বলেন, ‘‘আগে ২-৩ দফায় বৈঠক হয়েছে। এদিন কোন ব্লকের প্রার্থী তালিকা, প্রস্তুতি কী পর্যায়ে রয়েছে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে একাধিক দাবিদার রয়েছে টিকিটের। সবদেখে সেরা প্রার্থীকেই বাছাই করা হচ্ছে। আগামী কিছু দিনের মধ্যে তা চূড়ান্ত হয়ে যাবে।’’