উত্তর দিনাজপুরের হেমতাবাদ থানা এলাকায় পর পর চুরি ও চুরির ঘটনায় জড়িত দুষ্কৃতীরা গ্রেফতার না হওয়ায় আন্দোলনে নেমেছিলেন এলাকার ব্যবসায়ীরা। সেই আন্দোলনের একমাসের মাথায় হেমতাবাদ থানার ওসি মন্টু বর্মনকে বদলি করে দিলেন জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ ওয়াকার রেজা। সাব ইন্সপেক্টর মন্টুবাবুকে ইসলামপুর থানার সেকেন্ড অফিসারের পদে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, তাঁর জায়গায় হেমতাবাদ থানার ওসির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে শিক্ষানবিশ আইপিএস অফিসার সি এইচ রামকৃষ্ণকে। কোনও আইপিএস অফিসারকে থানার দায়িত্ব দেওয়ার এই ঘটনা জেলায় নজিরবিহীন। পুলিশ সুপার বলেন, “নিয়মানুযায়ী প্রথম তিনমাস থানার দায়িত্বে থাকতে হয় আইপিএস অফিসারদের।সেদিক থেকে এটা নতুন কিছু নয়।”
চাকুলিয়া থানার সাব ইন্সপেক্টর জয়দেব বর্মন ও ইসলামপুর থানার সাব ইন্সপেক্টর মনোজিত্ দাসকেও বদলি করা হয়েছে। দু’জনকেই হেমতাবাদ থানায় বদলি করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখার কাজে হেমতাবাদ থানার প্রাক্তন ওসি মন্টুবাবুর ভূমিকায় অসন্তুষ্ট হয়ে তাঁকে বদলি করেছেন পুলিশ সুপার। অন্যদিকে, চাকুলিয়া থানার ওসির পলাশবাবুর সঙ্গে ওই থানারই সাব ইন্সপেক্টর জয়দেববাবুর দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা গোলমালের জেরে আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখার কাজ ব্যহত হচ্ছিল। তাতেই বিরক্ত হয়ে জয়দেববাবুকে বদলির নির্দেশ দেন পুলিশ সুপার। ওই ঘটনায় পলাশবাবুর বিরুদ্ধে ওঠা বিভিন্ন অভিযোগের তদন্ত করছেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মৃণাল মজুমদার। গত ১৬ মার্চ পুলিশ সুপার একইসঙ্গে মন্টুবাবু, জয়দেববাবু, মনোজিতবাবুকে বদলির নির্দেশ জারি করেন। পরদিন তাঁরা কাজে যোগ দেন।
পুলিশ সুপার অবশ্য ওই তিন পুলিশ অফিসারের বদলির বিষয়ে স্পষ্ট করে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেন, “আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে সরকারি নিয়ম মেনেই কয়েকজনকে বদলি করা হয়েছে।”
মন্টুবাবু এই বিষয়ে বলেন, “নির্দেশ পালন করব। বদলির বিষয়ে কিছু বলার নেই।” পলাশবাবুর কথায়, “এক জায়গায় কাজ করতে গেলে সহকর্মীদের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি হতেই পারে।” জয়দেববাবুর কথায়, “পুলিশ সুপার যা নির্দেশ দিয়েছেন, তা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে পারি না।”
উল্লেখ্য, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে হেমতাবাদ থানার এলাকার দু’টি মোবাইল ফোনের দোকানে ও একটি অলঙ্কারের দোকানের টিনের চালা ও দরজা ভেঙে দুষ্কৃতীরা লক্ষাধিক টাকার সামগ্রী চুরি করে পালায় বলে অভিযোগ। ব্যবসায়ীদের দাবি, জানুয়ারি মাস থেকে মার্চ পর্যন্ত তিনমাসে হেমতাবাদের বিভিন্ন এলাকার দোকান ও বাড়ি মিলিয়ে ১০টি চুরির ঘটনা ঘটলেও, একজন দুষ্কৃতী ছাড়া বাকিদের গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এই পরিস্থিতিতে পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে ১৯ ফেব্রুয়ারি ব্যবসায়ীরা হেমতাবাদ এলাকার রাজ্য সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান। গত ২১ ও ২২ ফেব্রুয়ারি ৪৮ ঘন্টা ব্যবসা বনধ পালন করেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীদের তরফে হেমতাবাদ থানার তত্কালীন ওসি মন্টুবাবুর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ জানিয়ে তাঁর বদলি দাবি জানানো হয়।
পশ্চিম দিনাজপুর চেম্বার অব কমার্সের সাধারণ সম্পাদক জয়ন্ত সোম বলেন, “পুলিশ সুপার ওসিকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ায় আমরা খুশি ঠিকই। তবে নতুন ওসি যাতে দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করতে তত্পর হন ও সার্বিক আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে সক্রিয় থাকেন, সেই বিষয়েও পুলিশ সুপারকে নজর রাখতে হবে।”