পরিচয়ের খোঁজে ভরসা ক্যামেরাও

তবে পুলিশ জানিয়েছে, মহিলার পরিচয় জানতে ও ঘটনার কিনারা করতে একাধিক বিষয়ে তদন্ত চালানো হচ্ছে। তদন্তে পৃথক তিনটি দল গঠন করা হয়েছে। রবিবার পুলিশের একাধিক দল ঘটনাস্থল সংলগ্ন এলাকায় তদন্ত চালায়। একাধিক সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে তারা। 

Advertisement

জয়ন্ত সেন

ধানতলা শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৩:০৩
Share:

তদন্ত: ঘটনাস্থল সংলগ্ন এই কারখানার সিসিটিভির ফুটেজই খতিয়ে দেখে পুলিশ। নিজস্ব চিত্র

তিন দিন কেটে গেলেও অগ্নিদগ্ধ মহিলার পরিচয় অজ্ঞাতই রয়ে গিয়েছে। ওই ঘটনায় কে বা কারা জড়িত রয়েছে তা নিয়েও অন্ধকারে পুলিশ। ক্ষোভ বাড়ছে বিভিন্ন মহলে।

Advertisement

তবে পুলিশ জানিয়েছে, মহিলার পরিচয় জানতে ও ঘটনার কিনারা করতে একাধিক বিষয়ে তদন্ত চালানো হচ্ছে। তদন্তে পৃথক তিনটি দল গঠন করা হয়েছে। রবিবার পুলিশের একাধিক দল ঘটনাস্থল সংলগ্ন এলাকায় তদন্ত চালায়। একাধিক সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে তারা।

পুলিশ সূত্রে খবর, বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে বিজ্ঞাপন দেওয়ার পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়ায় ওই মহিলার বিবরণ দিয়ে প্রচারও চলছে। তাঁর পোশাক এবং ডান হাতে ‘জে প্লাস এম’ লেখা দেখে তদন্তকারীদের ধারণা, তিনি মালদহ সংলগ্ন বিহার বা ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দাও হতে পারেন। সেই সূত্রে ওই দুই রাজ্যের পুলিশের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছে জেলা পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে তিন-চার কিলোমিটারের মধ্যে থাকা বিভিন্ন সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ, সংলগ্ন বিভিন্ন গ্রামে বাড়ি বাড়ি গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ, সম্ভাব্য ঘটনার সময় ধরে ঘটনাস্থল সংলগ্ন এলাকায় মোবাইল ফোনের কল-রেকর্ড খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যদিও এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত কোন সূত্র পুলিশ পায়নি বলে জানা গিয়েছে।

Advertisement

এ দিকে, মহিলার দগ্ধ দেহ উদ্ধারের ঘটনায় মালদহ জেলায় প্রতিবাদ অব্যাহত। এ দিন দুপুরে ইংরেজবাজার শহরে বিক্ষোভ মিছিল করে বিজেপির ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ। জেলা ছাত্র পরিষদের পক্ষ থেকে এ দিন বিকেলে ইংরেজবাজার শহরের রথবাড়ি মোড়ে গনি খান চৌধুরীর মূর্তির পাদদেশে বিক্ষোভ সভা করা হয়। এদিন দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রদীপ জ্বালান বিজেপি নেত্রী শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী। চারটি খুঁটি চার দিকে পুঁতে সেখানে কালো কাপড় বেঁধে দেন তিনি।

বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা নাগাদ ইংরেজবাজার শহরঘেঁষা কোতোয়ালি গ্রাম পঞ্চায়েতের ধানতলা গ্রামের আমবাগানে অজ্ঞাতপরিচয় এক মহিলার অর্ধনগ্ন দগ্ধ মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সে দিনই বিকেলে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়। পুলিশের দাবি, ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে ধর্ষণের প্রমাণ মেলেনি। তবে চূড়ান্ত রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত খুনের আগে ধর্ষণ বা যৌন নিগ্রহ করা হয়েছিল কিনা তা বলা সম্ভব নয়।

দেহ উদ্ধারের তিন দিন পরেও ওই মহিলার পরিচয় জানা যায়নি। ওই ঘটনায় কে বা কারা জড়িত তা নিয়েও অন্ধকারে পুলিশ। তবে পুলিশ সূত্রে খবর, বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ঘটনার তদন্ত করা হচ্ছে। ইংরেজবাজার থানার আইসি অমলেন্দু বিশ্বাস-সহ আরও দুই পুলিশ আধিকারিককে নিয়ে পৃথক তিনটি তদন্তকারী দল গঠন করা হয়েছে। জানা গিয়েছে, ঘটনাস্থলে যাওয়ার যতগুলি রাস্তা রয়েছে, তার অন্তত তিন-চার কিলোমিটার আগে থেকে ঘটনাস্থল পর্যন্ত যে সব বাড়ি, স্কুল বা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে, সেগুলির ফুটেজ সংগ্রহ করা হচ্ছে।

পুলিশ জানায়, এ দিন দুপুরে তদন্তকারীদের একটি দল ধানতলা সংলগ্ন গনিপুরের একটি বেসরকারি স্কুলের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখে। তার পরে ঘটনাস্থল সংলগ্ন মিলিক আরাপুরের একটি স্টিলের আলমারি তৈরির কারখানার বাইরে থাকা তিনটি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে তারা।

পুলিশ সূত্রে খবর, বুধবার রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ একটি মোটরবাইকে করে দু’জনকে আম বাগানের দিকে যেতে দেখা গিয়েছে একটি ফুটেজে। তবে ওই বাইক সওয়ারিদের সঙ্গে মহিলার দেহ উদ্ধারের যোগ রয়েছে কিনা, তা নিয়ে অবশ্য নিশ্চিত নন তদন্তকারীরা। তদন্তকারী এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, ‘‘বেশির ভাগ ক্যামেরাই নিম্ন মানের থাকায় ছবির স্পষ্টতা কম।’’ পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই রকম পোশাকে কোনও মহিলাকে ঘটনার অন্তত দু-তিনদিন আগেও মালদহ বা কোর্ট স্টেশনে দেখা গিয়েছে কিনা তা জানতে দু’টি স্টেশনের সিসিটিভি ফুটেজও দেখা হচ্ছে। ওই পোশাকে কাউকে এলাকার কেউ দেখেছেন কিনা, তা নিয়ে পুলিশ সংলগ্ন সমস্ত গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, ‘‘আমরা সমস্ত দিক তদন্ত করে দেখছি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement