কখনও ‘স্যাটার্ডে নাইট ফিভার’, কখনও ‘ডেভিল পার্টি’ কখনও বা ‘সানডে ব্লাস্ট’। এরকমই নামের আড়ালে চলে পার্টি। আর সেখানেই চলে দেদার মাদক সরবরাহ। শিলিগুড়িতে নানা হুকা বারে এভাবেই মাদক সেবনের কারবার বেড়ে উঠছে বলে অভিযোগ আসছে পুলিশের কাছে। পুলিশ সূত্রের খবর, ওই অনুষ্ঠানে গ্রাহকদের তালিকায় ক্রমশই ভিড় বাড়ছে কলেজ পড়ুয়া থেকে তরুণ চাকুরিজীবীদের। গত কয়েক বছরে শহরে পরপর হুকা বার গজিয়ে উঠেছে, সেরকমই কিছু জায়গা থেকে সম্প্রতি নানা বেআইনি কাজের অভিযোগ ওঠা শুরু করেছে।
এ বার হুকা বারের আড়ালে মাদক বিক্রির অভিযোগ সরাসরি পৌঁছেছে শহরের পুলিশ কমিশনার ভরতলাল মিনার কাছে। গত সপ্তাহেই প্রতিটি থানার ওসি, আইসি’দের হুকা বারের বিরুদ্ধে লাগাতার অভিযানের নির্দেশ দিয়েছেন কমিশনার। গোয়েন্দা শাখাকেও (ডিডি) বাড়তি নজরদারির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গত সপ্তাহে সেবক রোড ও শালবাড়ি এলাকার দু’টি হুকা বার বন্ধ করেছে পুলিশ। কোনও ধরণের হুকা বার চলবে না বলে পুলিশ কমিশনার অফিসারদের জানিয়ে দিয়েছেন। বিশেষ করে শনিবার, ররিবার বাড়তি নজরদারির কথা বলা হয়েছে।
হুকা বারে নিয়মিত যাতায়াতকারীরা অনেকেই জানাচ্ছেন, শালবাড়ি, সেবক রোড, দুই মাইল এলাকার বেশ কিছু শপিং মল ও রেস্তরাঁয় হুকা বার চলে। অন্তত ২০টি হুকাবার শহরে সক্রিয়। হুকার জলে নানা ধরণের ফলের রস পানীয় ব্যবহার করা হয়। তাতে মাদক ট্যাবলেট বা মদ মেশানো হচ্ছে বলে অভিযোগ। তাতে নেশা বেশি হওয়ায় ভিড় বাড়ছে গ্রাহকদেরও। পাশাপাশি আইন ভেঙে ২১ বছরের নীচে থাকা কিশোর-কিশোরীদের হুকা বারে ঢুকতে দেওয়ার প্রবণতাও বেড়েছে। পুলিশ কমিশনারের কথায়, ‘‘হুকা খাওয়ার কথা বলে কোনও বেআইনি কাজকর্ম বরদাস্থ করা হবে না। পুলিশ লাগাতার অভিযান চালাবে।’’
৫০ টাকা থেকে ৩-৫ হাজার টাকার নানা স্বাদের হুকা মেনু কার্ডে রাখা হচ্ছে। সামনে সাধারণ রেঁস্তোরা থাকলেও গ্রাহক বুঝে হুকা সরবরাহ করা হচ্ছে। হুকার রকমফেরও রয়েছে, ‘সোলো’, ‘টুওয়ে’ এবং ‘থ্রিসাম’- নামের মাধ্যমে একজন, দু’জন বা তিনজনের হুকা খাওয়ার ব্যবস্থার কথা বোঝানো হয়। রেস্তরাঁর কর্মীদের একাংশ জানাচ্ছেন, বেশি বিক্রি হচ্ছে ফ্রুটবেস এবং ওয়াইন বেস হুকা।
সেবক রোডের একটি হুকা বারের কাজ করা এক কর্মী জানাচ্ছেন, প্রথমবার চারকোলের জন্য ২০০ থেকে ৫০০ টাকা নেওয়া হয়। পরবর্তীতে আরও চারকোলের জন্য ১০০ টাকা নেওয়া হয়। এক দফায় চারকোল দিলে দু’জন তা আধঘণ্টা খেতে পারেন। কেউ কেউ এসে জলের মদ, বিয়ার, ওয়াইন মেশাতে বলেন। অনেকে ট্যাবলেট দেন। তাতে নেশা বেশি হয়ে থাকে। মধ্যবয়সী এবং কলেজের ছেলেমেয়েরাই বেশি ভিড় করছে। প্রচুর মহিলাও আসছেন।
কমিশনারেটের এক কর্তা জানান, হুকা বারগুলি বন্ধ তো বটেই প্রয়োজনে এর পরে হুকা বারে আসা গ্রাহকদের গ্রেফতার করা হবে।