—প্রতীকী চিত্র।
ডাবগ্রাম-ফুলবাড়িকে ঘিরে রাজ্যের শাসক দলের নেতা-নেত্রীদের জমি, সম্পত্তির খোঁজ শুরু হয়ে গেল। পুলিশ-প্রশাসন সূত্রের খবর, বিশেষ করে জমি দখলের অভিযোগের মামলায় গ্রেফতার হওয়া দেবাশিস প্রামাণিক এবং গৌতম গোস্বামীদের অনুগামীদের সঙ্গে ফুলবাড়ির নেতাদের একাংশের সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া চলছে। তাঁদের মধ্যে পঞ্চায়েত স্তরের একাধিক নেতা রয়েছেন। কয়েকজন জনপ্রতিনিধি আছেন। আগে জনপ্রতিনিধি ছিলে,ন এমন নেতার নামও তালিকায় রয়েছে।
কলকাতায় রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ স্তর থেকে নির্দেশ পেয়ে, শিলিগুড়ি পুলিশ এবং জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসনের আধিকারিকেরা ওই খোঁজ শুরু করেছেন। এর আগে, এক শ্রমিক নেতার নাম করে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছিল। এ বার ফুলবাড়ি এলাকার নেতাদের সম্পর্কে জানতে চাওয়া হল। শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের অন্যতম শীর্ষ এক কর্তা বলেন, ‘‘শাসক দলের একাংশের কাজকর্ম নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে নানা কথা শোনা গিয়েছে। সেগুলি এ বার নবান্নে পৌঁছে গিয়েছে। তার পরেই সেখান থেকে খোঁজখবর নিয়ে রিপোর্ট পাঠাতে বলা হয়েছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট জমা পড়বে।’’
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি এলাকায় ২০১৯ সালের পর থেকে শাসক দলের হার শুরু হয়েছে। লোকসভা, বিধানসভার পরে, এলাকার চারটি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে একটি গ্রাম পঞ্চায়েতের দখলও বিজেপি পেয়েছে। শাসক দলের একাংশের বিরুদ্ধে জমির বেআইনি কারবার, তোলাবাজি, ইচ্ছে মতো বাজার বসানো, সীমান্তে অবৈধ ব্যবসা থেকে শুরু করে নানা উপায়ে আয় করা, সরকারি জমি দখল করার মতো নানা অভিযোগ রয়েছে। তাতে স্থানীয় মানুষের একটা বড় অংশ তৃণমূলের থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন বলে দল সূত্রেও খবর।
তৃণমূল সূত্রের দাবি, দলের প্রাক্তন ব্লক সভাপতি দেবাশিস প্রমাণিক, সহসভাপতি গৌতম গোস্বামীকে ঘিরেও একটি ‘বৃত্ত’ তৈরি হয়েছিল। দল, প্রশাসনের অন্দরে অবাধ বিচরণের সুযোগ থাকায়, জমির ব্যবসা থেকে নানা ভাবে টাকা আয়ের ক্ষেত্রে দলের একাংশ সক্রিয় হয়েছে বলে অভিযোগ। নিয়মিত ব্যক্তিগত মালিকানাধীন জমির মধ্যে ঢুকে পড়ে টাকা আদায়ের অভিযোগ এলাকায় বেড়েই চলেছিল। দলের কয়েক জন নেতা জানান, জমি দখল করার ঘটনা পর পর বেড়েই যাচ্ছিল। জাল খতিয়ান, নথিপত্র তৈরি করে জমির দখল রাখা হয়। তার পরে, জমি দখলমুক্ত করা বা দুই পক্ষের সমস্যা মিটিয়ে দেওয়ার নাম করে টাকা আদায় নিয়মিত ঘটনা হয়ে গিয়েছিল বলে অভিযোগ।
তদন্তকারী পুলিশ আধিকারিকেরা জানান, ফুলবাড়িতে নেতাদের ছত্রছায়ায় কিছু লোক দিনের পর দিন ‘ফুলেফেঁপে’ উঠেছে বলে অভিযোগ। একেবারে নিচুতলার সাধারণ কর্মী হিসাবে জীবন শুরু করলেও, জীবনধারা পাল্টে গিয়েছে বেশ কয়েক জনের। গত কয়েক বছরে তাঁদের বাড়ি, ফ্ল্যাট, গাড়ি হয়েছে। দামি পোশাক, বিমানে বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত নিয়মিত দেখে আয় বেড়েছে বলে বোঝা যাচ্ছে। সব আয়ের সূত্র ঘুরে ফিরে জমির অবৈধ কারবারে গিয়ে শেষ হয়েছে। এশিয়ান হাইওয়ে, ইস্ট-ওয়েস্ট করিডর, ‘ভোরের আলো মেগা টুরিজ়ম হাব’-কে ঘিরে দিনের পর দিন জমির অবৈধ ব্যবসার দৌলতে তৃণমূলের নেতাদের একাংশের পকেট ভরেছে বলে মনে করা হচ্ছে। সে সবই এ বার খতিয়ে দেখা শুরু হয়েছে।
তৃণমূলের জেলা স্তরের একাধিক নেতা-নেত্রীর দাবি, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জমির অবৈধ কারবার নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করার পরে, প্রশাসন-পুলিশকে এ ব্যাপারে যা-যা করার, করতে বলা হয়েছে।