উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ। —ফাইল চিত্র।
‘হুমকি-প্রথা’ নিয়ে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে যাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল, তাদের মধ্যে অনেককেই ক্যাম্পাসে ঘোরাফেরা করতে দেখা যাচ্ছে। এক আরএমও-সহ এক জন করে ইনটার্ন এবং হাউজ়স্টাফ এবং ‘উত্তরবঙ্গ লবি’র অন্যতম মাথা বলে পরিচিত এক প্রাক্তনীর উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের ক্যাম্পাসে ঢোকা নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। তিন জন হাউজ়স্টাফ এবং এক জন ইনটার্নকে বরখাস্ত করা হয়। পাঁচ জন পড়ুয়াকে একটি সিমেস্টার থেকে সাসপেন্ড করা হয়। তাঁদের হস্টেল খালি করে ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যেতে বলা হয়েছিল। তাঁদের একাংশকে ক্যাম্পাসে ফের দেখা যাচ্ছে বলে অভিযোগ। সে কারণে তদন্ত কমিটি গড়ে অভিযোগ খতিয়ে দেখার পরে, কলেজ কাউন্সিলের বৈঠকে যা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল তা কতটা কার্যকরী হয়েছে, তা নিয়ে সন্দেহ দানা বেঁধেছে।
বিশেষ করে যারা ‘হুমকি-প্রথার’ বিরুদ্ধে সরব হয়ে আন্দোলনে নেমেছিলেন তাঁরা উদ্বিগ্ন। অধ্যক্ষ ইন্দ্রজিৎ সাহা বলেন, ‘‘নবান্নের বৈঠকের পরে সমস্ত সিদ্ধান্ত স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তাকে জানানো হয়েছে। এ বিষয় কী ব্যবস্থা হবে, তা নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত এখনও স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তার দফতর থেকে জানানো হয়নি। ফলে, তা কার্যকর হবে কি না, তা নিয়ে নির্দেশ পেলে সে মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
গত ৯ সেপ্টেম্বর কলেজ কাউন্সিলের বৈঠকে ওই সমস্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে কার্যকর করা হয়েছিল। পরে নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্টের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী অধ্যক্ষদের সতর্ক করে জানিয়েছিলেন কী ভাবে তাঁরা নিজেরাই এ সব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন? সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে স্বাস্থ্য দফতরের মাধ্যমে মুখ্য সচিবকে জানাতে হবে। রাজ্য সরকার সম্মতি দিলে তবেই তা প্রয়োগ করা যাবে। এর পরেই উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ কলেজ কাউন্সিলের বৈঠকের ওই সমস্ত সিদ্ধান্ত স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তার মাধ্যমে রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে পাঠান। তবে সেখান থেকে কোনও নির্দেশ এখনও আসেনি বলে দাবি।
বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ‘হুমকি-প্রথা’য় জড়িত থাকার অভিযোগে যে ১০ জনকে সাসপেন্ড করা হয়েছিল, তাঁদের ইতিমধ্যেই ক্লাস করার অনুমতি দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। এ সব উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে আন্দোলনকারীদের দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছে। তাঁদের তরফে শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘‘তদন্ত কমিটি গড়ে খতিয়ে দেখে কলেজ কাউন্সিলের বৈঠকে নিয়ম মাফিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছিল। স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তার দফতর নতুন করে কিছু না জানানো পর্যন্ত তা কার্যকর থাকার কথা। কিন্তু আমরা অবাক হয়ে দেখছি, যাঁদের ক্যাম্পাসে ঢোকার কথা নয়, সাসপেন্ড করা হয়েছে, সে সব ওই সমস্ত হাউজ়স্টাফ, ইনটার্ন, পড়ুয়ারা ক্যাম্পাসে ঘুরছেন। একাংশ কাজ করছেন।’’ তাঁর দাবি, তারা বিষয়টি নজরে রাখছেন। অভিযুক্তদের কোনও ভাবে ঢোকানোর চেষ্টা হলে বাধা দেওয়া হবে। প্রয়োজনে, ফের আন্দোলন হবে। পড়ুয়া হিরন্ময় রায় বলেন, ‘‘অভিযুক্ত আরএমও স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশেই নাকি কাজে যোগ দিয়েছেন। সাসপেন্ড হওয়া পড়ুয়াদেরও দেখা যাচ্ছে। পরিস্থিতি দেখে আমরা দরকার হলে
আন্দোলনে নামব।’’