গোটা গ্রামেই এই একই সমস্যা। গ্রামের অধিকাংশ বাড়িতেই এ ভাবে বাঁশ দিয়ে ২০-২৫ ফুট উঁচু সিঁড়ি করা হয়েছে মোবাইলে কথা বলার জন্য।
মোবাইলে কথা বলতে হলে উঠতে হয় মাটি থেকে প্রায় ২৫ ফুট উপরে। আত্মীয়-পরিজন বা প্রয়োজনে কারও সঙ্গে কথা বলতে ঘর থেকে বেরিয়ে বাঁশের সিঁড়ি দিয়ে অতটা উপরে উঠতে হয়। না হলে, কোনও ভাবেই কথা বলা সম্ভব হয় না কোচবিহারের দিনহাটার সীমান্ত-গ্রাম, বাংলাদেশ লাগোয়া জারিধরলার বাসিন্দাদের পক্ষে। বয়স্কেরা সে সিঁড়ি বেয়ে উঠতে না পারলে শিশু, কিশোর বা কমবয়সিরা ভরসা। তাদের বাঁশের সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠিয়ে নির্দেশ দিয়ে দেওয়া হয়, ঠিক কী বলতে হবে। সে নেমে এলে তবেই কার ফোন এসেছে, কী কথা হল জানতে পারেন পরিবারের লোকেরা।
অভিযোগ, গোটা গ্রামেই এই একই সমস্যা। গ্রামের অধিকাংশ বাড়িতেই এ ভাবে বাঁশ দিয়ে ২০-২৫ ফুট উঁচু সিঁড়ি করা হয়েছে মোবাইলে কথা বলার জন্য। এ ভাবেই চলছে বছরের পরে বছর। গ্রামে কৃষিকাজ করে দিন যাপন করেন বাসিন্দারা। যাতায়াতের পথও দুর্গম।
জারিধরলা গ্রামের বছর পনেরোর আলামিন হোসেন বলল, ‘‘বাড়িতে মোবাইল ফোন বাজলেই সিঁড়ি দিয়ে আমি উপরে উঠি। উপরে উঠলে, তবেই মোবাইলের নেটওয়ার্ক পাওয়া যায়। তখন কিছুটা কথা বলা সম্ভব হয়। ঘরে কোনও ভাবেই নেটওয়ার্ক না থাকায় কথা বলা যায় না।’’
এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য সাদ্দাম হক বলেন, ‘‘হাতে মোবাইল থাকলেও, ইচ্ছা করলেই কথা বলা সম্ভব হয় না। ফোন এলে, অধিকাংশ সময়ই কেটে যায়। বাঁশের সিঁড়ি দিয়ে যদি কিছুটা উপরে উঠলে তবেই সিগন্যাল পাওয়া যায়। সে ক্ষেত্রে কথা বলা যায়। জানি না, এই কষ্ট আর কত দিন চলবে!’’
স্থানীয় যুব তৃণমূলের গীতালদহ ২ অঞ্চল সভাপতি আরিফ হোসেন বলেন, ‘‘কারও ফোন এলে এই এলাকায় সহজেই কথা বলা যায় না। উপরের দিকে উঠলে কিছুটা নেটওয়ার্ক মেলে। তাই বাড়িতে বাঁশ দিয়ে উঁচুকরে সিঁড়ি বানিয়েছি। অধিকাংশ সময়েই সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে কথা বলতে হয়।’’ গীতালদহ ২ পঞ্চায়েতের প্রধান মুক্তা রায় বর্মণের বক্তব্য, ‘‘গ্রামের বাসিন্দাদের ফোনে কথা বলার সমস্যা আমাদের গোচরে রয়েছে। এ নিয়ে বিভিন্ন মোবাইল সংস্থার সঙ্গেকথা বলেছি।’’
দিনহাটায় একটি মোবাইল সংস্থার দায়িত্বে থাকা হীরক চাকির আশ্বাস, ‘‘সীমান্ত-এলাকা হওয়ায় নেটওয়ার্কের সমস্যা থেকে এমনটা হতে পারে। তবে গ্রাহকদের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে অবশ্যই তাঁদের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করব।’’