ধর্মঘট: ঝাঁপ বন্ধ মালদহের এক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের। নিজস্ব চিত্র
দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পরে মিলেছিল ‘তারিখ’। কিন্তু তারিখ পেয়েও আধার কার্ড সংশোধন না করিয়েই ফিরে যেতে হল মালদহের পঞ্চানন্দপুরের নয়া বাজার গ্রামের বাসিন্দা রিনা বিবিকে। শুক্রবার সকালে ইংরেজবাজার শহরের রাজমহল রোড এলাকার এক রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাঙ্কের সামনে মেয়েকে নিয়ে ঘণ্টা খানেক দাঁড়িয়ে থাকার পরে ফিরে যান তিনি। তাঁর মতোই ফিরে যেতে হয় কালিয়াচকের বাসিন্দা মনিরুল শেখকেও।
কেন সংশোধন হল না আধার কার্ড? রিনা বিবি বলেন, “এ দিন ব্যাঙ্কে গিয়ে জানতে পারি ধর্মঘট চলছে। আজ, শনিবার পর্যন্ত ব্যাঙ্ক ধর্মঘট চলবে। ফলে সোমবারের আগে কোনও কাজ হবে না।” আধার কার্ডে কী ভুল রয়েছে? তিনি বলেন, “আমার আধার কার্ডে জন্ম তারিখ নেই। আর মেয়ের কার্ডে জন্ম তারিখ এবং ঠিকানা নেই। একশো টাকা খরচ করে মালদহে গিয়ে কাজ না করেই ফিরে যেতে হল।” মনিরুল বলেন, “দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পরে আধার সংশোধনের তারিখ পেয়েছিলাম। এ দিন আধার সংশোধনের দিন থাকায় সকালেই ব্যাঙ্কে হাজির হয়ে জানতে পারি কাজ হবে না। আবার কবে হবে তাও বুঝতে পারছি না।” যদিও পরে ফের আধার সংশোধনের জন্য তারিখ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ।
বেতন বৃদ্ধি, শূন্যপদে কর্মী নিয়োগের মতো একগুচ্ছ দাবি দাওয়া নিয়ে এ দিন থেকে ব্যাঙ্ক ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে সারা ভারত ব্যাঙ্ক অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন। আজ, শনিবার পর্যন্ত ধর্মঘট চলবে। সমস্ত ব্যাঙ্কের সামনে বন্ধের সমর্থনে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন আন্দোলনকারীরা। ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা গিয়েছে, মালদহ জেলায় মোট ২৬১টি বিভিন্ন রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাঙ্কের শাখা রয়েছে। আর শতাধিক এটিএম কাউন্টার রয়েছে। এ দিন জেলা জুড়েই সমস্ত ব্যাঙ্ক, এটিএমের ঝাঁপ বন্ধ রয়েছে। সর্বত্রই ঝুলছে প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন। আর তাতে সমস্যায় পড়েছেন সাধারণ মানুষ। মাসের শেষ দিকে ব্যাঙ্ক বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়তে হচ্ছে গ্রাহকদেরও। তাঁদের দাবি, এখন মাসের শেষ। তার উপরে রয়েছে বিয়ের মরসুম। ফলে ব্যাঙ্ক বন্ধ থাকায় চরম হয়রানির মুখে পড়তে হচ্ছে।
ব্যাঙ্ক কর্তাদের একাংশ জানিয়েছেন, “১ ফেব্রুয়ারি রবিবার পড়েছে। সেই দিনও ব্যাঙ্ক বন্ধ থাকবে। পরপর তিন দিন ব্যাঙ্ক বন্ধ থাকায় সোমবার ব্যাপক ভিড় হবে। তখন সেই ভিড় সামালাতে হিমশিম খেতে হবে।” সারা ভারত ব্যাঙ্ক অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের মালদহ শাখার যুগ্ম সম্পাদক সুশোভন চৌধুরী বলেন, “আমরা গ্রাহকদের হয়রানির জন্য ধর্মঘট করছি না। আমরা গ্রাহকদের স্বার্থেই ধর্মঘট করছি। কেন্দ্রের নীতিতে বলা হয়েছে ব্যাঙ্ক দেউলিয়া হয়ে গেলে গ্রাহকদের মাত্র এক লক্ষ টাকা দেওয়া হবে। অতীতে সেই অঙ্ক দ্বিগুণ ছিল। একই সঙ্গে ব্যাঙ্কে ন্যূনতম টাকা না থাকলেও জরিমানা করা হচ্ছে। সেই প্রতিবাদে আমরা আন্দোলন করছি।”