পাঁচশো টাকার নোট নিতে আপত্তি ওষুধের দোকানে। আলিপুরদুয়ারে ছবিটি তুলেছেন নারায়ণ দে।
খুচরো নেই বলে বড় নোট নিতে আপত্তি
সরকারি ঘোষণা যাই থাক, ঝুঁকি নিতে রাজি ছিলেন না সরকারি কর্মীরা। স্টেশন থেকে রোজকার সব্জি বাজার, এক কথা শুনতে শুনতে কান ব্যথা হয়ে গিয়েছে—খুচরো নেই, বড় নোট দেবেন না। বড় নোট অর্থাৎ, পাঁচশো বা হাজার টাকার নোট। বুধবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকায় ওই অভিযোগ উঠেছে। ভোগান্তি হয়েছে বিদ্যুৎ বিল দিতে গিয়েও। গ্রাহকদের অভিযোগ, ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট নিতে চাওয়া হয়নি। তা নিয়ে কোথাও বচসা হয়েছে। সেই চিত্রই একজরে।
কেবল কুচো চিংড়ি
সকাল আটটায় মাছের নিলাম শুরু হয়েছিল শিলিগুড়ি নিয়ন্ত্রিত বাজারে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা সিদ্ধান্ত নেন বাতিল হওয়া নোটে লেনদেন হবে না। নিলাম শুরু হওয়ার পরে আধঘণ্টা গড়িয়ে গেলেও, কুচো চিংড়ি ছাড়া কোনও মাছই নিলামে ওঠেনি। ক্রেতাদের হাতে তাড়া তাড়া বাতিল নোট। তড়িঘড়ি বদল হয় সিদ্ধান্ত। পাঁচশো এবং হাজার টাকা নিতে শুরু করেন বিক্রেতারা। তরতরিয়ে চলতে থাকে মাছ বাজারের নিলাম। শিলিগুড়ির হায়দারপাড়ার মাছবাজারে এ দিন কাতল-আড়ের নাম এবং দর ঘোষণা করে বিশ্বনাথ বর্মন চিৎকার করছেন, ‘‘পাঁচশো নেব, হাজারও নেবও। শুধু মাছ নিয়ে যান।’’ আবার একই বাজারে গৃহবধূ পাঞ্চালি চক্রবর্তী মাছ কিনতে চেয়েছেন পঞ্চাশ টাকার। কিন্তু পাঁচশো টাকার নোট দেখেই বেঁকে বসলেন বিক্রেতা প্রলয় সাহা। তাঁর দাবি নূন্যতম দেড়শ টাকার মাছঠ নিলে তিনি পাঁচশো টাকা নেবেন। তাঁর যুক্তি ব্যাঙ্কে গিয়ে লাইন দিয়ে নোট বদল করতে ঝক্কির পোহাতে হবে। তাই বেশি দাম না দিলে পোষাবে না। তাতে ক্রেতাদের নাকাল হতে হয়েছে।
শপিং মল ফাঁকা
রায়গঞ্জের শিলিগুড়িমোড়, সুপারমার্কেট, দেহশ্রীমোড়, বিধাননগর, মোহনবাটি, মহাত্মা গাঁধী রোড, নিউমার্কেট, লাইনবাজার, বিদ্রোহীমোড়, হাসপাতাল রোড, কলেজপাড়া, বীরনগর, রাসবিহারী মার্কেট, দেবীনগর ও কসবা এলাকার কয়েকশো কাপড়ের দোকান ও একাধিক শপিংমলে ক্রেতাদের কমবেশি ভিড় লেগে থাকে। ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিল হতেই এ দিন দিনভর শহরের সমস্ত কাপড়ের দোকান ও শপিংমলগুলিতে ক্রেতাদের ভিড় দেখা যায়নি। উকিলপাড়া এলাকার বাসিন্দা পেশায় অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক স্কুল শিক্ষক সনাতন বিশ্বাস বলেন, ‘‘বেশি টাকার জিনিস কিনতে বাধ্য করেছে দোকানদার।’’
সব্জির দাম পড়ল
নোট বাতিলের ধাক্কা লাগল কোচবিহারের সব্জি বাজারেও। এক-দুই টাকা নয়, কেজি প্রতি ৫ টাকা থেকে শুরু করে ২০ টাকা পর্যন্ত দাম কমে গিয়েছে। তা নিয়ে কৃষক ও খুচরো ব্যবসায়ীদের মধ্যে ক্ষোভ চরমে উঠেছে। ফোসিনের সদস্য তথা দিনহাটা মহকুমা ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক রানা গোস্বামী বলেন, “একদিনেই মাথায় সব্জির দাম অর্ধেকে নেমেছে। যা ভাল সঙ্কেত নয়।” এ দিন সকালেই কোচবিহারের দেওয়ানহাট সহ একাধিক পাইকারি বাজারে গিয়ে দেখা যায় কৃষকদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের রীতিমতো বচসা। ঘুঘুমারির সব্জি বিক্রেতা শম্ভু দাস বলেন, ‘‘মহাজনকে কিছু বড় নোট দিতে পারব। কিন্তু কত আর নেবে। তাই খদ্দের ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে।’’
পাঁচশোর দর তিনশো
তিনশো টাকার মাছ নিলে তবেই মিলবে পাঁচশোর খুচরো৷ আর পাঁচশো বা তার বেশি টাকার মাছ কিনলে মিলবে হাজার টাকার খুচরো৷ জলপাইগুজড়ির দিনবাজারের এমনই সুযোগ ছিল। দিনবাজারের মাছ ব্যবসায়ী সোনু শাহ ও শংকর শাহদের কথায়, ‘‘সকাল থেকে বেশীরভাগ খদ্দেরই হয় পাঁচশো নয়তো হাজারের নোট নিয়ে আসছিলেন৷ মাছ একেবারেই বিক্রি হচ্ছে না। সে জন্য তিনশো ও পাঁচশো টাকার মাছ কিনলে বড় নোট খুচরো দিতে রাজি হলাম৷’’ ফালাকাটায় রান্নার গ্যাস সরবরাহ সংস্থার অফিসের সামনে বিক্ষোভও হয়েছে। সংস্থা বাতিল নোট নিতে না চাইলে, দোকানের কাউন্টার ঘিরে শুরু হয় বিক্ষোভ।
বাজারে বচসা
নোট বাতিল করায় লেনদেন নিয়ে বুধবার সকাল থেকেই মালদহ জেলার পাইকারি ও খুচরো সব্জি বাজার দফায় দফায় উত্তপ্ত হল। মাছের বাজারেও চলল দিনভর বচসা। যদিও, তা কোথাও হাতাহাতির পর্যায়ে যায়নি। এদিন ভোরে ইংরেজবাজার নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতির পাইকারি সব্জি বাজারে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আড়তদাড়দের বারবার উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়েছে।
ব্যতিক্রম বালুরঘাট
বালুরঘাট শহরের বড় মাছের তহবাজারে বিক্রেতারা ৫০০ টাকার নোট নিয়েছেন। বাকিতেও মাছ বিক্রি করেছেন। কিন্তু বাজারের সবজি বিক্রেতারা ৫০০ এবং হাজার টাকার নোট নিতে চাননি। বালুরঘাট ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক হরেরাম সাহা বলেন, ‘‘খুচরো বিক্রেতাদের কাছ থেকে আড়তদারেরা ৫০০ টাকার নোট নেবেন বলে জানানোয় মাছের বাজারে কোনও সমস্যা ছিল না।’’ কিন্তু সব্জি বাজারে দাম কমেনি।