টানা ছুটি, মজে উত্তর

কালিম্পঙের লাভা লোলেগাঁও, গরুবাথের কিছু উপরে ঝান্ডি থেকে চিলাপাতা, জলদাপাড়া সর্বত্র ‘ঠাই নাই’ শোনা যাচ্ছে। পরিস্থিতি এমন রাতে থাকার ঘর না পেয়ে সারাদিন রিসর্টে কাটিয়ে খাওয়া দাওয়া করার আর্জিও জানাচ্ছে পর্যটকেরা।

Advertisement

অনির্বাণ রায়

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:৪৩
Share:

জলপাইগুড়িতে স্কুটারে সওয়ার সান্তা। ছবি: সন্দীপ পাল

কেউ গেছেন শিলং, কেউ যাবেন সিকিয়াঝোরা। শনি-রবির পরেই বড়দিন সোমবার। হাতে পাওয়া তিন দিনের ছুটি, আগে পিছে দু’একদিন জুড়ে দিলে লম্বা প্যাকেজ নয়ত তিন রাত চারদিনও ছুটির ‘ট্যুরে’ মন্দ নয় বলে দাবি পর্যটন ব্যবসায়ীদের।

Advertisement

হাতে গরম সেই সুযোগ অবশ্য ছাড়তে স্বাভাবিক ভাবেই রাজি নন উত্তরবঙ্গের ভ্রমণপিপাসুরা। তবে যাঁরা বেশি দূরে যেতে চাইছেন না, তাঁরা ঘরের কাছে সারা দিন কাটানোর মতো জায়গা বেছে ছুট দিচ্ছেন। আলিপুরদুয়ারের সিকিয়াঝাড়া থেকে শিলিগুড়ির কাছে গজলডোবার ভোরের আলো গন্তব্য কম নেই। ভিড়ও বাড়ছে।

উত্তরবঙ্গের ট্যুর অপারেটরদের অন্যতম বৃহৎ সংগঠন এতোয়ার উপদেষ্টা তথা অন্য পর্যটন সংস্থা সঙ্গে যুক্ত রাজ বসুর কথায়, ‘‘বড়দিনের আগে-পরে মিলিয়ে এই ছুটির সময়টা এ বছর একটা বিশেষত্ব দেখা যাচ্ছে। মেঘালয়, ত্রিপুরা এবং অসমে যাওয়ার ঝোঁক বেশি। শিলং, কাজিরাঙার কোনও অতিথিনিবাসের একটি ঘরও ফাঁকা নেই। উত্তরবঙ্গের ভ্রমনপিপাসুরা এবার উত্তর পূর্বমুখী বলা যেতে পারে। সেই সঙ্গে আমাদের ডুয়ার্স-তরাইয়ের পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে ভিড় তো আছেই।’’

Advertisement

শনিবার দিনভর সিকিয়াঝোরায় ভিড় উপচে পড়েছে। আলিপুরদুয়ারের সিকিয়া নামে ঝোরায় নৌকা ভ্রমণের সুযোগ রয়েছে। দু’পাশে জঙ্গলের মধ্য দিয়ে বয়ে গিয়েছে ঝোরা। প্রায় এক কিলোমিটার ঝোরাপথে নৌকায় চেপে ঘোরার সুযোগ পেতে কাড়াকাড়ি হয়ে লেগে যায় এ দিন। কোচবিহারের পাতলাখাওয়ায় গন্ডারের আবাসস্থলের কাজ শুরুর সূচনা হয়েছে গত সপ্তাহে। সবে খুঁটি পোঁতা হয়েছে। তা দেখতেই ভিড় উপচে পড়ছে। সাধারণত সোমবার বন্ধ থাকে শিলিগুড়ির উপকন্ঠে বেঙ্গল সাফারি। পর্যটকদের চাহিদার কথা মনে রেখে, বড়দিনের কারণে আগামী সোমবার খোলা থাকছে। মালদহের স্কুল শিক্ষক মৃণাল চৌধুরী সপরিবারে যাচ্ছেন হাজারদুয়ারি। রবিবার ভোরে মুর্শিদাবাদে রওনা দেবেন। মৃণালবাবু বলেন, ‘‘সোমবার রাতে ফিরব। বড়দিনের আগে এমন ছুটির সুযোগ নষ্ট করা উচিত হবে না ভেবেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম।’’

কালিম্পঙের লাভা লোলেগাঁও, গরুবাথের কিছু উপরে ঝান্ডি থেকে চিলাপাতা, জলদাপাড়া সর্বত্র ‘ঠাই নাই’ শোনা যাচ্ছে। পরিস্থিতি এমন রাতে থাকার ঘর না পেয়ে সারাদিন রিসর্টে কাটিয়ে খাওয়া দাওয়া করার আর্জিও জানাচ্ছে পর্যটকেরা। গরুমারার এক রিসর্টের ম্যানেজারের কথায়, ‘‘ঘর নেই শুনেও ফিরছেন না পর্যটকরা। সকাল থেকে জঙ্গল সাফারি করে রিসর্টে দুপুরে খাওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়ার আবদার করেছন।’’ গ্রিন ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে আপাতত বন্ধ বক্সার অন্তত ৭০টি রিসর্ট। তবে দিনভর ঘোরাঘোরির কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই। ডুয়ার্স ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট ফোরামের সভাপতি পার্থ রায়টকরা। বললেন, ‘‘জয়ন্তী, বক্সা দুর্গে যেন মেলা বসেছে। শনিবার থেকে ভিড় শুরু হয়েছে।’’

বড়দিনের মধ্যে সুখবরও রয়েছে। দীর্ঘ অশান্তি পর্বের পরে পর্যটক শূন্য হয়ে গিয়েছিল দার্জিলিং। পর্যটকদের টানতে বড়দিনের পরেই উৎসবের আয়োজনও করছে জিটিএ। তাতেও কতটা হাল ফিরবে তা সময়ই বলবে। তবে ট্যুর অপারেটর সম্রাট সান্যালের কথায়, ‘‘লাভা-লোলেগাঁওতে ভিড় বেশি। তবে দার্জিলিং নিয়ে ইতিউতি খোঁজখবর শুরু হয়েছে। এটা খুবই আশাপ্রদ।’’ বড়দিন থেকেই সুদিন-এর অপেক্ষায় দার্জিলিংও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement