নতুন ইংরেজি বছরের প্রথম দিন স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে সেবক রোডের নতুন শপিংমলে সময় কাটাতে গিয়েছিলেন এক সরকারি কর্মী। ঘণ্টাখানেক কেনাকাটা, ঘোরাঘুরির করে বাইরে এসে দেখেন শখের বাইক হাওয়া! জাতীয় সড়কের আশপাশে অনেক খোঁজাখুঁজির পরেও মেলেনি বাইক।
পরদিন, সেবক রোডের আরেকটি শপিং মলের সামনে স্কুটি রেখে বন্ধুদের সঙ্গে জামাকাপড় কিনতে গিয়েছিলেন বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত এক তরুণী। তিন বন্ধু মিলে শীতের সন্ধ্যায় মোমো খেতে খেতে বাইরে এসে দেখেন সাদা স্কুটি উধাও।
কয়েকদিন পরে, ৭ জানুয়ারি, বাগডোগরায় হাসপাতাল এলাকায় কাজে গিয়েছিলেন বায়ুসেনার এক কর্মী। ফিরে এসে আর খুঁজে পাননি নিজের কালো মোটরবাইকটি।
এমন ঘটনার বিরাম নেই। একটি বা দুটি নয়, গত ৩১ ডিসেম্বর থেকে শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেট জুড়ে একটানা বাইক, স্কুটি চুরি ফের চলছে বলে অভিযোগ। গত কয়েকদিন তিনটি গাড়ি চুরির ঘটনাও ঘটেছে। পুলিশ সূত্রের খবর, সব মিলিয়ে চুরি যাওয়া বাইক-স্কুটির সংখ্যা এক সপ্তাহে অন্তত ১০টি। সবচেয়ে বেশি চুরির ঘটনা ঘটছে ভক্তিনগর থানা এলাকায়। বছরের শেষদিন থেকে গত শনিবার অবধি প্রায় প্রতিদিনই একটি করে বাইক বা স্কুটি চুরির ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের নজরদারির অভাবেই পরপর ঘটনাগুলি ঘটছে বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। তাঁরা জানান, সেবক রোডের দুই মাইলের বাসস্ট্যান্ড, দুটি শপিং মলগুলির সামনে থেকে নিয়মিত চুরির ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, যে শপিং মলগুলির বাইকে গাড়ি রেখে যেতেই ভয় পাচ্ছেন বাসিন্দারা। তেমনই, শিলিগুড়ি ও প্রধাননগর থানা এলাকাতেও অন্তত ৫টি বাইক চুরির ঘটনা ঘটছে। শুধু বাইকই নয়, দুটি থানার পানিট্যাঙ্কি মোড়, দাগাপুর থেকে ২টি গাড়িও চুরি হয়েছে।
পুলিশ অফিসারেরা জানাচ্ছেন, সম্প্রতি দার্জিলিং পুলিশের হাতে উত্তরবঙ্গ, সিকিমের বাইক চুরি চক্রের পান্ডা মেদাল মাঝি গ্রেফতার হয়। গত তিন বছরের মেদাল স্থানীয় বিভিন্ন দুষ্কৃতীদের সাহায্যে পাহাড় এবং সমতল মিলিয়ে ৩৫০ উপর বাইক চুরি করেছে বলে অভিযোগ। তেমনই, প্রধাননগরের বাসিন্দা ‘ম্যানেজার’ নামের আরেক চক্রের পান্ডাকে আগ্নেয়াস্ত্র-সহ গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের সংখ্যা ছিল ৮ জন। সব মিলিয়ে উদ্ধার হয়েছিল ১১টি বাইকও। এতে সপ্তাহ তিনেক চুরি বন্ধ হয়। কিন্তু দলগুলির বেশিরভাগ সদস্য গ্রেফতার না হওয়ায় ফের চুরির ঘটনা বেড়েছে বলে পুলিশ অফিসারদের অনুমান। ওই অফিসারেরা জানান, চ্যাংরাবান্ধা ও নেপালের ‘রুট’ নজরদারি থাকায় ডুয়ার্সেও বাইক নিয়ে লুকিয়ে রাখা হচ্ছে বলে খবর আসছে। পরে সুযোগ মত সেগুলির হাত বদল হচ্ছে।
কোচবিহার, নেপাল এবং উত্তর দিনাজপুরের দলগুলির তো ছিলই, এ বার ডুয়ার্সের কয়েকটি দলও চুরি শুরু করেছে বলে পুলিশ সন্দেহ করছে। গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে নভেম্বর মাস অবধি কমিশনারেট এলাকায় ৬১টি মোটরবাইক চুরির ঘটনা ঘটেছিল। অক্টোবর মাসেই ৩১টি মোটরবাইক চুরি হয়। সবচেয়ে বেশি চুরি হয়েছিল শিলিগুড়ি থানা এলাকায়। কিছু ধরপাকড়, মোটরবাইক উদ্ধারের পর চুরির ঘটনা থেকে যায়। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার চেলিং সিমিক লেপচা বলেন, ‘‘মোটরবাইক চুরি মাঝে বন্ধ হয়েছিল। আবার শুরু হয়েছে বলে খবর পেয়েছি। ভক্তিনগর থানা-সহ অন্য থানাগুলিকেও সতর্ক করা হয়েছে।’’