অবাধে মদের আসর কুলিকে

বন দফতর ও পুলিশের নজরদারির অভাবে দীর্ঘ দিন ধরে এ ভাবেই পক্ষিনিবাসের ভিতরে মদের আসর বসছে বলে অভিযোগ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৯ ০৫:০০
Share:

খোলাখুলি: কুলিক পক্ষিনিবাস চত্বরেই চলছে দেদার মদ্যপান। রায়গঞ্জের এই পর্যটন কেন্দ্রে মাঝেমধ্যেই দেখা যাচ্ছে এমন ছবি। ছবি: চিরঞ্জীব দাস

রবিবার বেলা সাড়ে ১১টা। তিনটি মোটরবাইকে চেপে ছ’জন যুবক রায়গঞ্জের কুলিক পক্ষিনিবাস সংলগ্ন ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে একটি পানের দোকানে থামলেন। কারও মাথায় হেলমেট নেই। একজনের হাতে একটি ভারী প্লাস্টিকের প্যাকেট। পানের দোকানে চিপস ও ভুজিয়ার প্যাকেট কিনে বাইকেই পূর্ত দফতরের বাংলোর দিকে চলে গেলেন ছ’জন। প্রায় ১৫ মিনিট পর সেখানে গিয়ে দেখা গেল, বাংলোর অদূরে কুলিক নদীর ধারের পক্ষিনিবাস চত্বরে বসে প্লাস্টিকের গ্লাসে বিয়ার ঢেলে খাচ্ছেন। বেলা সাড়ে ১২টা। ইকোপার্ক লাগোয়া পিকনিক স্পটের পাশে পক্ষিনিবাসের গাছের নীচে একদল যুবক তাস খেলছেন। সামনে চারটে বিদেশি মদের বোতল। এক যুবককে দেখা গেল, মদের বোতল খুলে প্লাস্টিকের গ্লাসে ঢেলে বাকিদের হাতে তুলে দিচ্ছেন।

Advertisement

বন দফতর ও পুলিশের নজরদারির অভাবে দীর্ঘ দিন ধরে এ ভাবেই পক্ষিনিবাসের ভিতরে মদের আসর বসছে বলে অভিযোগ। অভিযোগ, রায়গঞ্জ ও আশপাশ এলাকার যুবকদের একাংশ মাঝেমধ্যেই বাইক, সাইকেল ও ছোটগাড়িতে চেপে আব্দুলঘাটা, মণিপাড়া, পূর্ত দফতরের বাংলো লাগোয়া কুলিক নদীর ধার ও নদীবাঁধ এলাকার পক্ষিনিবাসে যাচ্ছেন। সেখানে বসেই চলছে মদ্যপান। দিনের পর দিন এই ঘটনার জেরে পরিবেশ ও পশুপ্রেমী বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়েছে। রায়গঞ্জের বিভাগীয় বনাধিকারিক দ্বিপর্ণ দত্তের বক্তব্য, তিনি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখে উপযুক্ত পদক্ষেপ করবেন।

বন দফতরের এক আধিকারিক জানালেন, বাসিন্দা ও পর্যটকদের কোনও সামগ্রী নিয়ে পক্ষিনিবাসের সংরক্ষিত এলাকায় ঢোকা নিষিদ্ধ। যদিও বন দফতরের কর্মীদের পক্ষিনিবাসের এতবড় অসংরক্ষিত এলাকার সর্বত্র নিয়মিত নজরদারি চালানো সম্ভব হয় না। উত্তর দিনাজপুরের পুলিশ সুপার সুমিত কুমার বলেন, ‘‘পক্ষিনিবাস চত্বরে বেআইনি কার্যকলাপ রুখতে পুলিশের নজরদারি রয়েছে। সেই নজরদারি আরও বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।’’

Advertisement

প্রতিবছর জুন থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত পক্ষিনিবাসে ওপেন বিল স্টর্ক, নাইট হেরন, কর্মোর‌্যান্ট, ইগ্রেট ছাড়াও বিভিন্ন প্রজাতির পরিযায়ী পাখি আসে। রায়গঞ্জের একটি পরিবেশপ্রেমী সংগঠনের সহ সভাপতি চন্দ্রনারায়ণ সাহা ও আরেকটি পশুপ্রেমী সংগঠনের সভাপতি ভীমনারায়ণ মিত্রের বক্তব্য, বন দফতর ও পুলিশের নজরদারির অভাবে দীর্ঘ দিন পক্ষিনিবাসের বিভিন্ন এলাকায় দিনভর মদের আসর বসছে। ফলে পরিযায়ীদের মরসুমে পর্যটকেরা পক্ষিনিবাসে বেড়াতে গিয়ে নিরাপত্তার অভাববোধ করছেন। সেইসঙ্গে, পক্ষিনিবাসের বিভিন্ন এলাকায় মদ ও জলের খালি বোতল, প্লাস্টিকের গ্লাস ও বিভিন্ন খাবারের প্লাস্টিকের প্যাকেট ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকার কারণে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। মদ্যপদের চিৎকার-চেঁচামেচির জেরে পরিযায়ীদের প্রজননের ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement