যন্ত্রণা সয়ে ভ্যানযাত্রা ভুতনির চরে

পেটের যন্ত্রণায় কাতর ছেলেকে ভ্যানে বসিয়ে হাসপাতালে ছুটছেন নাজিমুল হক। সঙ্গে তাঁর স্ত্রী দিলারা বেগম। ভ্যানরিকশায় যাতায়াতের ফলে ২০ মিনিটের পথ হয়ে উঠেছে দেড় ঘণ্টার।

Advertisement

অভিজিৎ সাহা

মালদহ শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৭ ০২:২৭
Share:

অসহায়: রোগীদের যেতে হয় এ ভাবেই। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়

পেটের যন্ত্রণায় কাতর ছেলেকে ভ্যানে বসিয়ে হাসপাতালে ছুটছেন নাজিমুল হক। সঙ্গে তাঁর স্ত্রী দিলারা বেগম। ভ্যানরিকশায় যাতায়াতের ফলে ২০ মিনিটের পথ হয়ে উঠেছে দেড় ঘণ্টার।

Advertisement

কেন এই ভাবে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন?

একরাশ ক্ষোভ নিয়ে নাজিমুল হক বলেন, ‘‘শখ করে কেউ অসুস্থ ছেলেকে ভ্যানে করে হাসপাতালে নিয়ে যায়? রাস্তার যা অবস্থা তাতে গাড়িতে সুস্থ মানুষই অসুস্থ হয়ে যাবে। আর আমার অসুস্থ ছেলেটার কী অবস্থা হবে, একবার তা ভেবে দেখুন।’’

Advertisement

শুধু নাজিমুল নন, এমনই অভিযোগ ও অভিজ্ঞতা ভুতনিবাসীর।

মালদহের মানিকচক ব্লকের অর্ন্তগত ভুতনি চর। মথুরাপুর থেকে ফুলহার নদী পার হলে পড়ে চরটি। মাঝে একটা নদীই বদলে দিয়েছে ভুতনির লক্ষাধিক মানুষের রোজনামচা। ভুতনির শঙ্করটোলা ঘাট থেকে প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের দূরত্ব প্রায় আট কিলোমিটার। এই আট কিলোমিটার রাস্তার কোথাও পিচ কিংবা কংক্রিটের আস্তরণ নেই। মাটির রাস্তার মাঝে আবার বড় বড় গর্ত। রাস্তার এমন অবস্থা, গাড়িতে স্থির হওয়ায় দায়।

অভিজ্ঞতা বলে, গাড়ির চেয়ে ভ্যান রিকশা মন্দের ভাল। তাই ভুতনি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র যেতে হিরানন্দপুর, উত্তর ও দক্ষিণ চণ্ডীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রায় ১০০টি গ্রামের বাসিন্দাদের যাতায়াতের ভরসা ভ্যানরিকশাই। তবে বর্ষাকালে ভুতনির রাস্তায় ভ্যানও চালানো যায় না বলে দাবি গ্রামবাসীদের। বৃষ্টির জল পড়ে মাটির রাস্তা কাদায় ভরে যায়। কাদায় আটকে যায় ভ্যানের সরু চাকা। সেই সময় বাধ্য হয়েই রোগীকে খাটিয়াতে করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয় বলে দাবি দক্ষিণ চণ্ডীপুরের প্রবীণ বাসিন্দা কৃষ্ণকান্ত মণ্ডল ও বিনয় কুমার মণ্ডলেরা। তাঁরা বলেন, ‘‘ভাঙাচোরা হলেও শুখা মরসুমে রাস্তা দিয়ে কোনও রকমে চলাফেরা করা যাচ্ছে। বৃষ্টি হলেই জুতো হাতে নিয়ে আমাদের চলা ফেরা করতে হয়। আর অসুস্থ রোগীদের খাটিয়াতে করে হাসপাতাল কিংবা ব্লক সদরে নিয়ে যেতে হয়।’’

রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গ্রামীণ রাস্তার উন্নতিতে জোর দিচ্ছেন। মালদহ সফরে এসেও রাস্তার কাজে জন্য কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন। তারপরেও কেন উন্নয়নের ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত ভুতনিবাসী। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, বাম হোক কিংবা ডান—নির্বাচন আসলেই ভুতনিতে প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি দিয়ে যান নেতা-নেত্রীরা। ভোট ফুরোলেই সেই সব প্রতিশ্রুতির কথা ভুলে যান তাঁরা। রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র বলেন, ‘‘আমি ক্ষমতায় থাকাকালীন ভুতনির জন্য অনেক কিছু করেছি।’’ ওই এলাকার কংগ্রেসের বিধায়ক মোত্তাকিন আলম বলেন, ‘‘বিধায়ক তহবিল থেকে ভুতনির রাস্তাঘাট করার জন্য যতটুকু করা সম্ভব করার চেষ্টা করছি।’’ মালদহ জেলা পরিষদের সহ সভাধিপতি তথা ওই এলাকার সদস্য গৌড় চন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘‘রাস্তার উন্নয়নের জন্য একাধিক পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement