দুর্ভোগ দু’পক্ষেই

বিকেল থেকে অপেক্ষা চলছে। সন্ধ্যে গড়িয়ে রাত। যে ট্রেন আসছে সবেতেই গাদাগাদি। প্ল্যাটফর্মে চাদর বিছিয়ে বসে শুয়ে রয়েছেন কয়েক হাজার পরীক্ষার্থী। চারটি প্ল্যাটফর্মেও জায়গা না কুলোনোয় পরীক্ষার্থীরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন ওভারব্রিজেও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৭ ০২:৪৯
Share:

আতঙ্কিত: এনজেপি স্টেশনে ট্রেনে ভাঙচুরের পরে দিশাহারা যাত্রীরা। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

বিকেল থেকে অপেক্ষা চলছে। সন্ধ্যে গড়িয়ে রাত। যে ট্রেন আসছে সবেতেই গাদাগাদি। প্ল্যাটফর্মে চাদর বিছিয়ে বসে শুয়ে রয়েছেন কয়েক হাজার পরীক্ষার্থী। চারটি প্ল্যাটফর্মেও জায়গা না কুলোনোয় পরীক্ষার্থীরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন ওভারব্রিজেও।

Advertisement

পরীক্ষার্থীদের অভিযোগ, রাতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দুর্ভোগও বেড়েছে। রাত সাড়ে দশটার ব্রহ্মপুত্র মেল পৌঁছয় মাঝ রাত পেরিয়ে। ততক্ষণে স্টেশনের কল থেকে জল পড়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে। প্ল্যাটফর্মের স্টলগুলিতে খাবার শেষ। স্টেশনের বাইরে খাবারের আগুন দাম চাইছে বলে অভিযোগ। পরীক্ষার্থীদের দাবি, ব্রহ্মপুত্র মেলের সাধারণ এবং সরক্ষিত কোনও কামরাতেই তিল ধারণের জায়গা ছিল না। ভোর পৌনে চারটেয় সেই ট্রেন ছেড়ে যাওয়ার পরে অপেক্ষা শুরু হয় পরের ট্রেনের। সকাল সাতটায় অওধ অসম এক্সপ্রেস যখন স্টেশনে ঢোকে, তখন সেখানে গাদাগাদি ভিড়। রাতভর স্টেশনে দুর্ভোগ পোহানোর পরে পরীক্ষার্থীরা তখন সংশয়ে, রবিবারেও বাড়ি ফেরা হবে তো? এর পরেই শুরু হয় অবরোধ, ভাঙচুর, চূড়ান্ত তান্ডব।

বারাউনি থেকে পরীক্ষা দিতে শিলিগুড়ি এসেছিলেন প্রিয়ঙ্কা কুমারী, ফুল কুমারী এবং খুশবু। প্রিয়ঙ্কা এবং ফুল স্নাতক, খুশবু স্নাতকোত্তরে পড়াশোনা করছে। লাঠিচার্জের সময় দৌড়তে গিয়ে ফুল উল্টে পড়ে যান। পায়ের অনেকটা কেটে গিয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘বাড়ি থেকে দূরে অনেক জায়গায় পরীক্ষা দিতে গিয়েছি। এমন পরিস্থিতির মুখে কখনও পড়তে হয়নি।’’

Advertisement

গত শনিবার বিকেল পাঁচটায় এনজেপিতে পৌঁছে ট্রেন পেয়ে যাবেন বলে ভেবেছিলেন। যদিও নর্থ ইস্ট থেকে ব্রহ্মপুত্র, কোনও ট্রেনেই জায়গা পাননি বলে অভিযোগ। প্রিয়ঙ্কার কথায়, ‘‘হোটেল ভাড়া করে যে থাকব, সেই টাকা আমাদের কাছে ছিল না। তাই প্ল্যাটফর্মেই কাটাতে হয়েছে।’’ খুশবুর দাবি, রাতে দশ টাকার জলের বোতল পঞ্চাশ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘বাইরে হোটেলে খেতে গিয়েছিলাম। মাছের টুকরো-ভাতের প্লেট দেড়শো টাকা চাইল। পেটে কিল মেরে রইলাম সারারাত।’’

দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে দেরিতে চলা ট্রেনের যাত্রীদেরও। অওধ অসম এক্সপ্রেসের টু টিয়ার বাতানুকূল কামরায় ছিলেন প্রীতি জাজোদিয়া। সকাল ৭টা থেকে সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত এনজেপিতেই দাঁড়িয়ে ছিল ট্রেন। প্ল্যাটফর্মে খাবার-জল পাননি তাঁরাও। যাত্রীদের দুর্ভোগ এড়াতে পরে বাড়তি জলের ব্যবস্থা করে স্টেশন কর্তৃপক্ষ। প্রীতি দেবীর কথায়, ‘‘ট্রেনের প্যান্ট্রিতে কোনও খাবার পাইনি। কামরায় যে বাচ্চারা ছিল, তারা খিদের জ্বালায় কেঁদেই গিয়েছি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement