পার্থপ্রতিম রায়।
বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক সুনীল বনসলের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বিজেপিকে বিঁধলেন তৃণমূলের রাজবংশী নেতা পার্থপ্রতিম রায়। বিজেপির কয়েক জন নেতার বিরুদ্ধে দ্বিচারিতার অভিযোগ তুললেন তিনি। ‘গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশন’-এর নেতা অনন্ত রায় (মহারাজ) পরোক্ষ ভাবে এ ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সোমবার বনশল জানিয়েছিলেন, উত্তরবঙ্গকে নিয়ে আলাদা রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হওয়ার কোনও চর্চা নেই। বুধবার পার্থপ্রতিম সমাজমাধ্যমে বিজেপির কয়েক জন মন্ত্রী-বিধায়কের নাম উল্লেখ করে বলেন, “এ বার আপনারা মুখ খুলবেন, না মুখে কুলুপ আঁটবেন!” পার্থপ্রতিম বলেন, “রাজ্যভাগ নিয়ে বিজেপি যে দ্বিচারিতা করছে, এ বার তা স্পষ্ট হয়েছে। মানুষকে বিভ্রান্ত করে ফায়দা লুটতে চেয়েছিল বিজেপি। এ বার মানুষই তার জবাব দেবে।”
অনন্তের সঙ্গে বিজেপির ‘সখ্য’ পুরনো। তাঁকে একাধিক বার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের প্রচার-সভায় দেখা গিয়েছে। তাঁর অনুষ্ঠানে বিজেপির মন্ত্রী ও বিধায়কদের দেখা যায়। সেই অনন্ত অবশ্য বিজেপি নেতা বনসলের ওই বক্তব্যে মোটেই খুশি নন। এ দিন তাঁর কথায়, “যে, যেটা ভাল বুঝবেন, করবেন। কিন্তু এটাও মনে রাখতে হবে প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি, মুখ্যমন্ত্রী মানুষই নির্বাচন করে। মানুষই সব কিছুর বিচার করবে। এর পরে, স্রোত কোন দিকে বইবে, তা জনগণই ঠিক করবে।”
এমন পরিস্থিতিতে ‘অস্বস্তিতে’ পড়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। যে নেতারা এক সময় আলাদা রাজ্যের পক্ষে সওয়াল করেছিলেন, তাঁরা এখন চুপ থাকতে চাইছেন। বিজেপির জলপাইগুড়ির সভাপতি বাপি গোস্বামী এক সময় আলাদা রাজ্যের দাবিতে সরব হয়েছিলেন। এ দিন বাপি রাজ্যভাগের প্রসঙ্গ মুখে আনতে চাননি। তিনি শুধু বলেন, “উত্তরবঙ্গ বঞ্চিত, অবহেলিত। আশা করি, কেন্দ্রীয় সরকারের হাত ধরেই উন্নয়ন হবে, বঞ্চনার অবসান হবে।”
দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বিজেপি রাজ্যভাগ প্রসঙ্গে ‘উভয় সঙ্কটে’ পড়েছে। উত্তরবঙ্গে আলাদা রাজ্য নিয়ে সরব হওয়ার ফল দক্ষিণবঙ্গে পেতে শুরু করে বিজেপি। সেখানকার মানুষ বিজেপির ওই ভূমিকা ভাল ভাবে নিচ্ছিলেন না। পরিস্থিতি বুঝতে পেরে আলাদা রাজ্যের প্রসঙ্গ থেকে সরে আসতে শুরু করে বিজেপি। এমনকি, উত্তরবঙ্গের নেতাদেরও ওই বিষয়ে মুখ না খোলার নির্দেশ দেওয়া হয়।
মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির বিজেপি বিধায়ক আনন্দময় বর্মণ এক সময় আলাদা রাজ্যের দাবি তুলেছিলেন। তিনি এ দিন বলেন, “উত্তরবঙ্গ আলাদা রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হবে কি না তা কেন্দ্রের হাতে। এটা বিজেপির দাবি নয়। স্থানীয় মানুষের দীর্ঘদিনের বঞ্চনা, ক্ষোভের ফলে ওই দাবি উঠেছে। আমরা জনপ্রতিনিধি হিসাবে উত্তরবঙ্গের মানুষের দাবির কথা তুলে ধরেছি।”