বৃহস্পতিবার রাতে এই মাদকেরই কারবারের অন্যতম প্রধান পাণ্ডা সন্দেহে কালিয়াচকের সেই মোজমপুর থেকেই এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করল এনসিবির আধিকারিকরা।
জাল নোট-আফিমের কারবারের পাশাপাশি মাস দুই আগে ‘নারকোটিক ড্রাগ’ বলে পরিচিত একটি ইঞ্জেকশন পাচার কারবারেও নাম জড়িয়েছিল মালদহের কালিয়াচকের। নারকোটিক কন্ট্রোল ব্যুরোর (এনসিবি) কলকাতা জোনাল ইউনিটের আধিকারিকরা সে বার ওই মাদক পাচার কারবারি সন্দেহে মহম্মদ কালুকে কালিয়াচকের মোজমপুর থেকে গ্রেফতার করেছিল। বৃহস্পতিবার রাতে এই মাদকেরই কারবারের অন্যতম প্রধান পাণ্ডা সন্দেহে কালিয়াচকের সেই মোজমপুর থেকেই এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করল এনসিবির আধিকারিকরা। এনসিবি জানিয়েছে, ধৃতের নাম নজরুল ইসলাম ওরফ নজরুল শেখ। রাতে বাড়ি থেকেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। ধৃতকে শুক্রবার মালদহের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারকের (দ্বিতীয়) এজলাসে তোলা হয়েছিল। এনসিবির বিশেষ সরকারি আইনজীবী সুদীপ্ত গঙ্গোপাধ্যায় ও মানস ভট্টাচার্য বলেন, ধৃতকে বিচারক এক দিনের জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। আজ শনিবার ফের আদালতে তুলে ধৃতকে এনসিবি হেফাজতে নিতে আবেদন জানাবে।
এখন প্রশ্ন, এই ইঞ্জেকশন কি কোনও রোগের চিকিত্সায় ব্যবহার হয়? মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক বিক্রমকুমার সাহা বলেন, ‘‘ওই ইঞ্জেকশন মূলত ব্যথা কমানোর জন্য ব্যবহার হয়। বিশেষ করে, ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীদের ব্যথা কমাতে, কোনও অস্ত্রোপচারের পর ব্যথা কমাতে বা যাঁরা মাদকাসক্ত তাঁদের চিকিত্সাতেও এই ইঞ্জেকশন ব্যবহার করা হয়। এটি একটি নারকোটিক ড্রাগ। তাই কোনও সুস্থ মানুষকে এই ইঞ্জেকশন দিলে তাঁর নেশাচ্ছন্ন একটা ভাব দীর্ঘ ক্ষণ থাকে।’’ তিনি জানান, স্বীকৃত চিকিত্সকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া এই ইঞ্জেকশন বাইরে বিক্রি হওয়ার কথা নয়।
এখন প্রশ্ন, চিকিত্সার কাজে ব্যবহৃত এই ইঞ্জেকশন কেন পাচার হচ্ছে? কোথা থেকে এই ইঞ্জেকশন মিলছে, কোন পথে পাচার হয়? এনসিবি সূত্রে জানা গিয়েছে, পাচার কারবারীরা এই ইঞ্জেকশনকে নেশার সামগ্রী হিসেবেই ব্যবহার করছে। গত ২৪ জুলাই মালদহ থেকে ধৃত কালুকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তাঁরা জানতে পেরেছিলেন যে, এই ইঞ্জেকশনের কারবারের অন্যতম পাণ্ডা নজরুল। তারও আগে মুর্শিদাবাদের লালগোলা থেকে এক পাচারকারিকে গ্রেফতার করে এই নজরুলের নামই এসেছিল। এনসিবির কলকাতা ইউনিটের একটি দল বেশ কয়েকবার কালিয়াচকের মোজমপুরে নজরুলের বাড়িতে হানাও দিয়েছিল।
কিন্তু বাড়ি তালাবন্ধ থাকায় তাঁদের শূন্য হাতেই ফিরতে হয়েছে। কয়েক দিন আগে এনসিবি গোপন সূত্রে খবর পায় যে নজরুল বাড়িতে ফিরেছে এবং সেই সূত্র ধরেই বৃহস্পতিবার রাতে হানা দিয়ে বাড়ি থেকেই নজরুলকে গ্রেফতার করে এনসিবি। প্রাথমিক ভাবে জেরা করে এনসিবির আধিকারিকরা জানতে পেরেছেন, নজরুলের মোজমপুরের বাড়িতেই ওই ইঞ্জেকশনের নকল তৈরি হত।