শ্যামল কর।
তখন ‘অফিস টাইম’। আচমকা চারটি গাড়িতে কুড়ি জনের বেশি সিবিআই অফিসার পৌঁছে গেলেন মহিষবাথান গ্রামে। তাঁরা যে সিবিআইয়ের লোক, প্রথমে বুঝতে পারেননি কেউ। না পারারই কথা, গাড়ির সামনে বড় বড় হরফে লেখা ‘পুলিশ’। কিছুক্ষণের মধ্যেই অবশ্য কানাঘুষোতে স্পষ্ট হয়, সিবিআই অভিযান শুরু হয়েছে। কোচবিহার শহর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে, খাগরাবাড়ির মহিষবাথান গ্রামের সেই খবর ছড়িয়ে পড়ে দ্রুত গতিতে।
প্রথমে খবর চাউর হয়, রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের এক নেতার বাড়িতে তল্লাশি করছে সিবিআই। পরে অবশ্য জানা যায়, তিনি নয়, তাঁর প্রতিবেশী শ্যামল করের বাড়িতে তল্লাশিতে গিয়েছে সিবিআই। সিবিআইয়ের দলটি নেতার বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। নাম-বিভ্রাটে ওই সমস্যা হয়েছে। শ্যামল করের বাড়িতে দুই দফায় অভিযান চালানো হয়। সকালে প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে সেখানে ছিলেন সিবিআই অফিসারেরা। সন্ধ্যায় আবার ঘণ্টা দুয়েক সেই বাড়িতে ছিলেন আধিকারিকেরা। শ্যামল বর্তমানে ওই বাড়িতে থাকেন না। লাগোয়া বাড়িতে থাকেন শ্যামলের ভাইপো আশিস কর। তিনি বলেন, ‘‘শ্যামলকাকু কোথায় থাকেন আমার জানা নেই। সিবিআই কেন অভিযান চালিয়েছে, তা এই মুহূর্তে বলতে পারছি না।’’
মহিষবাথানের ওই ‘কর’ পরিবার কোচবিহারের রাজারহাটের টেঙ্গনমারিতে একটি বিএড কলেজ চালান। এক সময়ে যার মাথায় ছিলেন শ্যামল কর। একটি ট্রাস্ট গড়ে ওই কলেজ পরিচালনা হয়। শ্যামল তার চেয়ারম্যান ছিলেন। বর্তমানে ওই বোর্ডের চেয়ারম্যান আশিস। সম্পাদক হিসেবে রয়েছেন শ্যামলের এক ভাই অমল কর। সদস্য শ্যামলের আর এক ভাই সজল কর ও তাঁর স্ত্রী মানসী। এ দিন ওই কলেজে সজলকেই দীর্ঘ সময় জিজ্ঞাসাবাদ করে সিবিআই। হইচইয়ে ভিড় জমে যায় ‘কর’ বাড়ির সামনে।
প্রতিবেশীরা জানান, ভাল পরিবার হিসেবেই নাম ছিল করদের। শ্যামল এক সময় গৃহশিক্ষকতা করতেন। সুনামও ছিল। প্রচুর ছাত্রছাত্রী ছিল। অনেককে বিনা বেতনে পড়াতেন বলেও শোনা গিয়েছে। পরে তিনি তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের নেতা হিসেবে পরিচিত হন। ২০১৪ সালে তিনি টেঙ্গনমারিতে বিএড কলেজ চালু করেন। তার কয়েক বছরের মধ্যে শ্যামলের বিরুদ্ধে আর্থিক অভিযোগ উঠতে শুরু করে। ওই সময় বাড়ির বাইরেই বেশি সময় থাকতেন শ্যামল। গত এক বছর ধরে তাঁকে সে ভাবে এলাকায় দেখা যায় না।
কয়েক জন প্রতিবেশী বলেন, ‘‘এক সময় খুব সুনাম ছিল শ্যামলের। পরে কলকাতা, দিল্লি বহু জায়গায় যাতায়াত করেন বলে শুনেছি। তার পরে শুনেছি, কিছু লোক তাঁর কাছে টাকা পান বলে বাড়িতে হানা দেয়। প্রায় এক বছর ধরে তাঁকে আর দেখা যায় না।’’ তৃণমূলের কোচবিহার ২ নম্বর ব্লকের সভাপতি সজল সরকার বলেন, ‘‘শ্যামল কর আমার শিক্ষক ছিলেন। আমরা সবাই তাঁকে শিক্ষক হিসেবেই চিনি। পরে কী হয়েছে, তা জানা নেই।’’