তখন অবরুদ্ধ জাতীয় সড়ক। নিজস্ব চিত্র।
গত রবিবারের ছাত্রী মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে ডালখোলাতে চলে থাকা অবরোধে মঙ্গলবার বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে উত্তরবঙ্গের রেল পরিষেবা।
দুর্ঘটনায় ছাত্রী মৃত্যুর জেরে বাইপাস তৈরির দাবিতে মঙ্গলবার রাস্তায় নামে ছাত্রছাত্রীরা। ডালখোলা হাইস্কুলের পাশাপাশি ওই এলাকার বেশ কয়েকটি স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা এই বিক্ষোভ আন্দোলনে সামিল হয়। যোগ দেন বাসিন্দারাও।
জাতীয় সড়ক ও রেল অবরোধের ফলে দিনভর অবরুদ্ধ হয়ে পরে ডালখোলা শহর। দিনভর অচলাবস্থা চলার সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টা নাগাদ মহকুমা শাসক ও এসডিপিও সঙ্গে বৈঠকের পর অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। তবে সন্ধের পর ফের শুরু হয় জাতীয় সড়ক ও রেল অবরোধ। রাতে উত্তরদিনাজপুরের জেলাশাসক আয়েশা রাণী বলেন, ‘‘ওদের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা মেটানো হয়। অবরোধও উঠে গিয়েছিল। ফের এক দল অবরোধ করেছে বলে জানতে পেরেছি।’’
রাত ৯টার পর থেকে ফের একদল বাসিন্দা রেল অবরোধ শুরু করেন। এতে উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেলের ১৬টি ট্রেন বিভিন্ন স্টেশনে আটকে পড়ে। শিলিগুড়ি থেকে সন্ধ্যার পর কোনও ট্রেন রওনা হতে পারেনি। রাতে এনজেপি স্টেশনে আটকে পড়ে উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেস, নর্থইস্ট এক্সপ্রেস, দার্জিলিং মেল এবং পদাতিক এক্সপ্রেস। শিলিগুড়ি টাউন স্টেশনে দাঁড় করিয়ে রাখা হয় কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেসকে।
ডালখোলায় চলছে রেল অবরোধ। ছবি: অভিজিৎ পাল।
উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেলের এনজেপি’র সিনিয়র এরিয়া ম্যানেজার পার্থ সারথী শীল বলেন, ‘‘ডালখোলার জন্য মোট ১৬টি ট্রেন বিভিন্ন স্টেশনে আটকে ছিল। এরমধ্যে শিলিগুড়িতে দাঁড় করিয়ে রাখা হয় ৫টি ট্রেনকে। সব ট্রেনগুলির সন্ধ্যার পর থেকে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার কথা ছিল।’’রেলের তরফে জানানো হয়েছে, কলকাতার দিক থেকে আসা বিভিন্ন ট্রেনকেও নানা স্টেশনে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। রেল সূত্রের খবর, এনজেপি গামী শতাব্দী এক্সপ্রেস হরিশ্চন্দ্রপুরে, বালুরঘাট ইন্টারসিটি তেলটা স্টেশনে থামিয়ে রাখা হয়। গভীর রাত পর্যন্ত বিভিন্ন স্টেশনে আটকে পড়ে তিস্তা তোর্ষা এক্সপ্রেস, কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস, অবধ অসম এক্সপ্রেসের মতো গুরুত্বপূর্ণ ট্রেন।
রবিবার সকালে টিউশন থেকে বাড়ি ফেরার পথে ডালখোলা বুড়ি মহানন্দা সেতুর কাছে ট্রাকের ধাক্কায় মৃত্যু হয় চাকুলিয়ার সিমুলিয়ার বাসিন্দা ডালখোলা স্কুলের ছাত্রী নাজিম বেগমের(১৬)। এর পরে এলাকার এক দল যুবক জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায়। মঙ্গলবার এলাকার বাইপাসের দাবি ও ছাত্রীর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবিতে ফের বিক্ষোভ শুরু করেন বাসিন্দারা।
ডালখোলা পুরসভা সূত্রে খবর, উত্তেজিত এক দল যুবক ডালখোলা পুরসভাতে গিয়েও হামলা চালায়. ভাঙচুর করে পুরসভায় থাকা একটি গাড়ি। ডালখোলা বালিকা বিদ্যালয়ের দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়া সুমন গোর, মর্জিনা পারভিন, রেহেনা পারভিনরা বলেন, ‘‘এই রাস্তা দিয়ে স্কুলে যেতেও ভয় লাগে। কিন্তু প্রশাসনকে বলেও বাইপাস তৈরির দাবি পূরণ হয়নি।’’
রেল পরিষেবা বিপর্যস্ত হওয়ার পাশাপাশি প্রায় ১১ ঘণ্টা জাতীয় সড়ক অবরোধের ফলে সড়ক যোগাযোগও বিপর্যস্ত হয়ে রয়েছে।