বিচ্ছিন্ন: গত বছর এ ভাবেই জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছিল তেলতা সেতু। ফাইল চিত্র
গত বছর প্রবল বৃষ্টিতে কিসানগঞ্জের কাছে রেলের ব্রিজ ভেঙে যাওয়ায় দীর্ঘ চার মাস ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়েছিল। রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় বেড়ানোর মরসুমে পর্যটকদের অনেকেই উত্তরবঙ্গ যেতে পারেননি। তাতে যেমন রাজস্বের ক্ষতি হয়েছে তেমনই উত্তরবঙ্গের বহু মানুষ কাজে বাইরে যেতে অসুবিধায় পড়েছেন।
এ বছর বর্ষার মোকাবিলায় তাই আগেভাগেই বিশেষ প্রস্তুতি সেরে রাখার কথা জানিয়েছে উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেল।
তার প্রথম ধাপেই বন্যা ও ধসপ্রবণ এলাকাগুলিকে আলাদা করে চিহ্নিত করে সেখানে বিশেষ নজরদারি চালানো হবে। রাতে এবং বিশেষত বৃষ্টির পরে কোথায় কীভাবে জলস্তর বাড়ছে, তা লক্ষ্য রাখতে বিশেষ দলও তৈরি করেছে রেল। দিনরাত ওই দল নজরদারি চালাবে। পাশপাশি কোথাও অস্বাভাবিক কিছু দেখলেই তা রেলের কন্ট্রোলরুমকে জানাবে।
সেই সঙ্গে যে কোনও সময় খুবই বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে ছোট খাল বা নদী। যেগুলি এমনিতে শুকনো থাকে কিন্তু বর্ষার জলে আচমকা ভয়ানক হয়ে উঠতে পারে। সেখানে বিপদসীমা চিহ্নিত করার ব্যবস্থা করেছে রেল। সে সব ক্ষেত্রে বন্যার জলে মাটি ধুয়ে যাওয়া ঠেকাতে রেলের ট্র্যাক এবং ছোট ব্রিজগুলির কাছে ১৮৪ ওয়াগন বোল্ডার মজুত করে রাখার কথাও জানিয়েছে রেল। তবে এরপরও কোথাও রেল সেতুর ক্ষতি হবে না, এমন আশ্বাস দিতে পারছেন না রেল কর্তৃপক্ষ। ফলে আলাদা করে ২৭১টি রোল্ড স্টিল জয়েস্ট (আরএসজে) তৈরি রাখছেন রেল কর্তৃপক্ষ। যাতে প্রয়োজনের মুহূর্তে দ্রুত সেতু তৈরি করা যায়।
পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে গত কয়েক মাস ধরে রেলের প্রত্যেকটি জোন এবং ডিভিশনকে আলাদা করে আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানানোর ব্যবস্থা করেছে দিল্লির মৌসম ভবন। ওই তথ্য নিয়মিত ভিত্তিতে আধিকারিকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। রেলের আধিকারিকরা নির্দিষ্ট হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে ওই তথ্য ‘শেয়ার’ করেন। সেখান থেকে কন্ট্রোল রুম, চালক, স্টেশন মাস্টার, ট্র্যাক এবং সিগন্যালিং সিস্টেম রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা কর্মীরা ওই তথ্য সঙ্গে সঙ্গে জানতে পারেন।
উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেল কর্তৃপক্ষ সূত্রের খবর এই সমস্ত তথ্যের হিসেব কষেই এখনও পর্যন্ত ৩২টি জায়গাকে আলাদা করে বিপজ্জনক বলে চিহ্নিত করে নজরদারি চালানো হচ্ছে। এর মধ্যে ১৪টি লামডিঙে, ৯টি রঙ্গিয়াতে, ৮টি তিনসুকিয়াতে এবং ১টি আলিপুরদুয়ারে রয়েছে।
আলিপুরদুয়ারের গোলাপগঞ্জ এবং ফকিরাগ্রামের মাঝে একটি সেতু ওই তালিকায় আছে। আলিপুরদুয়ার ডিভিশন সূত্রে খবর, ওই সেতুর উপর দিয়ে এখন ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রেলের ওই ডিভিশন সূত্রে খবর, বন্যার জলে ব্রিজের স্তম্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেখানে বিশেষ স্টিলের কাঠামো তৈরি করে রাখা হচ্ছে।ইস্পাতের সেই কাঠামো একটি স্তম্ভের চারপাশে লাগিয়ে তার ভার বহন ক্ষমতা বাড়ানো হবে। প্রায় ৫০০০ এমন ক্রিব তৈরি রাখা হয়েছে।
একই ভাবে পূর্ব রেলের মালদহ এবং উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলের কাটিহার ডিভিশনও সমন্বয় রেখে কাজ করবে বালে খবর। কিসানগঞ্জ সংলগ্ন তেলতা ব্রিজকেও রাখা হচ্ছে এই নজরদারির আওতায়। ওই সেতুতে যাতায়াতে সমস্যা না থাকলেও গতি সংক্রান্ত কিছু বিধিনিষেধ থাকছে বলে খবর।