দুর্ভোগ:হাসপাতালেই তালাবন্ধ হয়ে পড়ে ছিল ট্রলি। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক
রোগীদের জন্য ট্রলি না-মেলার সমস্যা মেটাতে অবশেষে উদ্যোগী হলেন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বিভিন্ন ঘরে তালা বন্ধ করে রাখা অন্তত ১৪টি ট্রলি ইতিমধ্যেই উদ্ধার করা হয়েছে। মেডিসিন স্টোরে, নানা ওয়ার্ডে বিভিন্ন ঘরে সেগুলো ফেলে রাখা হয়েছিল বলে অভিযোগ। আরও বেশ কিছু ট্রলি ইতস্তত পড়ে রয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। সেগুলো সংগ্রহ করে গড়ে তোলা হচ্ছে ‘ট্রলি বুথ’। সেখান থেকে রোগীর পরিবারের লোকেরা ট্রলি পাবেন অনায়াসে।
জরুরি বিভাগে রোগীদের জন্য, মৃতদেহ নেওয়া, ওয়ার্ডে রোগী নেওয়া প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য আলাদা রঙের ট্রলি করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সেই ট্রলি বুথ প্রস্তুতির কাজ ঘুরে দেখেন হাসপাতালের সুপার কৌশিক সমাজদার।
রোগীরা ও রোগীর পরিজনেরা বারবার অভিযোগ করেছিলেন, হাসপাতালে ট্রলি মেলে না। অথচ হাসপাতালেই ট্রলি পড়ে ছিল ঘরে।
হাসপাতাল সুপার বলেন, ‘‘রোগীদের নেওয়ার জন্য অনেক ক্ষেত্রেই ট্রলি মিলছে না বলে আমাদের কাছে অভিযোগ পৌঁছেছে। সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে আমরা উদ্যোগী। দিন কয়েকের মধ্যেই ট্রলির জন্য বিশেষ পরিষেবা ব্যবস্থা চালু করা হবে।’’
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছেন, জরুরি বিভাগ থেকে মেডিসিন বিভাগ যেতে করিডরের এক ধারে ট্রলি বুথ খোলা হচ্ছে। লাল, হলুদ, খয়েরি রঙের ট্রলি করা হচ্ছে। খয়েরি রঙের ট্রলিগুলো ট্রলি বুথে রাখা থাকবে। প্রয়োজনে রোগীর পরিবার কোনও পরিচয়পত্র বা নথি রেখে সেখান থেকে ট্রলি নিতে পারবে। ট্রলি ফেরত দিয়ে সেই নথি ফেরত নেবেন। ট্রলির মতো হুইল চেয়ারও থাকবে সেখানে। হলুদ ট্রলি রাখা থাকবে জরুরি বিভাগের সামনে। লাল ট্রলি ব্যবহার হবে মৃতদেহ বহনের জন্য। এ ছাড়া প্রতি ওয়ার্ডে দু’টো করে সাদা বা নীল রঙের ট্রলি এবং হুইল চেয়ার থাকছে ওয়ার্ডে ব্যবহারের জন্য। ট্রলি বুথে সব সময় থাকার জন্য আলাদা করে কর্মী দেওয়া হচ্ছে। পুরো বিষয়টি সাজাতে গৌতম দাস এবং সুদীপ্ত মণ্ডল দুই অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারকে দায়িত্ব দিয়েছেন সুপার। তাঁরা জানান, দ্রুত সেই কাজ সম্পন্ন করা হবে বলে।
ট্রলি বুথটি ২৫ নম্বর ঘর বলে চিহ্নিত করা হচ্ছে। রোগীর লোকেরা যাতে জানতে পারেন, সে জন্য ওই ঘরে ট্রলি মিলবে বলে হাসপাতালের বিভিন্ন জায়গায় বোর্ড লাগানো হবে।
এর আগে জরুরি বিভাগে ট্রলি রাখা হলেও সেগুলো ওয়ার্ডে নিয়ে চলে যাওয়া হত বলে অভিযোগ। পরে সেগুলোর হদিস মিলত না। কিছু ট্রলি মর্গে নিয়ে যাওয়া হত। স্টোর থেকে ওষুধ নেওয়ার কাজে রোগী নেওয়ার ট্রলি ব্যবহার করা হচ্ছে বলেও নজরে এসেছে। অথচ মুমূর্ষু রোগীদের নিয়ে যেতে, ওয়ার্ড থেকে স্যালাইন দেওয়া রোগীদের বিভিন্ন পরীক্ষা করাতে ল্যাবরেটরিতে নিয়ে যেতে ট্রলি মিলছে না বলে অভিযোগ। এদিনই জরুরি বিভাগে চিকিৎসা করাতে আসেন উত্তর শান্তি নগরের বাসিন্দা বিট্টু নাগ। তাঁর সারা শরীরে দগদগে ঘা হয়েছে। অসুস্থ অবস্থায় বসে থাকতে পারছেন না। ভর্তি করানো হলে ওয়ার্ডে নিয়ে যেতে ট্রলি চান তাঁর সঙ্গে থাকা আত্মীয় বিকি চক্রবর্তী। কাউন্টার থেকে জানানো হয় ট্রলি নেই। সঙ্গে গাড়ি থাকায় তাতে করে ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হয়।