মালদহ জেলা পরিষদের কৃষি ও খাদ্য কর্মাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনতে জলপাইগুড়ি ডিভিশনাল কমিশনারকে চিঠি পাঠাচ্ছে কংগ্রেস ও সিপিএম। গোপন ডেরায় থাকা দুই দলের জেলা পরিষদ সদস্যরা সোম বা মঙ্গলবারের মধ্যেই সেই চিঠি পাঠাচ্ছেন। শুধু তাই নয়, জেলা পরিষদের আরও যে যে স্থায়ী সমিতির তারা সদস্য রয়েছেন, সেখান থেকেও তাঁদের হঠাতে জেলা পরিষদের বিশেষ সাধারণ সভা ডাকার তোড়জোড় শুরু করেছে ওই দুই দল। পরবর্তীতে তারা শাসকদলে যোগ দেওয়া সভাধিপতির বিরুদ্ধেও অনাস্থা বা সদস্যপদ খারিজের জন্য চেষ্টা চালাবে। জানা গিয়েছে, পঞ্চায়েত আইনকে হাতিয়ার করেই এই পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত কংগ্রেস ও সিপিএমের। তবে বিষয়টি নিয়ে এই মুহূর্তে বেশি কিছু বলতে চাইছে না দুই দলের জেলা নেতৃত্ব। এই পদক্ষেপকে অবশ্য আমল দিতে চাইছে না মালদহ জেলা পরিষদ দখল করা তৃণমূল কংগ্রেসও।
গত সোমবারই কংগ্রেস পরিচালিত জেলা পরিষদের সভাধিপতি সরলা মুর্মু, কৃষি কর্মাধ্যক্ষ চন্দনা সরকার সহ কংগ্রেস ও সিপিএমের একাধিক সদস্য কলকাতার তৃণমূল ভবনে গিয়ে শাসকদলে যোগ দেয়। সেই দলবদলের সময়ে সেখানে জেলা পরিষদের সমাজবাদী পার্টির দুই সদস্য মিলন দাস ও কাঞ্চন সিংহ হাজির ছিলেন। তাঁরা শাসকদলের বোর্ডকে সমর্থনের কথা বলেন। সেখানে তৃণমূলের মালদহ জেলার পর্যবেক্ষক শুভেন্দু অধিকারী বলেছিলেন, মালদহ জেলা পরিষদে তৃণমূলের শক্তি বেড়ে হল ২১। যা সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি ১৯-কে ছাপিয়ে গিয়েছে।
এই জটিল পরিস্থিতেও হাল ছাড়তে রাজি নয় কংগ্রেস ও সিপিএম। সে দিন থেকেই তারা পাল্টা দাবি করে আসছে তাদের সঙ্গে ১৭ জন সদস্য রয়েছে। জেলার বাইরে গোপন ডেরাতেই তাদের এখনও পর্যন্ত রাখা আছে। পাশাপাশি পঞ্চায়েত আইনকে হাতিয়ার করে তারা এখন তৃণমূলে নাম লেখানো কৃষি কর্মাধ্যক্ষ চন্দনা সরকার ও শাসকদলকে সমর্থনকারী সমাজবাদী পার্টির খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ মিলন দাসের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনতে চলেছে। জানা গিয়েছে, এব্যাপারে কংগ্রেস ও সিপিএমের জেলা পরিষদের সদস্যরা ডিভিশনাল কমিশনারের কাছে আগামী দু-তিনদিনের মধ্যেই চিঠি পাঠাচ্ছেন। সদস্যদের সাক্ষরপর্বও হয়ে গিয়েছে।
ওই দুই স্থায়ী সমিতিতে কংগ্রেসের সদস্য বেশি থাকায় তাঁরা যথেষ্ট আশাবাদী। এমনকী ওই দু’জনকে সংশ্লিষ্ট ও অন্যান্য স্থায়ী সমিতির থেকেও হঠাতে চাইছেন তারা। চন্দনাদেবী শিশু ও নারীকল্যাণ এবং মিলনবাবু বিদ্যুত স্থায়ী সমিতিরও সদস্য। শাসকদলের সমর্থনকারী সমাজবাদী পার্টির আর এক সদস্যা কাঞ্চন সিংহকেও জনস্বাস্থ্য স্থায়ী সমিতি থেকে অপসারণ করতে চাইছে তারা। কংগ্রেস ও সিপিএম নেতৃত্বের দাবি, স্থায়ী সমিতি থেকে কাউকে সরাতে গেলে জেলা পরিষদের সাধারণ সভা ডেকে সরাতে হয়। জেলা পরিষদের সাধারণ সভার ৬৪ জন সদস্যের মধ্যে তাঁদের ৩৯ জন রয়েছে ফলে তাঁদের হঠাতে কোনও অসুবিধা হবে না।
মালদহ জেলা কংগ্রেসের সভানেত্রী মৌসম নূর বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত আইনকে সামনে রেখে আমরা সিপিএমকে সঙ্গে নিয়ে জেলা পরিষদের দুই কর্মাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আনাস্থা আনা সহ আরও কিছু পদক্ষেপ করতে চলেছি। কিন্তু কী ভাবে তা হবে তা এখন বলা যাবে না।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্র অবশ্য বিষয়টি নিয়ে কোনও কথা বলতে চাননি। জেলা পরিষদের তৃণমূলের দলনেতা উজ্জ্বল চৌধুরী বলেন, ‘‘বোর্ড হারিয়ে কংগ্রেস ও সিপিএম এখন নানা ছলচাতুরী করার চেষ্টা করবে। কিন্তু তারা যত করবে ততই তাদের দল ভাঙবে। আমরা দেখছি তারা কী করে, সেইমতো আমরাও পালটা পদক্ষেপ করব।