কখনও কাজ হয়েছে ঢিমে তালে। কখনও আবার তা থমকে গেছে পুরোপুরি। যার ফলে শিলান্যাসের পর ন’বছর কেটে গেলেও শেষ হয়নি মালদহ জেলার হবিবপুর ব্লকের বাস স্ট্যান্ড তৈরির কাজ।
অর্ধসমাপ্ত বাস স্ট্যান্ডের ভবনটি এখন ভগ্নপ্রায়। আর সুর্য ডুবলেই এই পরিত্যক্ত ভবনে নানান অসামাজিক কাজকর্ম চলছে বলে অভিযোগ। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে এলাকার মানুষের মধ্যে। এদিকে বাস স্ট্যান্ড না থাকায় রাজ্য সড়কের উপরেই চলছে বেআইনি গাড়ি পার্কিং। যার ফলে যানজট এখন এই এলাকার নিত্য দিনের সমস্যা। বাসিন্দারা দ্রুত বাস স্ট্যান্ডের কাজ শেষ করার দাবিতে সরব হয়েছেন। সম্পূর্ণ কাজ খতিয়ে দেখে দ্রুত বাসস্ট্যান্ডটির কাজ শেষের আশ্বাস দিয়েছে জেলা পরিষদও।
জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৫ সালে হবিবপুর ব্লকের বুলবুল চন্ডীতে বাস স্ট্যান্ড তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। মালদহ নালাগোলা রাজ্য সড়কের ধারে বাজার লাগোয়া এলাকায় শিলান্যাস হয় বাস স্ট্যান্ডের। এর জন্য প্রায় এক কোটি করে টাকা বরাদ্দ করা হয়। শিলান্যাসের পর জোর কদমে কিছুদিন কাজও হয়েছিল। কিন্তু এরপরেই কাজের গতি থমকে যায়। পরবর্তীতে ধীর গতিতে কাজ চললেও বছর চারেক ধরে তাও বন্ধ। জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, অর্থের অভাবে এই বাস স্ট্যান্ডের কাজ আটকে রয়েছে।
বর্তমানে বাসস্ট্যান্ডের টিকিট কাউন্টার সহ প্রশাসনিক ভবন তৈরির কাজ প্রায় শেষ। শুধু মাত্র শেড তৈরিরই কাজই বাকি। বছরের পর বছর ধরে এমন অবস্থাতেই পরে রয়েছে ভবনটি। স্থানীয় বাসিন্দা বিনোদ প্রসাদ গুপ্ত, রঞ্জিত শীলরা বলেন,‘‘এখানে বাস স্ট্যান্ডের জন্য বিভিন্ন জায়গার দরবার করেছিলাম। অবশেষে শুরু হয় বাস স্ট্যান্ড তৈরির কাজ। কাজ শুরু হতে দেখে আমরা আশায় বুক বেঁধেছিলাম। তবে এক দশক হতে চললেও আমাদের সমস্যার কোন সুরাহা হল না। উল্টে সমস্যা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। কারণ পরিত্যাক্ত ওই ভবনগুলিতে চলছে প্রকাশ্যে মদ্যপান। প্রতিবাদ করলেই তাদের রোষের মুখে পড়তে হচ্ছে। কাজ শুরুর দাবিতে আমরা গণ স্বাক্ষর করে ব্লক প্রশাসনকে জানিয়েছি। এবার আমরা বৃহত্তর আন্দোলনে নামব।’’
মালদহ-নালাগোলা রুটে দৈনিক ৬০টি বাস চলাচল করে। এছাড়া ম্যাক্সি ট্যাক্সি,ছোট গাড়ির মতো অসংখ্য যানবাহন চলাচল করে এই রুটে। স্থানীয় মানুষদের অভিযোগ, কোনও বাসস্ট্যান্ড না থাকায় রাজ্য সড়কের উপরে গাড়ি থামিয়ে চলে যাত্রী ওঠানামা। এর ফলে হামেশাই এখানে দূর্ঘটনা ঘটে। বুলবুলচন্ডী এলাকায় দুটি হাইস্কুল রয়েছে। একটি হাসপাতাল,বাজার,ব্যাঙ্ক সহ বহু প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ফলে অসংখ্য মানুষের যাতায়াত এই এলাকায়। দিনের ব্যস্ততম সময়ে পায়ে হেঁটে চলাফেরা করা রীতিমত কঠিন হয়ে ওঠে। রাস্তায় সারি সারি গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকায় মানুষের ভোগান্তি আরও কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
এই বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক সিপিএমের খগেন মুর্মু বলেন, ‘‘জেলা পরিষদের উদাসীনতার জেরে বছরের পর বছর এমন অবস্থায় পরে রয়েছে এই বাস স্ট্যান্ড।’’ ওই এলাকায় তৃণমূলের জেলা পরিষদের সদস্য প্রভাস চৌধুরী বলেন, ‘‘আমি বহুবার জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি। টাকা খরচ করে যে কাজ হয়েছিল, রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ায় সেই ভবনও ভেঙে পড়ছে।’’ জেলা পরিষদের সভাধিপতি কংগ্রেসের সরলা মুর্মু বলেন,‘‘ খুব শীঘ্রই বাস স্ট্যান্ডের কাজ কতটা হয়েছে তা পরিদর্শন করে ফের কাজ শুরু করা হবে।’’