—ফাইল চিত্র।
পড়ুয়াদের হয়ে কোনও অভিযোগ করতে গেলেই অভিভাবকদের নানা অছিলায় অপমানের চেষ্টা করেন শিলিগুড়ির বেশ কয়েকটি স্কুল কর্তৃপক্ষ। শুধু তাই নয়, শৌচাগারের বেহাল দশা কিংবা গার্লস স্কুলের স্কুলবাসে কেন মহিলা কর্মী নেই সেই প্রশ্ন তুললে অনেক স্কুলের পক্ষ থেকে ‘পড়ুয়াকে নিয়ে অন্য স্কুলে ভর্তি করান’ বলে পরামর্শ দেওয়া হয়।
এখানেই শেষ নয়, কয়েকটি স্কুলে অভিভাবকরা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পড়ানোর মান নিয়ে প্রশ্ন তুললে পড়ুয়াকে ফেল করিয়ে দেওয়া কিংবা কম নম্বর দেওয়ার আশঙ্কাও থাকে। কলকাতায় ছাত্রী নিগ্রহের ঘটনার পরে ফের ওই সব অভিযোগ সামনে এসেছে শিলিগুড়িতে। তাই শিলিগুড়ি অভিভাবক মঞ্চের পক্ষ থেকে যাবতীয় অভিযোগ শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় থেকে শুরু করে জেলাশাসক অবধি পাঠানোর প্রস্ততি চলছে। একশ্রেণির ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের পরিকাঠামো, শিক্ষার মান, শিক্ষক-শিক্ষিকা, শিক্ষাকর্মীদের যোগ্যতা বিষয়ক তথ্যও প্রকাশ্যে জানানোর দাবি তুলেছে মঞ্চ।
রবিবার সংগঠনের সভাপতি সন্দীপন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘অতীতে আমরা এককভাবে আন্দোলন করলেও এবার অনেক সংগঠনের সাহায্য চাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ইতিমধ্যেই দার্জিলিং জেলা লিগাল এড ফোরামকে পাশে পেয়েছি। বৃহত্তর শিলিগুড়ি নাগরিক সমিতি সহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।’’ সকলের সঙ্গে কথাবার্তা বলে আগামী বুধবার মঞ্চের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও দাবি শিক্ষামন্ত্রীকে পাঠানো হবে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘শিলিগুড়িতে বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলবাস নিয়ে কিছু অভিযোগ শুনেছি। যেমন, মেয়েদের বাসে মহিলা আয়া নেই। ছেলে খালাসি রাখা হচ্ছে। কয়েকটি স্কুলের শৌচাগারের বেহাল দশা নিয়েও অভিযোগ রয়েছে। ইতিমধ্যেই অফিসারদের দেখতে বলেছি। তবে অভিভাবকরা লিখিত ভাবে জানালে সরকারি ভাবে যথা সম্ভব কড়া পদক্ষেপ করা হবে।’’
বস্তুত, শিলিগুড়িতে কয়েকটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশের আচরণে অভিভাবকদের অনেকেই ক্ষুব্ধ। অভিভাবক মঞ্চের এক প্রবীণ সদস্য জানান, তাঁর মেয়েকে স্কুলে নানা অছিলায় শ্লেষাত্মক মন্তব্য শুনতে হয়েছে। একজন প্রবীণ চিকিৎসক জানান, তাঁর ছেলেকে শিক্ষক আপত্তিকর গালি দেওয়ায় তিনি প্রতিবাদ করতে গেলে ছেলেকে ‘ট্রান্সফার সার্টিফিকেট’ দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছিল।
বৃহত্তর শিলিগুড়ি নাগরিক সমিতির সভাপতি দুর্গা সাহা জানান, ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের কয়েকটিতে অভিভাবকরা কোনও সমস্যা নিয়ে গেলে গুরুত্ব সহকারে শুনে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘‘কিন্তু, কয়েকটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের কর্তৃপক্ষ গোড়া থেকেই অভিভাবকদের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে চান।’’ তাই নাগরিক সমিতি চাইছে, সরকার বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলির উপরে নজরদারি বাড়াক। তবে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশের অভিযোগ, অভিভাবকদের একাংশও সব সময়ে তাঁদের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে চান। তাঁরা জানান, বেসরকারি স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকা, শিক্ষাকর্মীদের কেমন মাইনে দেওয়া হয় আর কত ঘণ্টা পরিশ্রম করানো হয় সেটাও সরকারের দেখা উচিত।
ঘটনাচক্রে, খোদ শিক্ষামন্ত্রীর কাছেও বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের তরফে অভিযোগ গিয়েছে। শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, সার্বিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে একটি বিশেষ পরিদর্শক দল তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।