বাম আমল থেকেই চালু রয়েছে ‘মান্থলি’ বা বাসের ভাড়ার মাসিক বন্দোবস্ত, তাতে ভাড়া বেশ কম পড়ে। ছাত্রছাত্রীদের সুবিধায় এ বার ‘স্কুল সাথী’ প্রকল্প চালু করতে চাইছে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম।
শুক্রবার ২১৮ তম বোর্ড মিটিংয়ের পরে ওই ব্যাপারে প্রস্তাব নেওয়া হয়। নিগমের চেয়ারম্যান মিহির গোস্বামী জানান, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর অনুমতি মিললেই ওই প্রকল্প চালু করা হবে। কিন্তু ‘মান্থলি’ যেখানে চালু রয়েছে, সেখানে আবার স্কুল সাথী কেন? মিহিরবাবু জানান, তার থেকেও যাতে কম খরচে যাতায়াত করতে পারেন ছাত্রছাত্রীরা, সে জন্য ওই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কত টাকা ছাড় দেওয়া হবে, তা নিয়ে অবশ্য প্রস্তাবে কিছু বলা হয়নি। তিনি বলেন, “ছাত্রছাত্রীদের সুবিধের কথা মাথায় রেখে ওই প্রকল্প চালু করার কথা ভাবা হয়েছে। আপাতত তা প্রস্তাব আকারে রয়েছে। কম খরচে যাতে ছাত্রছাত্রীরা স্কুল, কলেজে যাতায়াত করতে পারেন সে দিকে তাকিয়েই ওই কথা ভাবা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী ও পরিবহণ মন্ত্রীর অনুমতি মিললেই তা চালু করা হবে।” সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মহানন্দ সাহা বলেন, “এটা নতুন কিছু নয়। বাম আমল থেকেই ছাত্রছাত্রী ও নিত্য যাত্রীদের ভাড়ায় ছাড় দেওয়া হচ্ছে। সেটাই আবার এদিক-ওদিক করা হচ্ছে।”
নিগম সূত্রের খবর, আগাম টাকা দিয়ে ‘মান্থলি’ করা যায়। সে ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীদের আট দিনের যাতায়াত ভাড়া নেওয়া হয়। অন্য নিত্য যাত্রীদের ক্ষেত্রে পনেরো দিনের ভাড়া নেওয়া হয়। এক্ষেত্রে অবশ্য শুধু স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের ছাড় দেওয়ার কথা ভাবা হয়েছে। কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা ছাড় পাবেন না। পাশাপাশি একটি নির্দিষ্ট কিলোমিটার রাস্তা বেঁধে দেওয়া হবে। বেঁধে দেওয়া হবে সময়সীমাও। স্কুলের কাছে তালিকা নিয়ে তৈরি করা হবে পরিচয়পত্র। সেই পরিচয়পত্র দেখালেই ছাড় মিলবে। কার্ড নেওয়ার সময় টাকা দিতে হবে, নাকি কার্ড দেখিয়ে বাসে কম ভাড়া দিতে হবে, তা নিয়েও কোনও আলোচনা হয়নি। তাই বিষয়টি অনেকের কাছেই এখনও অস্পষ্ট। এক দশম শ্রেণির ছাত্র বলেন, “আমরা তো মান্থলি দিয়ে যাতায়াত করি। তাই কত টাকা ছাড় দেওয়া হল বা তাতে কত বার যাতায়াত করতে পারব তা না জানলে লাভ বোঝা মুশকিল। স্কুলের পাশাপাশি আমাদের গৃহশিক্ষকের কাছে যেতে হয়। তখন যদি আবার পুরো ভাড়া লাগে তাহলে তো সমস্যা হবে।” নিগমের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘এটা প্রস্তাব আকারে রয়েছে। তাই পুরো বিষয় পরিষ্কার না হলে কিছু বলা মুশকিল।”
এ দিনের বোর্ড আরও কিছু সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন নিগম চেয়ারম্যান। সেখানে নিরাপত্তার কথা ভেবে নিগমের সমস্ত বাস টার্মিনাস এবং ডিপোগুলিতে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা বসানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের কাছে আর্থিক সাহায্য চাওয়া হবে। প্রথমে কোচবিহার, শিলিগুড়ি, বালুরঘাট, রায়গঞ্জ, মালদা, কলকাতার মতো বাস টার্মিনাসে সিসি ক্যামেরা বসানো হবে। পরে নিগমের ২২টি ডিপোতেই ওই ক্যামেরা বসানো হবে। এ ছাড়াও ৭০টি নতুন বাস রাস্তায় নামানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ এবং পর্যটন দফতরের গৌতম দেবের কাছে ১০টি করে কুড়িটি ভলভো বাস চাওয়া হয়েছে। ওই বাস পাওয়া যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন চেয়ারম্যান। নজরদারির কাজের জন্য জিপ এবং উদ্ধার কাজের জন্য রিকভারি ভ্যান কেনার ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যাত্রীদের সুবিধায় আগাম টাকায় একটি কার্ড চালু করা হবে। পাহাড় ও সমতলে আরও নতুন বাস চালানোর সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়। নিগমের অধীনে থাকা সাব কমিটিগুলি নতুন করে গঠন করার কথাও জানানো হয়েছে। চেয়ারম্যান বলেন, “সরকার কথা মতো চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের বেতন সাড়ে ১১ হাজার টাকা করে দিয়েছে। চলতি মাস থেকেই ওই টাকা তাঁরা হাতে পেতে শুরু করেছে।”