প্রতীকী চিত্র।
সম্পত্তি হাতিয়ে নিয়ে বৃদ্ধ মাকে বাড়ি থেকে মারধর করে তাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল ছেলে-পুত্রবধূর বিরুদ্ধে। ওই আচরণের প্রতিবাদ করায় ছেলে দুই কাকার উপর আক্রমণ করে। মঙ্গলবার রাতের ওই হামলার জেরে জখম এক কাকা মারা যান। আর এক কাকা হাসপাতালে গুরুতর জখম অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মালদহের বৈষ্ণবনগর থানার কুম্ভীরা গ্রামের ঘটনা।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রের খবর, মঙ্গলবার সকালে সম্পত্তি নিজের নামে লিখে নিয়ে বৃদ্ধ মা অ্যাঞ্জেলা বেওয়াকে বাড়ি থেকে বের করে দেয় অভিযুক্ত ছেলে ইসাউল সেখ এবং তার স্ত্রী নাসিমা বিবি। বাধ্য হয়ে তিনি পাশেই এক দেওর আব্দুল গফফরের বাড়িতে আশ্রয় নেন। বৌদির মুখে সবকিছু শুনে ইসাউলকে বোঝাতে তার বাড়ি যান গফ্ফর ও তাঁর ভাই আবদুল সামাদ। সকালের দিকে সেখানেও কিছুটা ঝামেলা হয়। এরপর রাতে দুই কাকার বাড়িতে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সদলবলে হামলা চালায় ইসাউল।
দু’জনকেই ব্যাপক মারধর করে তারা। ধারালো অস্ত্র দিয়ে গফ্ফরের নাকের একাংশ কেটে নেয় তারা। সামাদের মাথা ইট মেরে থেঁতলে থেঁতলে দেয় তারা। গোলমাল ও চিৎকারে ঘটনাস্থলে প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন। অভিযুক্তেরা সেখান থেকে পালিয়ে যায়। প্রতিবেশীরাই জখম দু’জনকে রক্তাক্ত অবস্থায় মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান। ৫৯ বছরের সামাদের অবস্থা সঙ্কটজনকে হওয়ায় তাঁকে কলকাতায় এসএসকেএমে রেফার করা হয়। কিন্তু কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার পথেই বুধবার ভোরে মারা যান সামাদ। হাসপাতাল সূত্রের খবর, গফ্ফরের নাকের অর্ধেক অংশ কেটে বাদ চলে গিয়েছে। অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। সঙ্কটজনক অবস্থায় তিনি সিসিইউয়ে চিকিৎসাধীন।
এই ঘটনায় সস্ত্রীক ইসাউল ও আরও আটজনের বিরুদ্ধে বৈষ্ণবনগর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। মালদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) দীপক সরকার জানিয়েছেন, চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। মূল অভিযুক্তদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
আহত গফফরের মেয়ে রুকসানা বিবি বলেন, ‘‘মঙ্গলবার সকালে সাড়ে পাঁচ কাঠা জায়গা নিজের নামে লিখে নিয়ে জেঠিমাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয় জেঠতুতো দাদা ইসাউল ও তাঁর স্ত্রী। তারপর এই সব কিছু ঘটে গেল। ওদের হামলায় কাকা মারা গেল। বাবারও খুব গুরুতর অবস্থা।’’
এদিকে, এই ঘটনা তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর অর্ন্তদ্বন্দ্বের জের বলে অভিযোগ উঠেছে দলের অন্দরেই। কুম্ভীরা এলাকার এক তৃণমূল নেতা অভিযোগ করেন, সামাদ ও গফ্ফর দলের পুরনো কর্মী। তাঁরা একটি গোষ্ঠীর ছত্রছায়ায় রয়েছেন। আর হামলাকারীরা নব্য তৃণমূল। এক জেলানেতার ছত্রছায়ায় তারা রয়েছে। জমি দখলকে ঘিরে দলেরই লোকজনের মধ্যে বিবাদে প্রাণ গেল একজনের।
তৃণমূলের কালিয়াচক-৩ ব্লক সভাপতি নালেপ আলি অবশ্য বলেন, ‘‘এই ঘটনায় দলীয় দ্বন্দ্বের কোনও অবকাশ নেই। পারিবারিক বিবাদের জেরেই ঘটনাটি ঘটেছে।’’